পোশাক শিল্পের বাজার সম্প্রসারণের বিকল্প নেই
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নানামুখী সমস্যায় বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থায় কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। এ শিল্পের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চলছে।
পোশাক শিল্পে বিরাজমান নানামুখী বিশৃঙ্খলার সুযোগে অপশক্তি এ শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। মানব-শ্রমিক অধিকার ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণ-বাস্তবায়নের মোড়কে কতিপয় উন্নত বিশ্বের অযাচিত নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারক, বিশেষ করে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে দুশ্চিন্তা-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই।
মার্কিন বাজারে প্রবেশের সীমাবদ্ধতার সম্ভাবনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক মেমোরেন্ডাম ইতোমধ্যে পোশাক শিল্পে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এটি কাঁচামাল সংগ্রহ এবং অন্যান্য দেশে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এ ধরনের বিধিনিষেধে পোশাক শ্রমিকদের কাজের অবস্থার যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ারও সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অফ বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘আইনের যথাযথ পরিপালন’ শীর্ষক আলোচনায় পোশাক খাতে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যথাযথ নিয়ম (ডিউ ডিলিজেন্স) না মানলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানা আদায়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।
আলোচনায় তিনি আরও বলেন, ‘ডিউ ডিলিজেন্স যে আইন করা হয়েছে তা শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার বিষয় নয়; সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত সবার পালনের জন্য। এসব নিয়মকানুনের মধ্যে শিশুশ্রম, বাধ্যতামূলক শ্রম, দাসত্ব, বন ধ্বংস, পরিবেশ দূষণ, ইকোসিস্টেমের ক্ষতি এবং মানবাধিকারের মতো বিষয় রয়েছে। সুতরাং, এসব শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের একার স্বার্থ নয়, এর সঙ্গে বৈশ্বিক স্বার্থ যুক্ত।
২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশকে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাই ডিউ ডিলিজেন্স আইনকে আলাদা হিসাবে দেখা ঠিক হবে না। এ সম্পর্কিত প্রায় ৩২টি কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশকে এগুলো শুধু অনুসমর্থন নয়, বরং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
১৬ নভেম্বর ২০২৩ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘যারা শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দেবে, ভয় দেখাবে, শ্রম ইউনিয়নের নেতা-শ্রম অধিকারের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তি এবং শ্রম সংগঠনের ওপর আক্রমণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।’ তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের শ্রমমান উন্নয়নের জন্য কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির কেন্দ্রীয় এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের কার্যক্রমেরও মূল বিষয়। এটা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়; শ্রমঅধিকার আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির চাবিকাঠি।
আন্তর্জাতিক মানের শ্রমঅধিকার নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করবে। পৃথিবীর সব দেশে নিয়োজিত আমাদের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে কর্মরত ব্যক্তিরা শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করবে, যাতে করে আমাদের কাজের মধ্যে তাদের আওয়াজ প্রতিফলিত হয়।’ এ ছাড়া যারা শ্রমিক নেতা, শ্রমিক সংগঠন ও শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের ভয় দেখায় এবং আক্রমণ করে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিকে সমর্থন জানানোর জন্য ‘আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির আট কংগ্রেস সদস্য। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার ও পোশাক প্রস্তুতকারকদের ওপর চাপ সৃষ্টির বিষয়ে উল্লেখ করে প্রদত্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ওয়েজবোর্ড থেকে সর্বশেষ যে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর ফলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে। পুলিশ প্রতিবাদকারী এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতামূলক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এতে কমপক্ষে চারজন নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, আটক এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিশোধ, সহিংসতা, ভয়ভীতি ছাড়াই সংঘটিত বা শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের প্রতিবাদ এবং দরকষাকষির অধিকারকে সম্মান ও রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন, যার সঙ্গে আমরা একমত।
শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং একটি ন্যায্য-স্বচ্ছ মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়ার পক্ষে বেশ কয়েকটি মার্কিন ব্র্যান্ডের সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে দেখে আমরা উৎসাহিত হয়েছি। তবে শুধু আহ্বান জানানোই যথেষ্ট নয়। এমন অবস্থায় আমরা এএএফের প্রতি অনুরোধ জানাই, যাতে তারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের ওপর পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও পোশাক প্রস্তুতকারকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করুক, যাতে তারা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রতি মাসে ২০৮ ডলার বাস্তবায়ন করে।’
সত্তরের দশকের শেষার্ধ থেকে একটি রপ্তানিমুখী খাত হিসাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের (ওভেন শার্ট) প্রথম চালানটি রপ্তানি হয় ১৯৭৮ সালে। পরবর্তীকালে বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে এ শিল্প বিকশিত হয়। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান ছিল মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। আশির দশকের শেষ পর্যায়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে পেছনে ফেলে পোশাক শিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে অধিষ্ঠিত হয়।
১৯৯১-৯২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রথমবারের মতো বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে এ শিল্প খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হয় ১ দশমিক ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের, যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলা। ১৯৮২ সালে দেশে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৪৭টির বিপরীতে বর্তমানে তা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে এবং কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। প্রায় তিন যুগ ধরে পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক শিল্প নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বে একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ২০২০ সালে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে এলেও এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ তা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়। বিদায়ি বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ চীনকে পেছনে ফেলে দাম ও পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিট পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বৃহৎ বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় এ খাতে ক্রয়াদেশ কমলেও বিগত বছরের শেষ তিন মাস ধরে এর ধারাবাহিক বৃদ্ধি পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিসংখ্যান মতে, ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে উল্লেখিত তিন মাসে রপ্তানির ক্রয়াদেশ এসেছে ৬ হাজার ৭৭১টি, ২০২২ সালের একই সময়ে যা ছিল ৬ হাজার ৩৫২টি। এ হিসাবে ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের ভাষ্যমতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র. জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি কমায় পোশাক রপ্তানির অর্ডার বাড়ছে এবং আগামী মাসগুলোতে আরও বেশি অর্ডার পাওয়া যাবে।
এটি অনস্বীকার্য যে, পোশাক শিল্পের হাত ধরে দেশের অর্থনীতি অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প খাতের অবদান অনেক। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদানের পাশাপাশি বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অসংখ্য নারীর কর্মসংস্থানসহ সামাজিক উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করেছে এ খাত।
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকার আর্থিক প্রণোদনা, কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। পোশাক শিল্পসহ সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় সরকার শিল্প পুলিশ গঠন করেছে। শিল্প বিকাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
গত ২২ জানুয়ারি ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুষ্টিমেয় কয়েকটি গন্তব্যের ওপর নিভরশীলতা কমানোর উদ্দেশ্যে রপ্তানি পণ্যের জন্য নতুন বাজার ও পণ্য অনুসন্ধানে গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী রপ্তানি পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে; কিন্তু তার জন্য আমাদের নতুন বাজার ধরতে হবে।’
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রমতে, ইতোমধ্যে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রচলিত বাজারের ওপর অতিনির্ভরতা কাটতে শুরু করেছে। দেড় দশকের ব্যবধানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাজারের হিস্যা ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এ খাতে নতুন এক রূপান্তরের ঢেউ লেগেছে। এক্ষেত্রে নতুন চমক হলো জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার বাজার।
দীর্ঘদিন ধরে জাপানে বছরে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়াতেও তৈরি পোশাক রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ভারতের বাজারেও পোশাক রপ্তানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। নতুন বাজারগুলোর মধ্যে আরও আছে রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। মোদ্দাকথা, সব অপপ্রচার পরিহার করে নতুন বাজার প্রসারের মাধ্যমে এ শিল্পের সমৃদ্ধকরণে সরকার, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার মেধা ও প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটাতে হবে।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়