একজন ইসরাইলির উপলব্ধি
তবু শান্তি আসুক
মাওজ ইনন
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমি ঘুম থেকে জেগে হোয়াটসঅ্যাপের পারিবারিক গ্রুপে আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি বার্তা পেলাম, যেখানে তারা জানিয়েছেন, তারা সাইরেন শুনে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। যেহেতু তারা যেখানে থাকেন, সেখানে প্রায়ই তাদের এমন বিপদের মুখোমুখি হতে হয় এবং সাইরেন শুনতে পান, তাই আমি তখন তেমন একটা চিন্তিত হইনি। কিন্তু সকালের কফি বানিয়ে যখন খবর চালু করলাম, তখন জানতে পারলাম, হামাসের লোকেরা ইসরাইলি গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। আর তখনই আমি সত্যি সত্যি চিন্তায় পড়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম বাবাকে।
তখন ঘড়িতে সময় ৭টা ৩৫। তিনি ফোন ধরে আমাকে বললেন, ‘হ্যাঁ, মাওজ আমরা নিরাপদ ঘরে আছি। আমরা তাদের গুলির শব্দ শুনছি। ব্যাস, এটুকুই।’ ১০ মিনিট পর আমি তাদের আবার কল করলাম। সময় তখন সবে ৭টা ৪৫ পেরিয়েছে। আমার বাবা কিংবা মা কেউই আর ফোন ধরলেন না। তাদের কাছ থেকে আর আমি কোনো কথাও শুনিনি।
এখন আমি একজন শান্তিকর্মী। সম্ভবত আমি যা হতে চেয়েছিলাম তা হইনি, তবে আমার বাবা-মায়ের মৃত্যু আমাকে তা-ই বানিয়েছে। আমার পরিবারের যে বোঝাপড়াটা ছিল, সেটা উত্তরাধিকার সূত্রে আমাকে বজায় রাখতে হবে। আমার বাবা-মা ছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা কারও জাতি, বয়স বা বর্ণের পরোয়া করতেন না। তারা সবার সঙ্গে সমান আচরণ করতেন। সবাই যেমন আচরণ পেতে চায়, তারা তেমন আচরণই করতেন। তারা ছিলেন আশাবাদী মানুষ। তাই তাদের উত্তরাধিকার বাঁচিয়ে রাখতে আমি শান্তিকর্মী হয়েছি।
আজ ইসরাইল একটি পুরোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে, যা গত শতাব্দীতে বহুবার করেছে। আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে। প্রতিশোধ আমার বাবা-মায়ের জীবন ফিরিয়ে দেবে না। এটা অন্যান্য ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি, যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদেরও ফিরিয়ে দেবে না।
বরং এর মাধ্যমে হিতে বিপরীত হচ্ছে। এর ফলে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটবে। এটি আরও মৃত্যু ডেকে আনতে চলেছে। আমাদের এ চক্রটি ভাঙতে হবে।
আজ আমি সবার জন্য কাঁদছি, প্রত্যেক মানুষ এই রক্তক্ষয়ী চক্রের কারণে কষ্ট পাচ্ছে।
আমি ব্লেইম গেমের বিরুদ্ধে। কে বেশি হামলার শিকার, কে সবচেয়ে বেশি ভুগছে-এসব নির্ধারণ করার যে চেষ্টা, আমি তার বিরুদ্ধে।
আমরা সবাই ভুগছি। আসুন এই দুর্ভোগ বন্ধের বিষয়ে সবাই মনোনিবেশ করি।
আসুন এই যুদ্ধ বন্ধ করি।
আলজাজিরা থেকে অনুবাদ : খালিদ বিন আনিস
মাওজ ইনন : ইসরাইলি শান্তিকর্মী