Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত আনতে অপরাধী বিনিময় চুক্তি করতে হবে

Icon

লুৎফর রহমান রিটন

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত আনতে অপরাধী বিনিময় চুক্তি করতে হবে

বঙ্গবন্ধুর বুকে সরাসরি ফায়ার করেছিল যে সেনাসদস্য, সেই ঘাতক নূর চৌধুরী আজও বহাল তবিয়তে বৃহত্তর টরন্টোতে বসবাস করছে। নিরাপদে বছরের পর বছর সে দেশের সরকারের জামাই আদরে সে অবস্থান করছে অসোয়া নামের একটা শহরে।

কানাডার রাজধানী অটোয়ায় থাকি আমি। আমার পাশের শহরেই আমাদের জাতির পিতার হত্যাকারীও থাকে! মাঝেমধ্যেই মনটা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অসহায় বোধকরি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিষয়ে কানাডার ধারণা, বিশ্বাস কিংবা অবস্থান সংক্রান্ত কিছু ভ্রান্তির নিরসন হওয়া জরুরি; কিন্তু যথাযথ কূটনৈতিক তৎপরতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

২.

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল আরিফকে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের অনুমতি দেয়নি সে দেশের সরকার; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজর নূর চৌধুরীকে কানাডায় নিরাপদ শেলটার দিয়ে রেখেছে কানাডা। একটি ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফয়সাল আরিফ। ২০০৭ সালে ফয়সাল তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল আরিফকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নিয়ে আসতে চান এবং কানাডা ইমিগ্রেশন বিভাগে যথাযথ অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের ১০ বছর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিযোগে কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ আবেদনটি প্রত্যাখ্যান ও বাতিল করে দেয়। সাধারণত ইমিগ্রেশনের আবেদন নাকচ বা প্রত্যাখ্যান হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকে; কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল কোনো আপিলও করতে পারবেন না বলে জানানো হয়। আপিলের সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করার অভিযোগে। কানাডার ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী, একজন বিদেশি নাগরিক যদি কখনো কোনো সরকারকে সহিংসতা বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টা করেন বা কাউকে সেই চেষ্টায় উৎসাহিত করেন বা সেই বিদেশি নাগরিক যদি কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য বা সহযোগী হিসাবে কাজ করে থাকেন, তাহলে তিনি কানাডার স্থায়ী অভিবাসী বা নাগরিক হওয়ার অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবেন। একটি অত্যাচারী, স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্রী সরকারকে উৎখাতের জন্য তার বিরুদ্ধে সহিংস পন্থা অবলম্বন করলেও এ আইন প্রযোজ্য হবে।

অনেকের দৃষ্টিতে এ আইনটি গণতন্ত্রবিরোধী। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি কানাডার ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন। অথচ কানাডার উদার ইমিগ্রেশন আইন বা নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর চৌধুরী, চার জাতীয় নেতার হত্যাকারী ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারী, মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন এবং খায়রুজ্জামান কানাডায় দীর্ঘদিন বসবাস করেছে এবং করছে প্রায় নাগরিকের মর্যাদায় (শেষমেশ খায়রুজ্জামান কানাডার বৈধ কাগজপত্র না পেয়ে মন্ট্রিয়ল ছেড়ে গেছে। বর্তমানে সে মালয়েশিয়ায় বাস করছে)। ইতোমধ্যে কিসমত হাশেম মারা গেছে। নাজমুল আনসারী বেঁচে আছে। শরিফুল নাম পালটে কানাডার কোনো একটি প্রভিন্সে আত্মগোপন করে আছে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কানাডার ইমিগ্রেশন আইনের এইরকম ‘দ্বৈতনীতি’ অনেকের কাছেই রীতিমতো বিস্ময়কর।

৩.

বহু বর্ণ, বহু ধর্ম এবং বহু জাতিগোষ্ঠীর অপরূপ সহাবস্থানের এক মোজাইক রাষ্ট্র কানাডা। দেশটির মূল সৌন্দর্য এখানেই। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার-অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার দেশ হিসাবে, পরমতসহিষ্ণুতার দেশ হিসাবে, মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবে, সর্বোপরি মানবাধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কানাডা একটি অনন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শীর্ষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে দুনিয়াব্যাপী। কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান নেই।

কানাডার আরাধ্য বিষয়-ফ্রিডম অফ স্পিচ। প্রত্যেক মানুষের বলার অধিকার, লেখার অধিকার, আঁকার অধিকার, গাইবার অধিকারে বিশ্বাসী কানাডা। তাই কানাডা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপন্ন মানুষের নিশ্চিত ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। স্বদেশে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, বিপন্ন এবং হত্যার হুমকির মুখে বহু লেখক-শিল্পী-সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর ঠাঁই মিলেছে কানাডায়। অন্যদিকে মুক্ত উদার উন্মুক্ত মানবাধিকারের আইনকানুনের ফাঁক গলে বহু দেশের বহু ঘৃণ্য অপরাধী ও খুনিরও অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে কানাডা। মানবাধিকার আইনের এস্তেমাল করে মানবাধিকারের চরম শত্রুও পেয়ে গেছে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ। নিজের দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধী (এমনকি খুনের দায়ে দণ্ডিত হলেও) যে কোনো উপায়ে পরিচয় লুকিয়ে কানাডায় একবার প্রবেশ করতে পারলেই দেশটির আইনে আমৃত্যু বসবাসের অভাবনীয় সুবিধা পেয়ে যায়। এবং কানাডায় অবস্থান করা কিন্তু স্বদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে কানাডা কখনোই তার নিজের দেশে ফেরত পাঠায় না। কারণ, কানাডা মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাসী নয়; কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার নৈতিকতা আর ভয়ংকর খুনিকে নিরাপদ শেলটার দেওয়ার নৈতিকতাকে একই মানবিক মূল্যবোধে বিচার করা যায় কি? সুবিচার আর মানবিকতার সঙ্গে কানাডার এ দৃষ্টিভঙ্গিটি বা অবস্থানটি সাংঘর্ষিক। এ বিধানটি বলবৎ ও কার্যকর থাকলে আগামীতে ভয়ংকর খুনিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বা অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে কানাডা, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

৪.

কানাডা শান্তির দেশ। মানবাধিকারের দেশ। এ কানাডা খুনিদের অভয়াশ্রম হতে পারে না! আমরা প্রতিবাদ করেছি। কানাডা সরকারকে জানিয়েছি। তারা আমাদের কথা দিয়েছে, খুনিকে তারা বহিষ্কার করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও খুনিদের মিত্ররা আছে, খুনিদের মিত্ররা থাকে, মানবাধিকার রক্ষার মোড়কে। কিছু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তাই কানাডা এখনো বহিষ্কার করেনি নূর চৌধুরীকে।

২০১১ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কানাডায় এসেছিলেন। তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কানাডার অসোয়া শহরে থাকেন। কন্যার সঙ্গে যে অ্যাপার্টমেন্টে তিনি ছিলেন, তার খুব কাছের আরেকটি অ্যাপার্টমেন্টেই ছিল ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা নূর চৌধুরী। ২০১১ সালের ২৫ মে দৈনিক ‘কানাডা স্টার’ একটা প্রতিবেদন ছেপেছিল, যার শিরোনাম ছিল-‘বাংলাদেশি পিএম ভিজিট্স ফ্যামিলি ইন শ্যাডো অব কিলার।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল-‘শেখ হাসিনা স্পেন্ডস উইক ইন অসোয়া, নট ফার ফ্রম ফাদার্স অ্যাসাসিন ...।’

৫.

বিভিন্ন সময়ে কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের একাধিক রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো ভূমিকা তো রাখেইনি বরং কেউ কেউ নূরকে সহায়তা করেছে গোপনে। এদের মধ্যে মোশতাকপুত্র রফিকউদ্দিন আহমেদ তার দূতাবাস থেকেই বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর নামে বাংলাদেশের একটি পাসপোর্ট ইস্যু করেছিল। এ বিষয়ে একদিন বিস্তারিত কথা হয়েছিল আমার, রফিকের সঙ্গে। বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে ২০০২ সাল থেকে কানাডার অটোয়ায় বসবাসকালে বছরের পর বছর আমি অপেক্ষা করেছি বাংলাদেশের একটি পাসপোর্টের জন্য। কিন্তু দূতাবাস আমাকে পাসপোর্ট দিতে বারবার অপারগতা প্রকাশ করছিল। আমাকে জানানো হচ্ছিল-‘বাংলাদেশ থেকে আপনার পাসপোর্টের ক্লিয়ারেন্স আসেনি। ওটা না আসা পর্যন্ত আমরা আপনার নামে কোনো পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারি না। একপর্যায়ে আমি রাষ্ট্রদূত রফিকউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং দূতাবাসে তার মুখোমুখি হই। তিনিও আমাকে জানান, বাংলাদেশ থেকে আপনার পাসপোর্টের ক্লিয়ারেন্স আসেনি। ওটা না আসা পর্যন্ত আমরা আপনার নামে কোনো পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারি না। আমি তখন তাকে বলেছিলাম-কিন্তু আপনি বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর চৌধুরীর নামে আপনার দূতাবাস থেকেই বাংলাদেশের একটি পাসপোর্ট ইস্যু করেছিলেন জনাব!

ঘটনাটা তিনি অস্বীকার করলে আমি পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ এবং সেই পাসপোর্টে ইস্যুকারী কর্মকর্তার নাম ও দূতাবাসের সিলমোহরের বিষয়টি বললে তিনি বলেছিলেন-নকল সিলমোহর বানিয়ে কেউ যদি ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে নেয়, তাতে আমাদের কী করার থাকে? আমি তখন টোকিও দূতাবাসে প্রথম সচিব পদে আমার কাজ করার সরেজমিন অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ এবং কাউকে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে দূতাবাসের গোপন ক্ষমতা ও দূতাবাসের জন্য বরাদ্দ হওয়া পাসপোর্টের সিরিয়াল নম্বরের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। এ বিষয়ে আর কোনো কথা তিনি বলতে চাননি। অর্থাৎ, আমার উত্থাপিত খুনি নূরকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়টি সঠিক ছিল। (চারদলীয় জোট সরকারের পুরো শাসনকালে পর্যন্ত আমি ‘বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট বঞ্চিত’ ছিলাম। পরে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে, আমি আমার পাসপোর্টের অধিকার এবং বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাই)।

পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রদূত রফিকউদ্দিন আহমেদের জায়গায় একাধিক নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেয়েছেন; কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, কোনো রাষ্ট্রদূতই জাতির পিতার খুনি নূরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কার্যত কোনো ভূমিকা রাখেননি। তাদের দায়িত্বকালে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ হলেও সেই অর্থ নূরকে ফেরত পাঠানোর পেছনে ব্যয় হয়নি। বরং সেই অর্থের সিংহভাগই লোপাট হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডায় কোনো রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত সফরে এলেই শুধু নূর চৌধুরীর বিষয়ে আমাদের দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের তৎপরতা বেড়ে যায় বা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তিনি ফিরে গেলে সেই তৎপরতা আর দেখা যায় না।

আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। এমনিতে রাষ্ট্রদূতরা সারা বছর কিংবা কয়েক বছর খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়ে বিস্ময়কর রকমের নীরব থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আগে কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত অতিমাত্রায় তৎপরতা প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নূর চৌধুরী ইস্যুটি ‘মেয়াদ এক্সটেনশনে’ ভূমিকা রাখবে সেই দুরভিসন্ধিতেই এ তৎপরতা, সেটি বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়ে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেন না কিংবা অনেক সত্যই গোপন করেন। কিন্তু কেন করেন সেটা বোধগম্য নয়। এ রহস্য কি উন্মোচিত হবে না কোনোদিন? বিশেষ করে রাষ্ট্রদূতদের কর্মকাণ্ডে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে মনে-প্রকারান্তরে এরা আসলে কার বা কাদের পারপাস সার্ভ করেন?

৬.

নিকট অতীতে বাংলাদেশের তৎকালীন একজন আইনমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডা সফর করে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে মিডিয়াকে বলেছিলেন-‘কানাডা নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে।’ কিন্তু কানাডা জানিয়েছিল, ‘এমন কথা তারা বলেনি।’ খুনি নূরকে ফিরিয়ে নেওয়ার কাগজপত্রে স্বাক্ষর হওয়ার আগে মিডিয়ায় এসব কথা বলা উচিত নয়। এটা কানাডা। নিয়ম এখানে সবার আগে মান্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাঝারি গোছের দু-একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেই তো হবে না, কথা হতে হবে আরও উঁচুস্তরে। রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্রে।

মনে রাখতে হবে, কানাডা মৃত্যুদণ্ডবিরোধী দেশ। প্রথমে কানাডাকে রাজি করাতে হবে। কানাডার সঙ্গে অপরাধী বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। তার আগে কানাডা কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। নিদেনপক্ষে একটি ‘থার্ড কান্ট্রি’তে, মানে অন্য আরেকটি দেশে অপরাধীকে হস্তান্তরে কানাডাকে রাজি করাতে পারলেই শুধু সম্ভব বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাওয়া। তার আগে নয়।

আমরা অপেক্ষায় আছি, কানাডা সরকার খুনি নূর চৌধুরীকে একদিন এ দেশ থেকে বহিষ্কার করবে। কারণ, কানাডায় বৈধভাবে বসবাস করার প্রয়োজনীয় অনুমতি সে এখনো পায়নি। চার চারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তার ইমিগ্রেশন আবেদন। নূর চৌধুরী নামের একজন অবৈধ অভিবাসীর পেছনে সুদীর্ঘকালব্যাপী কানাডা সরকার বিপুল পরিমাণে ব্যয় করছে ডলার, বিরামহীন।

মানবাধিকার রক্ষার নামে চিহ্নিত একজন কুখ্যাত খুনির পক্ষে আর কতদিন দাঁড়িয়ে থাকবে কানাডা?

লুৎফর রহমান রিটন : কানাডা প্রবাসী ছড়াকার

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম