রিজার্ভের হিসাবায়ন ঠিকমতো করলে ডলার সংকট এড়ানো যেত
ড. আর এম দেবনাথ
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
৩০-৩৫ বছর আগের কথা। তখন দেশের সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তি ছিলেন প্রয়াত জহুরুল ইসলাম। তিনি তার ব্যাংকার-কর্মচারীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছিলেন, বাবারা তোমরা সারাদিন লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা নিয়ে লেনদেন করবে। মাথা গরম করো না। টাকা মানুষের মাথা গরম করে। প্রয়াত জহুরুল ইসলামের কথার সত্যতা অহরহই মেলে।
এবার মিলল ব্যক্তির ক্ষেত্রে নয়, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক -বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাংকটি টাকার গরমে এমন কতগুলো সিদ্ধান্ত নেয়, যার কুফল এখন দেশ ও জাতিকে ভোগ করতে হচ্ছে। কী সেই সিদ্ধান্ত, তা বলার আগে একটু প্রেক্ষাপট বলা দরকার।
কিছুদিন আগেও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ শনৈঃশনৈঃ বাড়ছিল। প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হতো দেশে আমাদের কত ডলার রিজার্ভ। কীভাবে তা হচ্ছে, সে কথা পরে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আজ ৩৫ বিলিয়ন ডলার তো কাল ৪০ বিলিয়ন, পরশু ৪২ বিলিয়ন ডলার। বাড়তে বাড়তে হয়ে গেল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার (এক বিলিয়ন ডলার সমান শত কোটি)। ভাবা যায় কত টাকা/ডলার! স্বাধীনতার পর বলতে গেলে শূন্য বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্থলে ৪৫-৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ -মাথা ঘুরে যায়।
সত্যি সত্যি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাথা গরম হয়ে যায়। তাদেরকে পেয়ে বসে একশ্রেণির ব্যবসায়ী/রপ্তানিকারক। তারা ‘তাল’ তোলে -এত ডলার দিয়ে কী হবে? আমাদের এত ডলার রিজার্ভ দরকার নেই। এসব দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করা দরকার। রপ্তানিকারকরা বুদ্ধি দিল -তৈরি করো ‘রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল’ (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড)। রিজার্ভ থেকে ডলার আনা হোক। দেওয়া হোক ‘দেশপ্রেমিক’ রপ্তানিকারকদের। তারাই দেশের আশা-ভরসা। অনেকে এতে আপত্তি করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক গভর্নর। তিনি বলেছিলেন, এ কাজ করা হবে আÍঘাতী। রিজার্ভে হাত দেওয়া ঠিক হবে না। না, এসব বিরুদ্ধ কথা বাংলাদেশ ব্যাংক শোনেনি। তারা ‘ডলার ফান্ড’ তৈরি করে এবং সেখান থেকে ৭-৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিকারকদের দিয়ে দেয়। আমরা একটি বিদেশি রাষ্ট্রকেও ডলার দিই এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে ডলার দেওয়া হয় রিজার্ভ থেকে নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ সমস্যা তৈরি হলো। কী এই সমস্যা?
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ‘লোন’ দেওয়ার জন্য এসে বলল, তোমাদের রিজার্ভের পরিমাণ এত বেশি নয়। গন্ডগোলটা লাগাল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। হঠাৎ সারা বিশ্বে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেল। জ্বালানির দাম বেড়ে গেল। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। রাতারাতি আমদানি ব্যয় বেড়ে গেল। আবার একশ্রেণির ব্যবসায়ী ‘ধুমসে’ আমদানি করা শুরু করে। বলা যায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত। অর্থাৎ অর্থ পাচার। ‘এত ডলার’ দেশে, খরচ করো। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করল না। আমদানি বিল বৃদ্ধি পেতে থাকল। একে তো যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধি, যার ফলে ডলারে টান পড়েছে, তার ওপর ব্যবসায়ীদের অপকর্ম -অতিরিক্ত আমদানির নামে অর্থ পাচার। দেখতে দেখতে ডলার রিজার্ভ কমতে শুরু করল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকই বলল, আমদানির নামে অর্থ পাচার হয়েছে। গভর্নর সাহেব এর হিসাবও দিলেন। এসব ঘটতে পারল কেন?
ঘটেছে রটনার মধ্যে। রটনা হচ্ছে, আমাদের ডলার রিজার্ভ প্রচুর। এত ডলার দরকার নেই। এতে মদত জোগাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ডলার রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে থাকল। হিসাবায়ন পদ্ধতি ছিল ভুলে ভর্তি। বাংলাদেশ ব্যাংক সারাদিন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং করার পরামর্শ দিচ্ছে। বলছে ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিসের’ কথা। অথচ তারা ওই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিজেরাই মানল না। বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের কিছু কর্মকর্তা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন বলে বাজারে কথা চালু আছে।
আন্তর্জাতিক ‘মানদণ্ড’ অমান্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক দিনের পর দিন আমাদের বলতে থাকল, আমাদের ‘রিজার্ভ’ প্রচুর। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পরিসংখ্যান দেওয়াতে সবার মাথা গরম হয়ে যায়। সবার আগে মাথা গরম হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের। বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ দেখিয়ে তারা ওই রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে ‘রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড’ (ইডিএফ) তৈরি করে। রপ্তানিকারকদের ডলারে ঋণ দেয়, যার বিপুলাংশ এখন তারা পরিশোধ করছে না। ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপদে। তাদের এত ডলার নেই যে তারা ঋণ শোধ করবে কাস্টমারের পক্ষে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাথা যারা গরম করল, সেসব নির্বাহী করল কী -তারা বৈদেশিক মুদ্রায় রপ্তানি ফান্ড করল ঠিকই, কিন্তু ওই ডলার আবার বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখাতে থাকল। এটি রিজার্ভ থেকে বাদ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করল না। শ্রীলংকাকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়া হলো। ওই ডলারও রিজার্ভ থেকে বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাবায়ন করার কথা ছিল। না, তারা তা করেনি। না করে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাল। নিজেরা মাথা গরম করল, অন্যদের মাথাও গরম করাল।
এখন এসব ঝামেলা/অনিয়ম শোধরাতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। তাও ‘ঠেলায়’ পড়ে। আইএমএফ বলেছে, তোমাদের হিসাবায়ন পদ্ধতিতে গন্ডগোল আছে; আমাদের কাছ থেকে জরুরি ‘লোন’ পেতে হলে হিসাবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। এটা শুরু হয়েছে বলে কাগজে দেখা যাচ্ছে। এর ফল হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একে তো জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি -তার ওপর হিসাবায়ন পদ্ধতি শুদ্ধ করার কাজ। ফল হচ্ছে, ডলার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। ডলারের বাজারে হস্তক্ষেপ করছে। আমদানি হ্রাসের জন্য নানাবিধ বিধিবিধান জারি করেছে। আমদানি হ্রাস পাচ্ছে।
আবার আন্তর্জাতিক অনেক ‘কমিটমেন্ট’ও রক্ষা করা যাচ্ছে না। ডলারে পরিশোধ বিঘিœত হচ্ছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক দুটি ‘রেটিং এজেন্সি’ আমাদের দেশের ‘ঋণমান’ এক ধাপ নামিয়ে দিয়েছে। ফলে বিদেশের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য করতে গিয়ে, বৈদেশিক ঋণ পেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাথা গরমের কুফল। শুধু কি তাই? ডলার সংকট, আমদানি হ্রাস ইত্যাদির ফলে এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সর্বত্র।
আমদানি কম হলে কী ক্ষতি? দৃশ্যত ডলার বাঁচে, এটা ভালো লক্ষণই। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। দেখা যাচ্ছে ডলার সংকটের কারণে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন ঘটছে। জ্বালানি/বিদ্যুৎ খাতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। শিল্পায়ন এমনিতেই স্থবির। বেসরকারি ঋণের বৃদ্ধির পরিমাণ কম। এখন তা আরও কম। কারণ ডলার সংকটের কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি পর্যন্ত বিঘ্নিত হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য ডলার সংকটের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এ নিয়ে কথা বলছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হবে কী করে? ডলারের জোগান বৃদ্ধি না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার দেবে কোত্থেকে?
ডলার রিজার্ভ বাড়তে পারে তিনটি সূত্রে -রপ্তানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং সর্বশেষ -বিদেশি বিনিয়োগ বা ঋণ পাওয়া গেলে। এসব ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি আগের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আমাদের রপ্তানি বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওইসব দেশে এখন মন্দা চলছে। মূল্যস্ফীতির শিকার তারা। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অতএব, আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা সেভাবে বাড়ছে না। অথচ তা বাড়ার কথা ছিল। কারণ ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রপ্তানিকারকদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ডলার রপ্তানি করে ৮৫-৮৬ টাকা করে পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় ডলারপ্রতি ১০৮-১১০ টাকা। এ কারণে তাদের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার কথা। কিন্তু তা বাড়ছে না।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহেও শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু সেই পরিমাণে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। বলা হচ্ছে, হুন্ডিওয়ালাদের খপ্পরে পড়েছে রেমিট্যান্স ব্যবসা। হুন্ডিওয়ালারা অবৈধ ব্যবসায় অর্থ জোগানোর উদ্দেশ্যে বিদেশে ডলার সংগ্রহ করে বেশি দামে। তারা ঘরে ঘরে মুহূর্তের মধ্যে টাকা পৌঁছে দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির পুরোপুরি সাহায্য তারা নিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা বেশি টাকা পাচ্ছে। তাই সরকারিভাবে ডলার আসছে না। আবার বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কোনো ভালো লক্ষণ নেই। অতএব দেখা যাচ্ছে, তিন সূত্রে ডলার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না এবং হবে বলেও মনে হয় না।
অনেকে বলেন, ডলারের বাজারকে উš§ুক্ত করে দিলে সরকারিভাবে বেশি ডলার আসবে। কারণ প্রবাসীরা ডলারপ্রতি বেশি টাকা পাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার সতর্ক। কারণ তারা মনে করে, ডলারের বাজার হঠাৎ উš§ুক্ত করে দিলে ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাবে। এর বোঝা অর্থনীতি এ মহূর্তে বহন করতে পারবে না। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। কাঁচামরিচ পর্যন্ত আমদানি করতে হয়। ডলারের বাজার উš§ুক্ত করলে ডলারের দাম অনেক বৃদ্ধি পাবে, তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। এই উভয় সংকটে আছে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখানেই শেষ নয়। ডলার সংকট, আমদানি হ্রাস ইত্যাদি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব রেখে চলেছে। সর্বত্র মন্দা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, সরকারের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রামাফিক হচ্ছে না। ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে ১০ শতাংশে নেমেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে। রাজস্ব আদায় কম হওয়া মানে উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট হওয়া। সরকারি খরচ নির্বাহে সমস্যা হওয়া। তা-ই এখন হচ্ছে। সরকারকে বহু খরচ কমাতে হচ্ছে। খরচের ওপর লাগাম টেনে ধরতে হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করতে হচ্ছে। অতএব দেখা যাচ্ছে, আমদানি হ্রাস পেলেই সমস্যার সমাধান হবে -এ ধারণা ঠিক নয়। আমদানি হ্রাস, রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় সমস্যা দিন দিন ঘনীভ‚ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাথা গরমের এই হচ্ছে কয়েকটি ফল। আশা করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়