Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি

ঋণনির্ভর বাজেট চলমান সংকটের সমাধান দেবে কি?

Icon

ড. আর এম দেবনাথ

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঋণনির্ভর বাজেট চলমান সংকটের সমাধান দেবে কি?

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। এক রাজার একমাত্র কন্যার বিয়ে। পাত্র নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে সভাসদদের সঙ্গে রাজা একদিন বসেছেন। সিদ্ধান্ত হলো পাত্র হবেন একজন প্রসিদ্ধ শিল্পী। তিনি বর হবেন কীভাবে? দেশের বড় বড় শিল্পীরা ছবি আঁকবেন। সেই ছবিগুলো একটা জায়গায় টানিয়ে রাখা হবে। নিচে থাকবে একটা করে ‘উডেন পেনসিল’। পথচারীদের প্রতি নির্দেশ-ছবির যে অংশটি ভালো লাগবে না তাতে কলমের ‘ডট’ দিতে হবে।

যথারীতি শুরু হলো কাজ। ছবি তৈরি হলো, সেগুলো টানানো হলো। খোলা জায়গায় এসব রাখা হলো। কয়েকদিন পর রাজার নির্দেশমতো ছবিগুলো তুলে নিয়ে আসা হলো। নিশ্চয়ই কোনো কালো দাগহীন নিখুঁত ছবি পাওয়া যাবে। সেই ছবি যিনি এঁকেছেন তিনিই হবেন রাজার জামাতা। হা হতাস্মি! দেখা গেল সব ছবিতেই কালো দাগ। কারণ একেকজনের কাছে একেকটি ছবির একেকটি অংশ খারাপ লেগেছে। সেই মোতাবেকই পথচারীরা পেনসিলের কালো ‘ডট’ দিয়েছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে কোনো ছবিই আর নিখুঁত নেই। এ অবস্থায় রাজার মেয়ের জন্য হবু বর আর নির্বাচন করা হলো না। রাজা হতাশ হলেন।

গল্পটি বললাম আমাদের নতুন (২০২৩-২৪) বাজেটের দশা দেখে। বাজেট উত্থাপিত হয়েছে জুনের ১ তারিখে। তারপর থেকে খবরের কাগজে পড়ছি নিরন্তর আলোচনা/সমালোচনা। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ-অর্থনীতিবিদ, কলাম লেখক, চিন্তাবিদ, সংস্কারক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, নারী উদ্যোক্তা-সবাই যার যার মতো করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এসব পড়ে আমার মনে হচ্ছে-এটা কোনো বাজেটই হয়নি। কেউ বলছেন বরাদ্দ কম হয়েছে, কেউ বলছেন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি, কেউ বলছেন ওই খাতে বরাদ্দ বেশি দরকার ছিল। কেউ বলছেন, রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেই। শিল্পপতিরা বলছেন, তাদের দাবি মানা হয়নি।

করদাতারা বলছেন, তাদের কর বৃদ্ধি পাবে। মধ্যবিত্তরা বলছেন, তাদের জন্য কিছুই নেই বাজেটে। কেউ বলছেন, রাজস্ব ব্যয় কয়েকটি খাতে অতিরিক্ত-যেমন সুদ খাতে ব্যয়, প্রশাসন খরচ ইত্যাদি। আবার কেউ কেউ বলছেন, উন্নয়ন বাজেটের টাকা কম কেন? শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। এভাবে দেখলে বোঝা যাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে নতুন কিছু নেই। আগে যা হতো, এবারও তা-ই হয়েছে। কেউ তাতে সন্তুষ্ট নয়। কঠিন একটা অবস্থা। তাহলে মূল সমস্যা কী?

আমার মতে, অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্বের অভাব। যত টাকা বার্ষিক দরকার, তা আমাদের নেই। অথচ খরচ দিন দিন বাড়ছেই, কমার কোনো লক্ষণ নেই। মিতব্যয়িতার কথা বলা হলেও কেউ তা মানে না। অতএব, খরচ বাড়ছেই। অথচ রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো ব্যবস্থা নেই। যা আছে তা হচ্ছে, যারা কর দেয় তাদেরই বোঝা বৃদ্ধি। আর নতুন কর তুলতে গিয়ে যারা করের আওতায় নয়, তাদেরও কর দিতে বাধ্য করা। এ এক অকল্পনীয় অবস্থা।

রাজস্ব বৃদ্ধিতে অপ্রয়োজনীয়/অযৌক্তিক পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ খরচের ক্ষেত্রে কিছুই করা যাচ্ছে না। খরচ কমানো, অপ্রয়োজনীয় খরচ পরিহার করা, খরচের ক্ষেত্রে গুণগত মান রক্ষা করা-এসব ক্ষেত্রে কোনো চিন্তাভাবনার লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না। এক টাকার কাজ যে দুই টাকা-তিন টাকা দিয়ে করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে কেউ মনে হচ্ছে চিন্তিত নয়। অথচ তা হওয়া উচিত। রাজস্ব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা যেমন ভীষণভাবে দরকার, তেমনি দরকার ব্যয় সংকোচন, ব্যয়ের গুণগত মান বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে সমস্যা কী?

আমার বরাবরই মনে হয়েছে, এখনো মনে হয়, বাজেট প্রণয়নের ‘অ্যাপ্রোচটাই’ ভুলে ভরা। আমাদের বাজেট শুরু হয় ‘খরচ’ দিয়ে, ‘এক্সপেন্ডিচার’ দিয়ে। আগে কত খরচ হবে তা ঠিক করা হয়। তারপর রাজস্বপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়, না পারলে ঋণ করা হয়-দেশে-বিদেশে। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে আমরা কী করি? আমরা কি খরচের হিসাব আগে করি, না আয় বুঝে ব্যয় করি? সবাই আমরা আয়টা/রাজস্বটা আগে দেখি। তারপর মাসিক খরচের হিসাব করি। আয়ে না কুলালে ব্যয় হ্রাস করি। একান্ত বিপদে না পড়লে কেউ ঋণে যাই না। গ্রামের মানুষ বরং ঋণকে ভয় পায়। ঋণ শোধেও তারা যত্নশীল। কেউ মারা গেলে তার সন্তান-সন্ততিরা বাবার ঋণের বোঝা বহনের দায়িত্ব নেন। অবশ্য আজকালকার নব্যধনীদের ব্যাপার আলাদা।

এখন প্রশ্ন, আমরা যদি পারিবারিকভাবে ‘আয় আগে, ব্যয় পরে’ নীতি অনুসরণ করতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ নীতি অনুসরণ করতে বাধা কোথায়? কেন পশ্চিমাদের মতো ঋণনির্ভর হচ্ছি? তারা জন্ম নেয় ঋণ মাথায় নিয়ে। লেখাপড়া, ভরণপোষণ, বিয়ে-শাদি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি সবকিছুর জন্যই তারা ঋণনির্ভর। রাষ্ট্র হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় ঋণগ্রস্ত দেশ। তাদের নীতি হলো-‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ।’ অর্থাৎ ঋণ করে হলেও ঘি খাও, যতদিন বাঁচো সুখের মধ্যে বাঁচো। এটি পশ্চিমা নীতি হলেও আমদের বাঙালিদের চিরায়ত নীতি-ঋণ নয়, স্বাবলম্বী জীবন। এখানে আয় প্রথমে, খরচ পরে।

অথচ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আমরা ব্যয়, বড় বড় ব্যয়, অতিরিক্ত ব্যয়ের দিকে নজর দিচ্ছি বেশি। এটি করতে গিয়ে আমরা বিশাল বিশাল বাজেট দিচ্ছি। খরচের ওপর ভিত্তি করে আমরা বলছি, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বাজেট দিয়েছি আমরা। বলতে পারছি না যে, স্মরণকালের বৃহত্তম রাজস্বের বাজেট দিয়েছি। যেহেতু খরচের ব্যাপারে আমরা বেপরোয়া, তাই খরচের বাজেট বাড়ছে তো বাড়ছেই। এই টাকা আসবে কোত্থেকে? আসবে ঋণ থেকে।

ঋণের অবস্থা এখন এমন যে, দেখা যাচ্ছে উন্নয়নের জন্য (এডিপি) আমাদের টাকা নেই। বাজেটে যে ঘাটতি দেখানো হয়, তার সমপরিমাণ দেখা যাচ্ছে ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির’ (এডিপি) আকার। কত বড় ভুল বা বিপজ্জনক এটা, তা আমরা বুঝি বা না বুঝি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঠিকই বুঝবে। তাদেরই ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে বিদেশি ঋণের টাকা। ওই টাকা শোধ করতে হবে ডলারে, যার মূল্য দিন দিন বাড়ছে। এখনই খোলা বাজারে এক ডলারের দাম ১১৫-১১৬ টাকা। মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বন্ধ হলে এর দাম কত হবে তা সহজেই অনুমেয়।

অর্থাৎ ডলারের দাম যত বাড়বে, আমাদের বৈদেশিক ঋণের বোঝা টাকায় তত বেশি বাড়বে। এ কথা কি কেউ ভাবছেন? মনে হয় না। কারণ দেখা যাচ্ছে, বিদেশি ঋণ করাকে আমরা ‘শক্তি’র পরিচায়ক মনে করছি। অর্থাৎ আমরা শক্তিশালী বলেই বিদেশিরা ঋণ দিচ্ছে। তারা দেখেশুনে দিচ্ছে। তারা পাকিস্তানকে ঋণ দিতে চায় না, শ্রীলংকাকে দিতে চায় না; অথচ আমাদের বিনা বাক্য ব্যয়ে শর্তাধীনে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ওই ঋণ দিয়ে তারা আমাদেরকে ‘বাজার অর্থনীতি’ প্রচলন করতে উৎসাহ জোগাচ্ছে। তাদের প্রিয় বিষয় হচ্ছে, ভর্তুকি থাকতে পারবে না, সবকিছু চলবে বাজারের নীতিতে-চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। ভর্তুকি হ্রাস, অনৈতিকভাবে ভর্তুকি হ্রাসের ফলে যে অর্থনীতির সামগ্রিক বিন্যাস তছনছ হয়ে পড়ে, তা তাদের মাথায় নেই।

অথচ তাদের দেশগুলোয়, আমেরিকায় ব্যবসায়ীদের বিপদে রাষ্ট্র ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন (এক ট্রিলিয়ন সমান এক লাখ কোটি) ডলার দিয়ে সাহায্য করে। ১০-১৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ব্যাংকগুলোকে খাদ থেকে টেনে তোলে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার দিয়ে। তাদের কাছে ওটা কোনো অপরাধ/অন্যায়/অযৌক্তিক কাজ নয়। অথচ আমরা করলেই বিপদ। আমাদের বলা হয়েছিল কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস করতে। সরকার তা করেনি। এর ফল আমরা এখন লাভ করছি। খাদ্যে আমরা মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই হচ্ছে অবস্থা। বড় বড় খরচের বাজেট করে বড় বড় ঋণে যাচ্ছি আমরা। আইএমএফ’র কাছে যাচ্ছি। তারা আমাদের নানা শর্তের জালে আবদ্ধ করে ফেলছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকছে না। অথচ আইএমএফ’র কথায় চলে বিশ্বের কোনো দেশের মঙ্গল হয়েছে-এমনটি জানা যায় না।

তাহলে করণীয় কী? এ মুহূর্তে জরুরি করণীয় অনেক। এর মধ্যে খরচ কমানো খুবই বড় একটা বিষয়। একটা পয়সা খরচ করতেও সরকারের এখন হিসাব করা উচিত। এক টাকার কাজ দুই টাকায় করা থেকে যেভাবেই হোক মুক্তি পেতে হবে। সারা দেশে রাজস্ব বাজেটের টাকা ব্যয়ে ‘বালিশকাণ্ড’ ঘটে চলেছে। হাসপাতালের রোগীদের খাবার বাইরে বিক্রি হয়। জেলখানার কয়েদিদের খাবার বাইরে বিক্রি হয়। সরকারি ওষুধের গুদামের ওষুধের কোনো হিসাব নেই। গুদামে চালের অপচয় হয়। সর্বত্র এসব চলছে। কয়েকদিন আগে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজে তার এলাকার কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, তিনি এলাকায় যান সরকারের মালপত্র নিয়ে। এসবের কী হয় তা তিনি জানেন না। জানার চেষ্টা করেও বৃথা ফল। অপচয়ের তালিকা আমার দিতে হবে না। প্রতিদিন খবরের কাগজে এসবের ওপর রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। কীভাবে জ্বালানি তেলের টাকা, ক্যাপাসিটি চার্জের টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা, স্কুল শিক্ষকদের বেতনের টাকা মেরে দেওয়া হচ্ছে, তার কোনো প্রকৃত হিসাব পাওয়া কঠিন। উন্নয়ন বাজেটে গন্ডগোল আরও বেশি। সেখানে রাস্তা বানানো, মেরামত থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে লুট। যেন কন্ট্রাক্টরদেরই বাংলাদেশ! রাস্তা কেটে পুরো রাস্তা মেরামতের টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।

এ মুহূর্তে, এই জুনে সারা দেশে উন্নয়ন বাজেটের টাকা খরচের ‘মহোৎসব’ চলছে। কাজ নেই, অথচ বিলের টাকা তোলা হচ্ছে। এভাবে দেখলে বোঝা যাবে সরকার এক টাকার কাজ দুই টাকায়, তিন টাকায় করছে। বড় বড় প্রকল্পের ব্যাপারে কথা যত কম বলা যায়, ততই ভালো। মুশকিল হচ্ছে, এসব খরচের সবটা আমাদের আয়ের/রাজস্বের টাকা নয়। এর একটা বিরাট অংশই হচ্ছে দেশি/বিদেশি ঋণ।

দেশি ঋণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চায় বিল/বন্ড বিক্রি করে। কিন্তু ব্যাংকে ব্যাংকে টাকার অভাব। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে মাত্র ৬.৪৮ শতাংশ। অথচ এই সময়ে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ফলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সামর্থ্য নেই-সরকারকে তো দূরের কথা। অতএব, ভয়াবহ কাজ করা হচ্ছে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে, যা নতুন অর্থ সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতির আধার।

দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ বাড়াচ্ছে সরকার। বিদেশি ঋণের অভাব আছে। ‘মুডিস’ রেটিংয়ে অবনমনের ফলে বিদেশিরা ঋণ দিতে ততটা আগ্রহী নয়, এমনকি ব্যাংকের ঋণপত্র গ্রহণেও তারা অপারগতা দেখাচ্ছে। অতএব করণীয় কী? অবশ্যই করণীয় হচ্ছে খরচ কমানো-স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে। ডলার খরচ কমানো। ওভার ইনভয়েসিং চলছেই, আন্ডার ইনভয়েসিংও। এসব বন্ধ করে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো দরকার। সরকারি খরচের গুণগত দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। এ সম্পর্কে বাজেটে কখনো কিছু বলা হয় না। পরিশেষে বলতে চাই, ঋণনির্ভর বাজেট করার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম