তমসা আসিছে ঘিরে সময় যে বয়ে যায়
ড. হাসনান আহমেদ
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
গত ৮ এপ্রিল ‘দৈনিক ইনকিলাব’ পত্রিকায় ‘আলেমদের ঐক্য সময়ের অনিবার্য দাবি’ শিরোনামে তথ্যসমৃদ্ধ ও সময়োপযোগী নিবন্ধের ভিত্তিতে ২৮ এপ্রিল যুগান্তরের উপসম্পাদকীয়তে প্রকাশিত ‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?’ শিরোনামে আমার কিছু কথা তুলে ধরেছিলাম। অনেক কথার মধ্যে যা বলেছিলাম তা মোটামুটি এ রকম : ইসলামি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল ও গ্রুপের সংখ্যা অগণিত। বিশ্বব্যাপী বর্তমান বিজ্ঞান ও ব্যবসাভিত্তিক জীবনব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ধারাকে বুঝতে হবে, পরিবর্তিত অবস্থাকে মনেপ্রাণে মেনে নিয়ে করণীয় করতে হবে।
মুসলমানদের তিনটি কাজ করতেই হবে : ১. জীবনমুখী শিক্ষা; ২. কর্মমুখী শিক্ষা; ও ৩. মুসলমানিত্বের বৈশিষ্ট্য-সঞ্চারক শিক্ষা। বিভিন্ন ইসলামি দল বা গ্রপের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সুচিন্তিত ও অভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে, যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে সবাই নিজ নিজ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। তবে যুগোপযোগী শিক্ষা না থাকলে লক্ষ্য ও কর্মপদ্ধতিও নির্ধারণ সম্ভব নয়। আজকের এ নিবন্ধে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে আরও কিছু কথা বলব। কোনো চলমান কলাম লিখলে হয়তো পূর্বাপর এত যোগসূত্র উল্লেখ করতে হতো না।
মাদ্রাসা শিক্ষায় দুটো ভাগ-আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা; এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। উভয় শিক্ষাব্যবস্থা শহরে ও গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে গেছে। এসব মাদ্রাসায়ও অনেক মেধাবী ও সম্ভাবনাময় ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। এদেশের প্রায় সব গ্রামে মসজিদকে কেন্দ্র করে অন্তত মক্তব ও কওমি শিক্ষা বিস্তার লাভ করেছে। সাধারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার মান ক্রমেই নিু থেকে নিুতর হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশ বেকার কিংবা ছদ্মবেকার। ভুক্তভোগী ছাড়া এ অবস্থার ভোগান্তি বলে অনেককেই বোঝানো যাবে না। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার মান সে তুলনায় বরং আরও খারাপ। আরবি ও ইসলামি শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিলেও সে-শিক্ষার মানসহ জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষার মানের গতি নিুমুখী। জীবন পরিচালনা করতে শুধু আরবি ও ইসলামের ইতিহাস শিখব, এটাকে ভাবাবেগ তাড়িত শিক্ষাভাবনা ছাড়া গঠনমূলক ভাবনা বলা যায় না। অথচ আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যবসা ও বিজ্ঞান শাখায় লেখাপড়ার ব্যবস্থা আছে, জানি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা আরবি, ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে লেখাপড়া করেই জীবন পার করে দিচ্ছে। লেখাপড়ার ব্যবস্থা থাকা, আর লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এক কথা নয়।
এদেশের যেসব ছাত্রছাত্রী মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে, তাদের দিয়েই অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার কারণে মাদ্রাসায়ই ছাত্রছাত্রীদের মনমতো করে গড়ে তোলা আরও সহজ হয়ে গেছে। সাধারণ স্কুল-কলেজের সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতা করে মাদ্রাসা শিক্ষায় ভালো মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যেতে পারে। প্রয়োজন পরিবেশ উন্নত করা, মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসা। এটা করতে পারলে সাধারণ স্কুল-কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী মাদ্রাসা শিক্ষায় স্বেচ্ছায় ভর্তি হতো। আমরা নিজেরা উদ্যোগী হই না, সবকিছুর দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নীরবে বসে থাকি। এটা ঠিক নয়। প্রয়োজন শিক্ষকদের সুস্থ চিন্তাচেতনা জাগ্রত হওয়া এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রশাসনের আগ্রহ ও গতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। মাদ্রাসা শিক্ষার গঠনমূলক উন্নয়ন এ মুসলিম ভূখণ্ডের সামগ্রিক উন্নয়ন ও টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের চৈতন্যোদয় হওয়া ও ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার। এটা সময়ের দাবিও বলা যায়। এ বোধশক্তি মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি ফেরে, দেশ ও উম্মার জন্য ততই মঙ্গল।
এদেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা দেওবন্দ মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে শুরু হয়েছিল। তখন হিন্দুত্ববাদী জমিদার ও ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় মুসলমান নিধন ও দমন থেকে ইসলাম ধর্মকে রক্ষা ও টিকে থাকার লক্ষ্যে এ শিক্ষাব্যবস্থা মুসলমানদের জন্য চালু করা হয়েছিল। সে সময়ে এটার প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা ছিল। তখনকার সমাজব্যবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা, জীবনব্যবস্থা, পেশা ও কর্ম বর্তমান সময়ের মতো এত উন্নত, শিল্পপণ্যসমৃদ্ধ, গতিশীল ও টেকনোলজিনির্ভর ছিল না। কওমি শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকদের এসব বাস্তবতাকে সামনে রেখে যুগোপযোগী করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হতো। এ কাজে তারা পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে ভুগছে লাখ লাখ অবুঝ শিশু-কিশোর। তারা শিশু-কিশোরদের জীবন ও অমিয় জীবনীশক্তিকে ধ্বংস করে ছাড়ছেন। তাদের শিক্ষার মান বেজায় খারাপ। জীবনমুখী শিক্ষা নেই, কর্মমুখী শিক্ষাও নেই, সময়ের সঙ্গে শিক্ষার গতিশীলতা নেই। প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে চলছি, কাজ করছি, দেখছি ও ভাবছি। তারা নিজেরা যতো আত্মপ্রসাদেই উদ্বেলিত হোক, মাতৃভাষা বাংলাটাও ভালোমতো লিখতে ও বলতে পারেন না, সে ব্যবস্থাও তাদের নেই। এক পৃষ্ঠা বাংলা পড়ে মর্মোদ্ধার করার সাধ্য তাদের নেই। তাহলে কুরআন-হাদিস ও ইসলামি জীবনদর্শন পড়ে ভাবা, মর্মোদ্ধার করা ও মানুষের কাছে তুলে ধরা কতটুকু সম্ভব? এর পরিণতি ও ভোগান্তি কিন্তু আমাদের সমাজে নিত্য বিদ্যমান। এসব কথা লিখলেই তো আমাদের সম্মানিত দিনি ভাইয়েরা অসন্তুষ্ট হন। তর্কে জড়িয়ে যান। আমাদের এড়িয়ে চলেন, কখনো কটু কথা বলেন। কিন্তু নিজেরা একবার ভেবে দেখেন না, পথে আসেন না। তারা ইসলামি পোশাক পরে দেহকে সাজান, কিন্তু জীবনকে সাজান না। এসব দেখা ও ভাবার মতো লোক এদেশে কজন আছেন? আমি তো দেখছি কওমি মাদ্রাসা থেকে পাশ করে অধিকাংশ আদম সন্তানকে মসজিদ-মাদ্রাসার খেদমতে হাজির হতে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের পিয়ন অথবা অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে। এরা তো আজীবন শোষিতই হবে! আমার মতো কিছু মাস্টার সাহেব পত্রিকার পাতায় লিখে এদের রক্ষা করব কেমন করে! এরা প্রকৃতির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে কেমন করে? সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারলে সমাধান আসবে কোত্থেকে? তাদের বিষয়গুলোর বাস্তবতা বেশি বুঝতে হবে। আমি বলতে চাই, কুরআনে উল্লিখিত সব বিষয়, যেমন-ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, আইন, দর্শন, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, হিসাববিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, ব্যবসায় ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানদের জ্ঞানার্জন করতে হবে; উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। দেশ ও শিল্প-ব্যবসা পরিচালনায় সব পদে যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করার দক্ষতা আনতে হবে। আমি দ্বীনি শিক্ষা বলতে এসব (অল ইনক্লুসিভ) শিক্ষাকেই বুঝি। জীবনের বাস্তবতা না বুঝলে অন্য কোনো শোষক গোষ্ঠীর কাছে শোষিত হতে হতে ক্রমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে। এটা প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেই হবে। কোনো বিষয়ের সংকীর্ণ ব্যাখ্যা করে হাত গুটিয়ে ঘরের কোণে অলস মেধা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না; খোলস ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। অকর্মণ্যতা ও কূপমণ্ডূকতা, দলবাজি শপথ নিয়ে পরিত্যাগ করতে হবে। এরা যে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে, এটা তাদের বুঝতেই হবে। যুগোপযোগী জীবনযাপন নির্বাহ করতে হবে, চলতি বড় বড় পেশাকে দুনিয়াদারি পরিচালনার জন্য বেছে নিতে হবে, কেউবা টেকনিক্যাল পেশায় যাবে। প্রকৃত মুসলমানদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্প প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। গরিব, অসহায় মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে হবে; তাদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার বন্দোবস্ত করতে হবে। নির্দেশনা মোতাবেক দুনিয়াদারি কাজের মাধ্যমে ইবাদতের পথকে বেছে নিতে হবে। অশিক্ষা, অকর্মণ্যতা, ধর্মব্যবসা ও বিভেদ মুসলমানদের চরম ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে; মুসলমান জাতি ক্রমেই পিছে হাঁটছে-এ বোধ আমাদের অন্তরে জন্মাতে হবে। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় বাস করে পুরোনো জীবনব্যবস্থা মনের মধ্যে পুষে রাখা যাবে না। মোবাইল ফোন, গুগল নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার চালাতে ভালো লাগে, তৈরি করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আগে মনমানসিকতা ও শিক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অশিক্ষা ও আর্থিক দীনতার কারণে আমাদের প্রতিবেশী দেশের রোহিঙ্গাদের করুণ পরিণতির কথা গভীরভাবে ভাবতে হবে।
মাদ্রাসায় লেখাপড়া শিখে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন পদে সুনামের সঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রথম সারিতে থাকতে হবে। যে কোনো মূল্যে শিক্ষার গুণগত মান অর্জন করতে হবে। বিজ্ঞানী হতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, কৃষিবিদ, বিজ্ঞান-গবেষক হতে হবে। টেকনিক্যাল শিক্ষায় পারদর্শী হতে হবে। ব্যবসায় ও শিল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে। শিল্পোদ্যোক্তা হয়ে দেশে ব্যবসা ও শিল্প স্থাপন করতে হবে। ইসলামি নীতিমালা বজায় রেখে জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবসা ও শিল্পপণ্যের ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। সমাজ-উন্নয়নমূলক ও দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শিক্ষার মান অন্য যে কোনো দেশের শিক্ষিত লোকের সঙ্গে তুলনীয় হতে হবে। শুধু ছয়-সাতটা করে নোট মুখস্থের মাধমে সার্টিফিকেটসর্বস্ব অনার্স-মাস্টার্স পাশ করলে চলবে না।
একটা বিষয় ধন্যবাদযোগ্য যে, মাদ্রাসায় শিক্ষারত ছাত্রছাত্রীরা বর্তমান তথাকথিত আধুনিকতায় গা ভাসিয়ে দেয়নি। শিক্ষকদের অবাধ্যও হয় না; নেশাসক্তও নয়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফিতে আশক্তির সংখ্যা নেই বললেই চলে। কওমি শিক্ষকদের সার্বক্ষণিক তদারকি, ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষার কারণেই নিশ্চয় এটা সম্ভব হয়েছে। এদের ব্যবসা-বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা দিয়ে অনেক বড় ও প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ রয়ে গেছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষায় শুধু কুরআন ও হাদিস পড়িয়ে যেভাবে কোমলমতি প্রতিভাবান শিশু-কিশোরদের খণ্ডিত শিক্ষায় শিক্ষিত করা হচ্ছে; তাদের বেকার, অনুৎপাদনশীল, ছদ্মবেকার করে ফেলা হচ্ছে; অন্য যে কোনো দেশ হলে সেদেশের সরকার এটা আইন করে বিষয়টা সরাসরি তদারকি করত। পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পাওয়া তাদের শিশু অধিকার। অবুঝ শিশুদের প্রতি এহেন প্রতিকূল-ব্যবস্থা ও আচরণ এক ধরনের অপরাধ। আমাদের দেশে যে সরকারই যখন আসে, মৌলবি-মাওলানাদের রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করে। মাদ্রাসার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করে না। আমি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত অগণিত বেকার ও ছদ্মবেকারের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। ছাত্রাবস্থায় তারা অবুঝ ছিল। তারা তাদের এ পরিণতির জন্য বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোষারোপ করে। আমি অনেক দেশের খবর রাখি। এ উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম দেশে এ ধরনের খণ্ডিত শিক্ষাব্যবস্থা নেই। আমাদের বক্তব্য হলো, প্রতিটি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর শিক্ষার ভিত এমনভাবে গড়তে হবে যেন প্রত্যেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে তার মনমতো কোর্স বেছে নিয়ে যে কোনো পেশায় উচ্চশিক্ষা বা টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। প্রতিটি পর্যায়ে সাধারণ স্কুল-কলেজ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যে কোনো শাখার পেশায় যেতে পারে। প্রতিযোগিতা হবে চলমান বিশ্বব্যবস্থায় অন্য যে কোনো দেশের সমমান শিক্ষার্থীর সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রতিযোগিতা। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোয় আরবিতে কথা বলতে পারা ও টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া লোকের খুব চাহিদা। আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলোয় কুরআন-হাদিস শেখানো হয়; কিন্তু শিক্ষার্থীরা আরবিতে কথা বলতে পারে না। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন না থাকায় টেকনিক্যাল শিক্ষাও নেই। ফলে এদেশের মাদ্রাসা পাশ করে বিদেশে গিয়ে উটের রাখাল অথবা ড্রেন ক্লিনার অথবা নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। আমাদের বোধশক্তির বড়ই অভাব।
আমার মতো নগণ্য এ শিক্ষকের কথার কীইবা এমন মূল্য দেয় এদেশ। পত্রিকার পাতায় একদিন লিখি, তো পরদিন পত্রিকার সেই পৃষ্ঠাগুলো ঝাল-মুড়ি বিক্রির কাজে ব্যবহৃত হয়। আইডিয়াগুলো বাতাসে মিশে উড়ে চলে যায়। যাদের শোনার কথা তারা ‘কানে দিয়েছেন তুলো, পিঠে বেঁধেছেন কুলো’-এটাই বড় আক্ষেপ। লাঠিয়াল বাহিনী ও চাটুকারই সর্বেসর্বা। সময়, জীবন, দেশ ও সভ্যতা সামনের দিকে দুর্নিবার বেগে হু-হু করে ধেয়ে চলেছে। বড় বড় কথা বলে, অনুৎপাদনশীল দুষ্কর্ম করে, মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে জীবনটা পার করে দেওয়ার জন্য এদেশই যথেষ্ট।
ড. হাসনান আহমেদ : অধ্যাপক, ইউআইইউ; গবেষক ও শিক্ষাবিদ; প্রেসিডেন্ট, জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ