জলাশয়গুলো রক্ষা করতে হবে
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পৃথিবী নামক এ গ্রহে উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত প্রায় প্রতিটি দেশই পরিবেশ বিপর্যয়ে প্রবল আক্রান্ত। ঘূর্ণিঝড়-বন্যা-খরা-জলোচ্ছ্বাস-দাবানলসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রধান কারণ হচ্ছে পরিবেশ দূষণের নির্দয় প্রতিক্রিয়া।
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অবাধ বৃক্ষরাজি নিধন, পাহাড়-পর্বত ধ্বংস, বেদখল প্রক্রিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা পুরো বিশ্বের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করছে। অধিক জনঅধ্যুষিত বাংলাদেশ অনাধুনিক নগরায়ণ বা সীমিত শিল্পায়নের প্রভাবে চরমভাবে বিপর্যস্ত।
ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানে ‘বদ্বীপ’ হওয়ায় প্রতিবছর প্রায় অর্ধেক সময়ে ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি সমস্যা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির অর্জনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে চলছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে সাময়িক ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা হলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তেমন দৃশ্যমান নয়।
পক্ষান্তরে ভূমি-জলাশয়-নদী-সমুদ্রের অংশ দখল এবং স্থাপনা নির্মাণ সামরিক শাসনামল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ক্ষমতাসীন দলের হাতেগোনা কতিপয় দুষ্টচক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটলেও তাদের পর্যুদস্ত করে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর চিত্র পরিলক্ষিত নয়।
ছোটখাটো ডোবা-পুকুর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অতি প্রয়োজনে কিছুটা লোপাট হলেও বড় বড় দিঘি-জলাশয়ও ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পবিত্র সংবিধানে বিভিন্ন বিধিবদ্ধ আইন লিপিবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, স্বঘোষিত সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যক্তি এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত দুর্বল।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শহর-নগর-প্রান্তিক জনপদে চিহ্নিত স্বল্পসংখ্যক অপরাধীর বিরুদ্ধে সচেতন মহল কিছুটা সোচ্চার হলেও শারীরিক নির্যাতন, প্রাণনাশ, ঘুসের বিনিময়ে নানাভাবে আইনি জটিলতায় ফাঁসিয়ে দেওয়া-এসবের ভয়ে প্রায় ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমিকা পালনের বিপরীতে সমাজে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের ইতিবাচক উদ্যোগগুলো বরাবরই পরাস্ত-পরাজিত হয়।
সাম্প্রতিককালে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শতবর্ষী কবর-সমাধিস্থল-শ্মশানের জায়গা দখল ও ক্রয়-বিক্রয়ে সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য জনগণের মধ্যে যারপরনাই আতঙ্ক তৈরি করছে। মৌরুসী-পৈতৃক সূত্রেপ্রাপ্ত সামান্য বাড়িভিটে রক্ষা করা নিয়েও তারা চরম ভীতসন্ত্রস্ত। অসহায়-নিরীহ-নিঃস্ব, সম্মান ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের কাতরতার করুণ আর্তনাদের দীর্ঘশ্বাসে গণপরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে।
সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশ দপ্তর, ইউনিয়ন, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, সিডিএ বা রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক অঞ্চলে বিদ্যমান থাকলেও জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুটিকয়েক অনৈতিক কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড অপরাধীদের পক্ষে গিয়ে বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে তোলে-এমন দৃষ্টান্তও কম নয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংক্রমণ ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ধরনে পরিবর্তন আসবে, তাপপ্রবাহে মৃতের সংখ্যা বাড়বে, জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়-কালবৈশাখী ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে সরাসরি জখমের সংখ্যাও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ।
শ্বাসকষ্ট, হিটস্ট্রোক বা গরমজনিত মৃত্যু কিংবা তীব্র ঠান্ডাজনিত মৃত্যু ইত্যাদি এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-এর গবেষণামতে, জলবায়ু পরিবর্তনে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে তা ডায়রিয়ার জীবাণুর বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে এবং ডায়রিয়ায় বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে।
অ্যাকশন এইডের পক্ষ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র থেকে ভূ-ভাগের অনেক ভেতর পর্যন্ত লোনাপানি ঢুকে পড়ায় লোকজনকে পানি ও খাবারের সঙ্গে তুলনামূলক বেশি পরিমাণ লবণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে ওই এলাকার মানুষের উচ্চরক্তচাপে ভোগার আশঙ্কা বাড়ছে।
জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের পানিসম্পদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ সমুদ্রতীরের বেশ কয়েকটি দেশে ভবিষ্যতে মিঠাপানির তীব্র সংকট দেখা দেবে। কালক্রমে এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। ইতোমধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকায় সুপেয় পানির অভাব প্রতীয়মান হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এ প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। শীতলতা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পানির ব্যবহারে অদূর ভবিষ্যতে পানিসম্পদের ওপর চাপ বাড়বে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৯ সালে দেশে নগরের জনসংখ্যা হবে ৮১ দশমিক ৪ মিলিয়ন। বাংলাদেশ হবে অন্যতম নগররাষ্ট্র। তাই নগরের উষ্ণতাকে আমলে না নিলে দেশের বড় নগরগুলোর সমস্যা দিন দিন জটিল হয়ে বাসযোগ্যতা হারাতে পারে। মৃত্তিকাসম্পদ ও গবেষণা কেন্দ্রের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীর পানি লোনা হতে থাকে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে তা পুরোপুরি লোনা হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও সারা দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে প্রতিনিয়ত অর্থলিপ্সু-ঘৃণ্য সিন্ডিকেট কারসাজিতে বছরের পর বছর ধরে নদী-নালা-খাল-বিল-হাওড়-দিঘি-পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয় ভরাটের মহোৎসব চলছে।
১৬ জুলাই ২০২১ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাভূমির স্থানিক ও কালিক পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণা জরিপে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে সরেজমিন মোট ১ হাজার ২৪৯টি জলাশয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে ধারণ করা চিত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় চিহ্নিত মোট ১ হাজার ৩৫২টি জলাশয়কে ভিত্তি করে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য বিভাগের জরিপে ১৯ হাজার ২৫০টি জলাশয় পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৫২৩টি। উল্লেখ্য, জরিপগুলোর ফলাফলে এটি স্পষ্ট যে, কালক্রমে বিপুলসংখ্যক জলাশয় বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনায় দেশব্যাপী একই চিত্র ফুটে উঠেছে।
দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে তথা পরিবেশ বিপর্যয় বিবেচনায় নদ-নদী, জলাশয় রক্ষায় নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগসহ এ ব্যাপারে সরকারের বহু আইন ও দিকনির্দেশনা থাকার পরও অসুস্থ প্রতিযোগিতা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞা-উদাসীনতা-নীরবতায় দেশের জলাশয়গুলোর দখল-ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। অবৈধ এসব ভরাট-দখলের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী ও এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় বারবার আপত্তি-অভিযোগ করেও এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপগুলো দখলদারদের দৌরাত্ম্যে নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ২০১০ সালে সংশোধিত আইনমতে, যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া ২০০০ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্য সচিব স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালেও খাল-বিল, পুকুর, নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়/জলাধার বন্ধ করা যাবে না।
আমাদের সবার জানা, দেশে জায়গা-জমির দাম ও চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একশ্রেণির মানুষ ভূমির প্রতি সীমাহীন লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে সরকারি খাসজমি থেকে শুরু করে ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গা-জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নির্দ্বিধায় দখল করে নিচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলাশয়ের অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অবৈধ দখল ও ভরাটে পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাশয় ভরাটের ফলে দেশে বৃষ্টির পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় অতিবৃষ্টিতে বন্যার প্রবণতা বহুলাংশে বেড়ে গেছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে এবারের সিলেটের বন্যার ভয়াবহতার চিত্র অবলোকনই যথেষ্ট। এ ছাড়া দেশে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা, তাপদাহ, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, মাটির আর্দ্রতা হ্রাস ও পানি স্বল্পতার মতো নানামুখী সংকট দেখা দেওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩০ বছরে দেশের বড় বড় শহর-নগরে প্রতিবেশব্যবস্থা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে পুকুর-দিঘি ও অন্যান্য জলাশয় এবং সবুজ এলাকা কমে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। ফলে শহরগুলোতে তাপমাত্রা বাড়ছে এবং বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে, যা দেশবাসীকে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিপতিত করেছে। বিদ্যমান জলাশয় সংরক্ষণের পাশাপাশি নতুন করে পুকুর-দিঘি খননের উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য বিপর্যয়মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে বলেও তারা মতামত ব্যক্ত করেন।
এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য, যে কোনো নগর-শহর-অঞ্চলের মানুষের জন্য পুকুর-দিঘি বা অন্যান্য জলাশয় অনেকটা আশীর্বাদ হিসাবে কাজ করে। এসব জলাশয় নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রাকৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত দিকগুলো শিশুর বেড়ে ওঠা, মানুষের জীবনমান সমুন্নত রাখাসহ বিভিন্ন বিবেচনায় আলাদা গুরুত্ব বহন করে। পুকুরের পানি অনেক ধরনের পরিবেশবান্ধব গাছপালা ও জীবজন্তুর জীবনপ্রণালিতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নিনির্বাপণের অতিপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ পানির সংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পুকুর-দিঘির মতো জলাশয়ের অনন্য অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভূগর্ভে পানি ঢোকার অন্যতম প্রাকৃতিক পথও হচ্ছে পুকুর-দিঘি বা এ ধরনের জলাশয়গুলো। এ পথের সচলতায় পানির স্তর একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে থেকে সব ধরনের প্রাণিকুলকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। অধিকন্তু অনেক এলাকায় জলাশয়গুলো পানি ধরে রাখার এবং পানি সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসাবে অতিশয় কার্যকর। ফলস্বরূপ বৃষ্টির সময় বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কামুক্তসহ নানারকম ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়। সার্বিক বিবেচনায় দেশের জনগণের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বার্থে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জলাশয়ের অবৈধ দখল-ভরাটের বিরুদ্ধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের জোরালো দাবি।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়