Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর

দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে

Icon

এম হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিং করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরকে আমি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি। এখন বিশ্ববাসী একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে-স্বাভাবিকভাবে আমাদেরও নানা ধরনের বাড়তি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হচ্ছে। করোনার আঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সংকটের ঝাঁকুনি লেগেছে সব দেশেই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এ ঝাঁকুনির মাত্রাটা অনেক বেশি। যুদ্ধের প্রভাবে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে; জ্বালানি সরবরাহেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এদিকে সম্প্রতি আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহে বহুদিন ধরেই সংকট চলমান রয়েছে। আমরা লক্ষ করছি, মূল্যস্ফীতি বিশ্ববাসীর কাছে বড় এক চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরকে আমি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এশিয়ার এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি মনোযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া-সবাই এ অঞ্চলের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়েছে। ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আমাদের দেশের প্রতিনিধিদের অর্থনীতিবিষয়ক আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই জিএসপি প্রসঙ্গ আসবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক সাড়া মিলবে। যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বাজার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের দেশের গার্মেন্ট রপ্তানি বাড়ছে। কাজেই জিএসপি সুবিধা পেলে আমরা রপ্তানি খাতে আরও বাড়তি সুবিধা পাব। আমার বিশ্বাস সেই সুবিধাটুকু আমরা শিগগিরই পাব। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ত বাজার বিদ্যমান সেহেতু আমরা সে বাজার থেকে কীভাবে উপকৃত হতে পারি সে বিষয়েও আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। গত দু-তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। আশার কথা, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মনোযোগ আরও বাড়ানো দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি আধাদক্ষ। তাদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে তা আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে। সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা দীর্ঘমেয়াদে থাকার সুযোগ রয়েছে। কাজেই সে দেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমরা দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হতে পারব। এ খাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের উচিত সব সংস্থা ও রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য অভ্যন্তরীণভাবে এবং বৈশ্বিকভাবে বাড়তি মনোযোগ দিয়েছে, যা প্রশংসনীয়। বাইডেন প্রশাসন বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মোকাবিলার জন্যও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, সেহেতু আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে গেলে আশা করা যায় ইতিবাচক ফল পাব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে দেশবাসীই ক্ষতিগ্রস্ত। এ ক্ষতি মোকাবিলায় জলবায়ুসহিষ্ণু প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা আমরা চাইতে পারি। বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়ে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। আমাদের উচিত সেই তহবিল থেকে অনুদান পাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। যথোপযুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে আশা করা যায় এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান মিলবে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আমাদের দেশের এসব সংকটের বিষয়ে মোটামুটি অবগত; তাদের সহযোগিতায় উপকূলীয় অঞ্চলে এ বিষয়ক কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা জলবায়ুসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এখন বিশেষভাবে চিন্তিত। আমাদের এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করব তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও বড় ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমরা তাদের কাছে সঠিকভাবে বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারলে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সাড়া মিলবে। আমরা লক্ষ করছি, চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাপান, ভারত এ অঞ্চলের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আমাদের। আমরা যেহেতু বর্ধিষ্ণু রপ্তানিকারক দেশ, আমাদের সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। আমাদের বাস্তব পরিস্থিতি যদি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইইউ, ভারত- সবার সামনে যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপন করতে পারি, আমার ধারণা তারা আমাদের অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারবে। আমরা যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সামনে রেখে আমাদের কূটনীতি সাজাচ্ছি এটাও তারা উপলব্ধি করতে পারছে। সেটা তাদের সামনে আরও স্পষ্ট করার জন্য দরকার দক্ষ কূটনীতি। পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। কোনো ধরনের সামরিক প্রতিযোগিতায় না থেকেও আমরা যাতে বিশ্বের বড় বড় শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি, এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা অব্যাহত রাখবেন, এটাই আমার বিশ্বাস। সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে যাতে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি সেজন্য দক্ষতার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

এম হুমায়ুন কবির : যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম