Logo
Logo
×

কাল নিরবধি

ফিরে দেখা ২০২৩

‘তালেবানগ্রহণে’ ডুবল নারীশিক্ষার আলো

Icon

হৃদিতা ইফরাত

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাধীন উঠান থেকে হঠাৎ পরাধীনতার শেকলে বন্দি হয়ে পড়েছে আফগান নারীদের জীবন। দফায় দফায় ফতোয়া আর বিধি-নিষেধের বেড়াজালে থমকে গেছে ভবিষ্যৎ। নিজের কোনো মতামত নেই, অধিকার নেই, স্বপ্নের কোনো দাম নেই-পালাতে চাইলেও যাওয়ার জায়গা নেই! তীব্র হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তায় কঠিন সময় পার করছে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের নিরূপায় নারীরা। ক্ষমতা দখলের পরপরই একের পর এক উদ্ভট নিয়মে ঘরকুনো করে ফেলছে। শিক্ষা-দীক্ষায়ই নয় শুধু, কেড়ে নিয়েছে আনন্দ-বিনোদনের অধিকারও। ভূখণ্ডের সব ধরনের পাবলিক প্লেসেই বন্ধ করা হয়েছে প্রবেশ। মুছে ফেলা হয়েছে কর্ম সংস্থানের সুযোগ-যেন নিজ দেশেই পরবাসী। চার দেওয়ালের বদ্ধ ঘরেই দিতে হচ্ছে স্বপ্নের জলাঞ্জলি। একেবারেই ‘মেরুদণ্ডহীন’ করে ফেলছে দেশের এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হচ্ছে। পড়াশোনার খাতিরে বিদেশ পাড়িতেও দেওয়া হচ্ছে বাধা। আফগান আকাশের এ ‘তালেবানগ্রহণ’ ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। ফলাফল যা হওয়ার তাই-মাঝ আকাশ থেকে ঢলতে ঢলতে দিগন্তে হেলে পড়ছে নারী স্বাধীনতার সূর্য। চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে গেছে নারীশিক্ষার আলো-উষার আশা আর নেই! শুরুটা ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে হলেও আসল সর্বনাশটা হলো ২০২৩ সালেই। গার্ডিয়ান, আলজাজিরা, বিবিসি, সিএনএন।

পৃথিবীর সব দেশেই জঙ্গি আছে (কম-বেশি)। কিন্তু জঙ্গিদের একটা দেশ আছে-আফগানিস্তান। তালেবান শাসিত দেশ। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান। ক্ষমতা হাতে আসার পর থেকেই দেশটির নারী স্বাধীনতার ওপর অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ক্ষমতাসীন সরকার। মন-মর্জিমতো নতুন নতুন আইনে বেঁধে দেয় নারীদের জীবন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে নারীদের উচ্চশিক্ষা পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা হয়। শুধু ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্তই নারীদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে চাইলে নারীরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে পারবে। ২৪ ডিসেম্বর তালেবান কর্মকর্তা ঘোষণা করেছেন-ধর্মীয় স্কুলগুলো যা আগে শুধু ছেলেদের জন্য ছিল, তা এখন সব বয়সের আফগান নারীদের জন্য উন্মুক্ত। কর্মকর্তা মনসর আহমেদ বলেছেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় সব বয়সের নারীরা পড়তে পারবে। তবে এখানেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে শর্ত। সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোতে মেয়েদের অবশ্যই বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপযুক্ত ক্লাসে পড়তে হবে। যদি তার বয়স ক্লাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় এবং ক্লাসের তুলনায় (বয়স) খুব বেশি হয়, তাহলে তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোতে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। প্রাপ্তবয়স্ক নারীসহ সব বয়সের নারীরাই পড়তে পারবে।

বছরজুড়েই আফগান মেয়েদের এমন করূণ পরিস্থিতিতে বেশ চিন্তিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তালেবানদের এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই আওয়াজ তুলেছেন অনেকে। দেশের পাশাপাশি বিদেশে পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞায়ও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে তালেবান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পাওয়ার পরও ১০০ জন নারীকে দুবাইয়ে ভ্রমণে বাধা দেওয়া হয়। এমন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, ‘এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তটি শিক্ষার অধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতার একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অব্যাহত লিঙ্গ নিপীড়ন প্রদর্শন করে। অ্যামনেস্টির দাবি, তালেবান ডি-ফ্যাক্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে এবং এই নারী শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ ও পড়াশোনা করার অনুমতি দিতে হবে। শিখরে ওঠার স্বপ্ন হারিয়ে ডুকরে কাঁদছেন নারীরাও। ২০২৩ সালের ‘অভিশপ্ত’ ক্যালেন্ডারের প্রতি পাতায়ই মিশে আছে সেই দীর্ঘশ্বাস। হাজার হাজার নারীর চাপা আর্তনাদ!

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম