
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
নতুন করে ১৪টি দেশের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত লাখ লাখ ক্ষুধার্ত ও অনাহারী মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, ‘যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তবে চরম ক্ষুধা ও অনাহারের মুখোমুখি লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি মৃত্যুদণ্ডের সামিল।’ মঙ্গলবার ইউরোনিউজের প্রতিবেদনে উঠে আসে এই তথ্য।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ইতোমধ্যেই চলতি বছরের জন্য ৪০ শতাংশ তহবিল হ্রাসের সঙ্গে লড়াই করছে। সোমবার সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন করে ১৪টি দেশের জন্য মার্কিন সহায়তা বন্ধের বিষয়ে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে কোন কোন দেশে এ সহায়তা বন্ধ করা হচ্ছে তা উল্লেখ করেনি সংস্থাটি। ডব্লিউএফপিই জাতিসংঘের একমাত্র সংস্থা নয়, যা মার্কিন তহবিল হ্রাসের কারণে বিপাকে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি মার্কিন তহবিল বন্ধ করে দেন। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য প্রচারের জন্য নিবেদিত একটি সংস্থা, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলকে (ইউএনপিএফ)- ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা দুটি কর্মসূচি বন্ধ করছে। যার মধ্যে একটি কর্মসূচি ছিল আফগানিস্তানের জন্য, অন্যটি সিরিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু যে কোনো সময় পালটে যেতে পারে এই চিত্র। সম্প্রতি বৈদেশিক সহায়তাসংক্রান্ত বাজেটে কাটছাঁটের ফলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন মৃত্যুহার বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন ও অন্যান্য দাতা দেশগুলোও সহায়তাসংক্রান্ত বাজেট কমানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
রয়টার্স। ওই প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্দিষ্ট কোনো সহায়তাসংক্রান্ত বাজেটে কাটছাঁটের কথা উল্লেখ করেনি। তবে মার্কিন সরকারের বিদেশি সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে তহবিল বন্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচওর ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের সহকারী মহাপরিচালক ড. ব্রুস অ্যালওয়ার্ড বলেছেন, ‘প্রধান বার্তাগুলোর একটি হলো, তহবিলে কাটছাঁটের বিষয়টি কেবল মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের অগ্রগতিকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না, বরং এ ক্ষেত্রে আমরাও পিছিয়ে পড়তে পারি।’ তিনি আরও বলেছেন, এই কাটছাঁটের কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর ‘মহামারির মতো প্রভাব’ পড়েছে। আরও কাঠামোগত ও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এই কাটছাঁটের ফলে অনেক দেশে মাতৃ, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলো ইতিমধ্যেই ব্যাহত হচ্ছে। এসব খাতে কর্মীর সংখ্যা কমছে, সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং চিকিৎসার সরবরাহশৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ম্যালেরিয়া এবং এইচআইভি চিকিৎসার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই কাটছাঁট মাতৃস্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সহায়তাসংক্রান্ত বাজেটে কাটছাঁট করার আগেও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল কিছু দেশ। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ২০১৬ সাল থেকে ধীর হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও ২০২৩ সালে প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা নিয়ে প্রতি দুই মিনিটে প্রায় একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। সে বছর এমন মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার জনে পৌঁছেছিল।