Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

যুদ্ধের হাজারতম দিনে উত্তেজনা তুঙ্গে

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রে রাশিয়ায় হামলা

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন পুতিনের * হার মানতে রাজি নন জেলেনস্কি * তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা বিশ্লেষক-ট্রাম্প সমর্থকদের

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাল ইউক্রেন। মঙ্গলবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০তম দিনে এই হামলা চালানো হলো। রাশিয়ার দাবি- মস্কোর ব্রায়ানস্ক সীমান্ত অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনায় দূরপাল্লার ছয়টি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। কিন্তু এদের মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং একটি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এ হামলায় রাশিয়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এএফপি।

এর আগে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করলে কিয়েভকে কড়া হুমকি দেয় রাশিয়া। মঙ্গলবার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘ইউক্রেনের বাহিনী যদি পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করে রুশ ফেডারেশনের ওপর হামলা চালায়, তাহলে তা পারমাণবিক প্রত্যাঘাতের দিকে যাবে। এ প্রেক্ষাপটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা নবায়ন ও অনুমোদন করেছেন।’ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ বলেন, রাশিয়ার নতুন পারমাণবিক নীতিমালা দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে গভীর বিশ্লেষণ দাবি করে। রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন ব্যবহার করে কিনা, সেদিকে গভীর নজর রাখছে।

এদিকে, ইউক্রেনের এই হামলার ফলে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়ে যেতে পারে-আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে রুশ আইনপ্রণেতা মারিয়া বুটিনা বলেন, বাইডেন প্রশাসন যদি ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়, তাহলে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি’ তৈরি হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দখলদারদের কাছে ইউক্রেন কখনো আত্মসমর্পণ করবে না এবং আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের জন্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সাজা দেওয়া হবে। যুদ্ধের এক হাজারতম দিনে মঙ্গলবার রাশিয়ার আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করেছে ইউক্রেন। এর আগে সোমবার রাতে ইউক্রেইনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সামি অঞ্চলে ড্রোন হামলায় এক শিশুসহ আটজন নিহত হয় এবং রোববার আলাদা আরেকটি হামলায় ৮৯ জন নিহত হয়। ছোট্ট শহর হালখিভের আবাসিক ভবনে ড্রোন হামলায় দুই শিশুসহ ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের ন্যাশনাল পুলিশ বাহিনী। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক্সে লিখেছেন, ভবনটি ছিল স্থানীয় স্কুলের একটি ডরমিটরি। রাশিয়ার এসব হামলার পরই ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০ দিনে এসে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করলেন। যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক বিশেষ অধিবেশনেও জেলেনস্কির ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। জেলেনস্কি এক্সে লেখেন, ‘রাশিয়া আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। তাদের হামলায় এটিই প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, পুতিন চান যুদ্ধ চলতে থাকুক। তিনি শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নন।’ এদিকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলার অনুমতি দেওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর চটেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্ররা। এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করছেন তারা। ট্রাম্প শিবিরে বাইডেনের এই সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, মার্কিন কংগ্রেসে তার দল রিপাবলিকান পার্টির কট্টরপন্থি সদস্যসহ আরও অনেকে। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসার আগেই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বাধাতে চাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।

বাইডেনের ওই অনুমতির পর ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমার বাবা শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জীবন বাঁচানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স (সামরিক বাহিনী ও অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো) তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।’ বাইডেনের কড়া সমালোচনা করছেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে কাজ করা রিচার্ড গ্রেনেলও। তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে বাইডেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন, তা কেউ ধারণা করেননি। বিষয়টি এমন, তিনি নতুন একটি যুদ্ধ শুরু করেছেন। ফলে সব বদলে গেল। আগের সব হিসাবনিকাশ এখন অকার্যকর।’ অন্যান্য সমালোচনাকারীর মধ্যে রয়েছেন কট্টর ডানপন্থি কংগ্রেস সদস্য মার্জরি টেইলর গ্রিনি এবং ইউটা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মাইক লি। মাইক বলেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করে দিলেন জো বাইডেন। এটা যেন সত্যি না হয়; আসুন, সেই প্রার্থনা করি।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম