হোয়াইট হাউজে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
কী হবে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বড় পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ যুদ্ধসহ নানাবিধ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বিশ্ব। এ ধরনের ‘অনিশ্চয়তার’ ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেগুলোতে পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। ট্রাম্পের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ন্যাটো : নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় নীতিবিষয়ক বহু প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছে মি. ট্রাম্পকে। ট্রাম্পের দাবি তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ সব যুদ্ধের অবসান চান। নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় মি. ট্রাম্পকে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ ‘একদিনে বন্ধ’ করে দিতে পারেন। তবে সেটা কীভাবে করবেন সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি কিছু বলতে চাননি। গত মে মাসে মি. ট্রাম্পের দুই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের লেখা এক গবেষণা পত্রে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা উচিত। তবে কিয়েভের রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রবেশের বিষয়কে শর্তসাপেক্ষে সমর্থন করা উচিত। রাশিয়াকে ‘প্রলুব্ধ’ করতে, পশ্চিমারা ন্যাটোতে ইউক্রেনের বহু কাঙ্ক্ষিত অন্তর্ভুক্তিকে বিলম্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে- এই বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্য : ইউক্রেনের মতোই, মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর অর্থ হলো তিনি গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং লেবাননে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ইতি টানবেন। কিন্তু তা তিনি কীভাবে করবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি বারবার দাবি করেছেন, জো বাইডেনের পরিবর্তে যদি তিনি ক্ষমতায় থাকতেন তাহলে ইরানের (যারা হামাসকে অর্থায়ন করে) ওপর তার (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতির কারণে হামাস ইসরাইল আক্রমণ করত না। অনুমান করা যায় ক্ষমতায় এসে তার দ্বিতীয় মেয়াদেও মি. ট্রাম্প সেই নীতিই মেনে চলার চেষ্টা করবেন যারভিত্তিতে তার প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছিল। ইরানের ওপর বৃহত্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এবং ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছিল। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে ইসরাইলপন্থি নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মি. ট্রাম্পকে ‘ইসরাইলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু যেমনটা ইসরাইল হোয়াইট হাউজে আগে কখনও পায়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে গাজার যুদ্ধবিরতি বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছিল, তা স্থবির অবস্থায় রয়েছে। সেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়া কীভাবে চালু হবে বা আদৌ তা শুরু হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মি. ট্রাম্প।
চীন : চীনের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি সে দেশের বৈদেশিক নীতির কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্ষমতায় থাকাকালীন, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনকে সে দেশের ‘কৌশলগত প্রতিযোগী’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। একইসঙ্গে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ক্ষেত্রে চীনা আমদানির ওপর শুল্কও আরোপ করেছিলেন। এর পালটা পদক্ষেপ হিসাবে আমেরিকান আমদানির ক্ষেত্রে বেইজিংও শুল্ক আরোপ করে। এই ‘দ্বন্দ্বের’ অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বটে কিন্তু ততদিনে কোভিড মহামারির প্রকোপ দেখা দেয়। দুই দেশের সম্পর্কে আরও অবনতি হয় যখন মি ট্রাম্প এই কোভিডকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে আখ্যা দেন। প্রসঙ্গত, বাইডেন প্রশাসন দাবি করে তারা চীন নীতির প্রতি আরও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, অনেক ক্ষেত্রেই চীনা আমদানির ক্ষেত্রে ট্রাম্প-প্রশাসনের শুল্ককেই বজায় রেখেছে তারা। তাছাড়া চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সুরক্ষার বিষয়ে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার নীতি বাইডেন প্রশাসন নিয়েছিল সেখান থেকে মি. ট্রাম্প সরে আসবেন বলেই অনুমান করা হচ্ছে।