Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

বাইশে বোল্ড ইমরান খান

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাইশে বোল্ড ইমরান খান

বাইশ গজের পিচে বহুবার আউট হয়েছেন পাকিস্তানের বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার ইমরান খান। জিতেছেন তার চেয়েও বেশি। উত্থান-পতনে টইটুম্বর এক রঙিন খেলোয়াড়ি জীবন। ঘুরেফিরে রাজনীতির মাঠেও সেই একই কপাল ‘কাপ্তানের’। ২০১৮ সালে ধূমকেতুর মতো উদয় হলেন পাকিস্তানের রাজনীতিতে। প্রধানমন্ত্রী হলেন। ২০২২ সালে ছিটকে পড়লেন। রসিকভক্তরা বলেন, সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের বাউন্সারে খেই হারিয়ে রাজনীতির মাঠে বোল্ড হন ইমরান। ৯ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হন।

২০২২ সালজুড়েই পাকিস্তানের রাজনীতির উঠোন ছিল আগুন-গরম। আর সেই অগ্নিকুণ্ডের মুখ ছিলেন ইমরান খান। আইনসভায় অনাস্থা ভোটে এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির সভাপতি ইমরানকে। বোল্ড আউট হয়ে যান ৭০ বছর বয়সি জনপ্রিয় এই ক্রিকেট তারকা। তবে তাতে হাল ছাড়েননি তিনি। জন্ম দিয়েছেন নানা আলোচনা-সমালোচনার। ক্ষমতা ফিরে পেতে বেশ ধরপাকড় চালিয়েছেন তিনি। করেছেন সরকার পতনের বিভিন্ন কর্মসূচি। দাবি জানান আগাম নির্বাচনেরও। দেশব্যাপী লংমার্চের ডাক দেন। লংমার্চে গুলিবদ্ধ হন। তুবু হাল ছাড়েননি। ভোটের আগে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। বিদেশি ষড়যন্ত্রের কাছে পাকিস্তানকে তিনি হারতে দেবেন না বলেও জানান।

এপ্রিলে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হয়। এতে ৩৪২ আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। যেখানে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি। শুরুতে পার্লামেন্টে মিত্রদের সমর্থন হারান ইমরান। সে কারণে তার পক্ষের আইনপ্রণেতা কমে যায়। মেয়াদ শেষের আগেই প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয় তাকে। ইমরানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানোর ইতিহাস সৃষ্টি করে। সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ইমরানের পদচ্যুতি হলেও এর পেছনে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রভাব ছিল বলেও মনে করা হয়।

দেশটির সেনাবাহিনির সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ ছিল ইমরানের। তবে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন করে তার যুক্তিও দেখান। বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলাকালে তিনি রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন বলেই যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপ করে আসছিল। মিত্র দেশ হিসাবে পাকিস্তানের ওপরও প্রচ্ছন্ন চাপ আসে যুক্তরাষ্ট্রের।

তবে পাকিস্তান রাশিয়ার ওপর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ক সফরে রাশিয়া যান ইমরান খান। এই সফর ভালো চোখে দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। ইমরান দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে বলেছে, ‘ইমরান থাকলে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে সম্পর্ক আর ভালো হবে না।

ইমরানের স্থলাভিষিক্ত যারা হবেন তার সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সমস্যা নেই।’ যদিও ইমরানের দেওয়া ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ইমরান খানের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হবে না সেটাও নিশ্চিত করা হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।

ইমরানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও উঠে। বলা হয় রাষ্ট্রীয় দখলে থাকা উপহার কেনাবেচা করেছেন ইমরান। যার মূল্য ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের বেশি। তোষাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২১ অক্টোবর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইমরানকে ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে বলেও জানায় কমিশন। এর আগে আগস্টে ইমরানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) একজন সদস্য।

অভিযোগে বলা হয়, বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া রাষ্ট্রীয় উপহার তোষাখানায় জমা না দিয়ে ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে বিক্রি করে দেয় ইমরান। এমনকি ঘোষণাপত্রেও সম্পদ প্রকাশও করা হয়নি। ওই রায়ের প্রতিবাদে ইমরানের সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করে। ক্ষমতা হাড়ানোর পর একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে আলোচনায় ছিলেন ইমরান। সর্বশেষ আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ২৫ অক্টোবর রাজধানীমুখী লংমার্চের ঘোষণা দেন তিনি। পিটিআই লংমার্চ শুরু হয় ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে। গন্তব্য ইসলামাবাদে পৌঁছানোর কথা ছিল ৪ অক্টোবর। তবে ৩ নভেম্বর পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে লংমার্চ চলাকালীন গুলিবদ্ধ হন তিনি। এতে পায়ে দুটি গুলি লাগায় গুরতর আহত হন ইমরান।

হামলার শিকার হওয়ার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে লাহোরের হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। এর প্রতিবাদে পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে তার সমর্থকরা। এছাড়াও হামলায় আহত হন দলটির আরও ছয় সদস্য। নিহত হন মুয়াজ্জেম নেওয়াজ নামের এক পিটিআই কর্মী। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার সাফ জানিয়ে দেয়, অক্টোবর বা নভেম্বরের আগে নির্বাচন হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম