সাক্ষাৎকার
মানুষ আমাকে অভিনেতা হিসাবেই জানেন
রিয়েল তন্ময়
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মঞ্চ, টেলিভিশন কিংবা সিনেমা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন পেশাদার অভিনেতা হিসাবে উপস্থিতি ফারুক আহমেদের। মূলত কমেডি ঘরানার অভিনেতা হিসাবেই তিনি জনপ্রিয়। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাও দিয়েছেন টিভি ও মঞ্চ নাটকে। অবসরে করেন লেখালেখি ও চিত্রনাট্যের কাজ। অভিনয় জীবন ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন তারাঝিলমিলের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিয়েল তন্ময়।
* পেশাদার অভিনয়ের সঙ্গে জড়ালেন কীভাবে?
** ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। সেটা তখন না বুঝেই কেন জানি ভালোবাসতাম। তারপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে পড়ার সময় থেকে মঞ্চে অভিনয় শুরু করি। মীর মোশাররফ হোসেন হলের নাট্য সম্পাদক ছিলাম। আমার বাবা অভিনয়ের ব্যাপারে আমাকে খুব উৎসাহ দিতেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে অনেক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছি। সেখানে হুমায়ুন ফরীদি, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, শিমূল ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আহমেদ রুবেলের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। এভাবেই এক সময় পেশাদার অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে যাই।
* অভিনেতা হবেন এটা কী ভেবেছিলেন?
** জীবনে ভাবিনি আমি অভিনেতা হব। ছোটবেলায় আমি ছিলাম খুব লাজুক প্রকৃতির। আত্মীয়স্বজন কেউ বাসায় এলে দরজার চিপায় লুকাতাম। তারপরও আমাকে কত অপমানিত ও লজ্জাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে! এ ছেলে কখনো অভিনয় করবে এটা ভাবা যায়! লজ্জা, ভয় কাটিয়ে কখন যে সাহসী হয়ে উঠলাম নিজেও জানি না। কেন আমার ভেতর অভিনয়ের নেশা চাপল তাও বলতে পারব না। জানি না আমার পথের শেষ কোথায়? শুধু এটুকু জানি, আমি এখন অভিনেতা। আমাকে মানুষ অভিনেতা হিসাবেই জানেন।
* নতুন কোনো মঞ্চ নাটক নির্দেশনা দিচ্ছেন?
** ঢাকা থিয়েটারের ‘রঙমহাল’ নাটকটি নির্দেশনা দিচ্ছি এখন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে এমন অভিজ্ঞতা ছিল, তাই এ নাটকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয় আমাকে। আমার ক্যারিয়ারের বিশাল একটা সময় মঞ্চ নাটকের সঙ্গে ছিলাম। ঢাকা থিয়েটারে দীর্ঘ ২৫ বছরে কোনো নাটক আমার বাদ যায়নি। তবে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের নাটক করতে গিয়ে কিছুদিন বাদ পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি ছাড়াও বাইরের আরও নাটক করেছি। এখন নাটক একটু কম করি।
* নিজ দলে প্রথম নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেমন লাগছে?
** অনেক ভালো লাগছে। আমার কাছে কোনো কিছু চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে না। কারণ আমি দীর্ঘ সময় মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি এটাকে উপভোগ করছি। আমার ডাকে সাড়া দিয়ে সবাই রিহার্সেল করছেন। এত বছর পর ঢাকা থিয়েটার নাটক পরিচালনার কাজটি দিয়েছে, আমিও সুন্দরভাবে কাজটি করতে চাই। দলের সবার সহযোগিতায় নাটকটি মঞ্চে আনতে চাই।
* কবে নাগাদ ‘রঙমহাল’ মঞ্চে আসবে?
** আমরা নাটকটি নিয়ে পুরোদমেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রথমে ভেবেছিলাম আগস্টে নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। এখন ফেব্রুয়ারিতে আনতে পারব বলে আশা করছি। পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই নাটকটি মঞ্চে আসবে। সে চেষ্টায়ই আছি।
* অভিনয় জীবনে আপনার টার্নিং পয়েন্ট কী?
** বরেণ্য লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ স্যারের নাটকে অভিনয় করাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সে সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘বারো রকম মানুষ’ নাটকে রসিক লাল নামের নেতিবাচক চরিত্রটি পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছিল। বিটিভি থেকেই হুমায়ূন স্যারের ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পাই।
* আপনি তো একাধারে অভিনেতা, নাট্যনির্মাতা ও নাট্যকার। কোন পরিচয়টা বেশি ভালো লাগে?
** আমি অভিনয়টাই বেশি করি। অভিনয়কেই বেশি ভালোবাসি। তাই এ পরিচয়টা দিতেই পছন্দ করি। সবাই আমাকে এভাবেই চিনে। লেখালেখি তো মাঝে মধ্যে করা হয়। ৭-৮টা নাটক লিখে কি আর নাট্যকার হওয়া যায়? এগুলা কাজের ফাঁকে সময় পেলেই টুকটাক লিখা হয়। এটা আমার মূল কাজ নয়।
* অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের চরিত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
** আমি তো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ভাবশিষ্য। দুঃখের নাটক, আনন্দের নাটক, প্রেম-ভালোবাসার নাটক, হাসির নাটক এগুলো বিভাজন করি না। স্যার বলতেন, ‘তুমি নাটক করবা, অভিনয় করবা, হাসি থাকলে হাসবা, কান্না থাকলে কাঁদবা। তুমি শুধু অভিনয়টা করে যাও।’