বড় তারকা দিয়েও ঘুরছে না ইন্ডাস্ট্রির চাকা
ঢাকাই সিনেমার সুদিন ফিরছে-গত কয়েক বছর ধরে ঈদ এলেই এমন কথা শোনা যায়। কিন্তু ঈদ শেষে আবার তথৈবচ। সিনেমা নিয়ে নেই কোনো আওয়াজ। তবে গত বছর এ আওয়াজটি একটু বেশিই উঠেছিল। অনেকে বলেছেন, ২০২৩ সাল দেখিয়ে দিয়েছে বাংলা সিনেমার ব্যবসা কীভাবে ফেরাতে হয়। এটা ঠিক, গত বছর একাধিক সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাতাস ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ফলে সংশ্লিষ্টরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, সামনের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে সিনেমা ব্যবসা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। দর্শকও হলমুখী হবেন। এর মধ্যে হিন্দি সিনেমার বেশ প্রভাব থাকলেও ঢাকাই সিনেমা নিয়ে আশা কম ছিল না। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। নতুন বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যে কটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে সেগুলো ব্যবসা তো দূরের কথা, নির্দিষ্ট মানেও পৌঁছাতে পারেনি। এখানে ‘মান’ বিষয়টি আপেক্ষিক। কিন্তু হলিউড বলিউড বাদ দিলেও, ঈদে ব্যবসা সফল সিনেমাগুলোর সঙ্গে মান বিবেচনা করলেও গত জানুয়ারি ও চলতি মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো সেটাও উৎরে যেতে পারেনি।
চলতি বছর শুরু হয় ‘শেষ বাজি’ নামে একটি সিনেমা দিয়ে। মেহেদি হাসানের পরিচালনায় নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন সাইমন সাদিক ও শিরীন শিলা। এটি মুক্তি পায় ১৯ জানুয়ারি। একই দিনে কলকাতার ‘হুব্বা’ নামে একটি সিনেমাও মুক্তি পায়। যার প্রধান অভিনেতা ছিলেন বাংলাদেশেরই জনপ্রিয় তারকা মোশাররফ করিম। একই দিনে বাংলাদেশি ও ভারতীয় সিনেমা মুক্তির বিতর্কের রেশ ধরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেন সাইমন সাদিক। তার অভিযোগ, তার অভিনীত সিনেমা মুক্তির দিন ভারতীয় সিনেমা মাঠ দখলের চেষ্টা করলেও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে যে কটি সিনেমা হলে ‘শেষবাজি’ প্রদর্শিত হয়েছে, তাতেও দর্শক টানতে পারেনি। অন্যদিকে মোশাররফ করিমও ভারতীয় সিনেমা ‘হুব্বা’ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও তার ব্যর্থতার জন্য সিনেমাটির মানহীন নির্মাণ ও দুর্বল গল্পই দায়ী।
পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারি চিত্রনায়ক কায়েস আরজু চার বছর পর ‘রুখে দাঁড়াও’ নামে একটি সিনেমা দিয়ে পর্দায় আসেন। তার নায়িকা ছিলেন তানহা তাসনিয়া। পরিচালক সুকুমার চন্দ্র দাশ। এ সপ্তাহে কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকার পরও সিনেমাটি দর্শক টানতে চরম ব্যর্থ হয়েছে। এরপর এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী অভিনীত ‘ট্র্যাপ’ নামে একটি সিনেমা। নির্মাতা মেহেদি হাসানের দাবি, এটি সাইন্স ফিকশন গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু মুক্তির পর দেখা গেল, এ সিনেমারও কোনো দর্শক নেই। যারা দেখেছেন, তারাও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই সপ্তাহে জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান হাজির হয়েছেন প্রায় আট বছর আগে নির্মিত ‘পেয়ারার সুবাস’ নিয়ে। এ সিনোমটি পরিচালনা করেছেন নুরুল আলম আতিক। এর মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুললেও সিনেমাটির প্রতি দর্শকদের ‘অনাগ্রহ’ ছিল লক্ষণীয়। জয়া থাকা সত্ত্বেও এ সিনেমাটি কেন ব্যর্থ সে প্রশ্ন নির্মাতাকে করাই যায়।
১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় দুটি সিনেমা। এ সপ্তাহে আবারও অপু বিশ্বাস হাজির হয়েছেন সরকারি অনুদানের একটি সিনেমা নিয়ে। নাম ‘ছায়াবৃক্ষ’। পরিচালনা করেছেন বন্ধন বিশ্বাস। এতে অপুর নায়ক নিরব। এ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫ বছর পর এক হয়েছেন নিরব ও অপু। এ সিনেমাটিও সেভাবে গ্রহণ
করেননি দর্শকরা। অনুদানের সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগে থেকেই খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। তার আরও একটি উদাহরণ ‘ছায়াবৃক্ষ’। এ সময়ের মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য সিনেমাটির অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদীন দীঘিকে নিয়ে রীতিমতো ট্রল হচ্ছে। এটি সরকারি অনুদানের সিনেমা। নাম ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এটি। গল্প ভালো, এটি বলা যায়। কিন্তু নির্মাণশৈলী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দর্শকরা। তাদের মতে, ২০২৪ সালে এসে গাঁটের পয়সা খরচ করে কেন ২০ বছর আগের নির্মাণ দেখতে যাবেন প্রেক্ষাগৃহে। অথচ মেধাবী অভিনেতা গাজী নুরকে নিয়ে এ সিনেমায় দীঘি মুগ্ধতা ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তবু তাকে নিয়ে ট্রল করছেন নিন্দুকেরা। তবে এ ট্রলের প্রতিবাদও করছেন তার সহশিল্পীরা।
গত দেড় মাসে দেখা গেছে, অপু বিশ্বাস, জয়া আহসান, মোশাররফ করিমের মতো জনপ্রিয় তারকাদের সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যাদের বড় তারকাই মনে করা হয়। এক সময় অপু বিশ্বাস অভিনীত অনেক সিনেমাই হিট হয়েছে। অন্যদিকে মোশাররফ করিমের অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অথচ তার অভিনীত সিনেমাও চলেনি। হোক না সেটা বিদেশি, তবু দর্শক আগ্রহ ছিল না।
অন্যদিকে জয়া আহসানকে বলা হয় অভিনেত্রী হিসাবে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন। ঢাকার চেয়ে কলকাতায়ই তিনি বেশি ব্যস্ত। নিয়মিতই সেখানে মুক্তি পায় সিনেমা। সফলও হচ্ছেন। কিন্তু নতুন বছরে বাংলাদেশে তিনি ব্যর্থ। এদিকে নিরব, দীঘি, সাইমন সাদিক, কায়েস আরজুদের মতো এ সময়ের তারকারাও বছরের শুরুতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।