Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

গ্রন্থকন্যাদের আলোয় উজ্জ্বল একুশের বইমেলা

Icon

রূপকথা বিশ্বাস

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শুরু হয়েছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। বইমেলার প্রাণ বই। একইসঙ্গে বইমেলা এলেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের জন্য সৃষ্টি হয় এক মাসের খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান। বিভিন্ন স্টলে নারী বিক্রয়কর্মীদের সরব উপস্থিতি নারীর অগ্রযাত্রারই চিত্র প্রকাশ করে যেন। নারী বিক্রয়কর্মীদের সরব উপস্থিতি বইমেলার জৌলুসও বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। লেখক, পাঠক, প্রকাশকের এ মিলনমেলায় বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছেন নারী বিক্রয়কর্মী। নতুন বই, লেখক, পাঠক সব মিলিয়ে কেমন লাগছে তাদের কাছে এ এক মাসের খণ্ডকালীন চাকরি। এ নিয়ে কয়েকজন নারী বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রূপকথা বিশ্বাস

বইমেলা হলো প্রাণের মেলা

-ফারা দিবা

আমার কাছে বইমেলা হলো প্রাণের মেলা। সারা বছর এই ফেব্রুয়ারির অপেক্ষা করি। বই দেখব, নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেব, লেখকদের সঙ্গে দেখা করব বলে। এখানে নারী বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু সুবিধা পাই। প্রকাশনীতে নারী বিক্রয়কর্মীর চাহিদা বেশি থাকায় তারা খুব ইতিবাচকভাবে আমাদের নেন ও দেখেন। অসুবিধা বলতে বইমেলা যেহেতু বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত হয়, রাত ৯টার পর থেকে রাস্তায় গাড়ি পেতে অসুবিধা হয়। অধিকাংশ সময় বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে। যদি নারী বিক্রয়কর্মীদের মেলা ত্যাগের সময় আরও পারিশ্রমিকের পরিমাণ কিছুটা পরিবর্তন করা হয় তাহলে মেলা আরও নারীবান্ধব হবে বলে মনে করছি।

বইমেলা একটি শুদ্ধ অনুভূতির নাম

-মাইমুন নাহার

বইমেলা একটি শুদ্ধ অনুভূতির নাম। এই এক মাস কেবল বইয়ের সঙ্গে সখ্য। একজন নারী বিক্রয়কর্মী হিসাবে বইমেলায় অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। ভারী কাজগুলো স্টলে উপস্থিত পুরুষ সহকর্মীরা করে দেয়। সহকর্মী, প্রকাশকসহ উপস্থিত সবার সঙ্গে দারুণ সখ্য গড়ে ওঠে এ সময়টায়। তার সঙ্গে চলে স্টলে উপস্থিত লেখক, লেখিকাদের সঙ্গে আড্ডা। সমস্যা একেবারেই যে নেই, তা না। এখনো অনেকে মনোভাব পোষণ করেন, নারীরা এ কাজের যোগ্য নয়। তাদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি পালটানো উচিত। ওয়াশরুমের সমস্যার কথা না বললেই নয়। জরুরি প্রয়োজনে মেয়েদের জন্য ভ্যান্ডিং মেশিনে প্যাড পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা নেই। হাত ধোয়ার জন্য যেমন হ্যান্ডওয়াশ নেই, তেমনি বাথরুমও যথেষ্ট পরিষ্কার নয়। মেলাকে নারীবান্ধব করতে চাইলে মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

নারীর নিরাপত্তা বাড়ান উচিত

-মোছা. আনতারা তাসমিন জান্নাত মুসকান

বইমেলা আমার কাছে শুধু একটা মেলা না, এটা আসলে এক রকম অনুভূতি, একদম আলাদা রকমের। এখানে প্রায় সব ধরনের বইয়ের সমাহার একসঙ্গে থাকে বলে অনেক ভালো লাগে। বইমেলায় কাজ করতে পেরে নতুন নতুন বই সম্পর্কে জানতে পারছি এবং সাধারণ মানুষের বই নিয়ে চিন্তাভাবনার ব্যাপারে জানতে পারছি। লেখকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হচ্ছে যা বিভিন্ন চিন্তাধারায় প্রভাবিত করে। তবে কিছু ক্রেতা সঠিক ব্যবহার বা সম্মান করে না। বইমেলায় এসে নারী বিক্রয়কর্মীকে অসংগতিপূর্ণ কোনো কথা না বলার আবেদন করছি। বইমেলায় পরিবেশটা একটু স্বস্তিদায়ক হলে ভালো হয়। নারীর নিরাপত্তা বাড়ানো উচিত যাতে অতিরিক্ত ভিড়ে কোনো অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে না হয়।

খণ্ডকালীন চাকরিতে সুবিধা অনেক

-জিনাত রেহানা অনামিকা

বইমেলা দারুণ লাগে! নতুন বই, লেখক-পাঠকের সরাসরি যোগাযোগ, আর বইপ্রেমীদের ভিড়-সব মিলিয়ে এক অন্য রকম উন্মাদনা। এই খণ্ডকালীন চাকরিতে সুবিধা অনেক। নতুন অভিজ্ঞতা, মানুষ চেনার সুযোগ, বই পড়ার পরিবেশ, বিক্রয় দক্ষতা বাড়ান। এসব সুবিধা ব্যক্তি জীবন, চাকরি জীবনে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি। বইমেলায় এই খণ্ডকালীন চাকরিতে এসে কিছু অসুবিধাও ভোগ করতে হচ্ছে। বইমেলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টুকুতে দাঁড়িয়ে থাকা, ভিড় সামলানো, কিছু মানুষের অসংবেদনশীল আচরণ-এসব কাজেরই চ্যালেঞ্জ মনে করে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এবারের বইমেলা আরও উপভোগ্য হবে। মেলায় আগতদের একটি আবেদন জানাতে চাই, আপনারা প্রতি স্টলে এসে সেলফি তোলার পাশাপাশি দু-চারটি বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টান। বই কিনুন।

কিছু ক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের স্বীকার হতে হয়

-ঋতু দাস

এই বইমেলার জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকি। নতুন বইয়ের গন্ধ, প্রিয় লেখকের নতুন লেখা বই, পাঠকদের ভিড়, সব মিলিয়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, প্রিয় লেখক, কবিদের সরাসরি সাক্ষাৎ, অটোগ্রাফ পাওয়া। সুবিধার কথা যদি বলতে হয়, তাহলে প্রথমেই বলব, স্টলের এক গাদা নতুন বইয়ের কথা। ইচ্ছামতো পড়তে পারছি। আগত পাঠকদের সঙ্গে বই বিক্রির কথা বলার মাধ্যমে নিজের যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারছি। এ ছাড়া অসংখ্য গুণী ব্যক্তির সান্নিধ্য ও তাদের সাহিত্য আলোচনা কাছ থেকে উপভোগ করতে পারছি। এর মাঝেও কিছু অসুবিধা যে পোহাতে হচ্ছে না, তা না। নানা ধরনের মানুষ মেলায় আসেন। কিছু ক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের স্বীকার হতে হয়। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ করছি, গত বইমেলার তুলনায় এবার হকারদের আধিপত্য কিছুটা বেশি। নারীদের জন্য যদি আলাদা রেস্টরুমের ব্যবস্থা থাকত তাহলে খুব ভালো হতো। ওয়াশরুমের ব্যবস্থা আরও উন্নত হওয়া দরকার। তবে মেয়েরা আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম