আলোকিত পৃথিবীর কারিগর তারা
রাফিয়া আক্তার
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্প্রতি ২০২৪ সালের বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জাগানো এবং প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। দেশে দেশে মানুষ, প্রকৃতি ও পৃথিবীকে আলোকিত করতে ভূমিকা রাখছেন এ নারীরা। লিখছেন নতুন পৃথিবীর গল্প। বদলে দিচ্ছেন পরিবার, সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে। আলোকিত এ নারীদের কয়েকজনকে নিয়ে এই আয়োজন। বিবিসি বাংলা অবলম্বনে লিখেছেন রাফিয়া আক্তার
হামিদা আমান
আফগানিস্তান, শিক্ষা উদ্যোক্তা
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার যখন আফগান নারীদের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করে, হামিদা আমান তখন বেগম অ্যাকাডেমি নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শুরু করেন। বিদ্যালয়ে যেতে না পারা নারীদের জন্য বিনামূল্যে মাল্টিমিডিয়া কোর্স শেখানো হয় এ মাধ্যমে। এরমধ্যে এই প্ল্যাটফর্মটি সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দারি ও পশতু ভাষায় প্রায় নয় হাজার ভিডিও তৈরি করেছে। হামিদা আমান শিক্ষামূলক চ্যানেল বেগম টিভি চালু করেন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বেগম অ্যাকাডেমির কোর্স সম্প্রচার করা শুরু করেন। আর এ মাধ্যম থেকে শিক্ষার আলো পাচ্ছেন আফগান নারীরা।
হেন্ড সাবরি
তিউনিসিয়া, অভিনেত্রী
আরব অভিনেত্রী হেন্ড সাবরি দর্শকের কাছে পরিচিতি হয়ে ওঠেন নারীবাদী চলচ্চিত্র দ্য সাইলেন্সেস অফ দ্য প্যালেস (১৯৯৪)-এর মাধ্যমে। তিউনিসিয়ার নারীদের যৌন এবং সামাজিক শোষণকে তুলে ধরে নির্মিত হয় এ চলচ্চিত্র। ২০১৯ সালে তিনি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম আরব নারী বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন হেন্ড সাবরি। সম্প্রতি ওলফা’স ডটারস নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সাবরি। এ চলচ্চিত্রটি ২০২৪ সালের অস্কারের জন্য তিউনিসিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে এবং সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার বিভাগে মনোনীত হয়। জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসাবেও মনোনিত হন সাবরি। তবে গাজায় যুদ্ধের সময় খাদ্যকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার প্রতিবাদে শুভেচ্ছাদূতের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
আডেনিকে টিটিলোপে ওলাদোসু
নাইজেরিয়া, জলবায়ু আইনজীবী
মূলত জলবায়ু নিয়েই কাজ করেন ওলাদোসু। পুরো নাম আডেনিকে টিটিলোপে ওলাদোসু। নাইজেরিয়ান এ ইকোফেমিনিস্ট ‘আই লিড ক্লাইমেট অ্যাকশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা। নারী ও তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোগ এটি। ওলাদোসু নাইজেরিয়ার লেক চাদের পরিবেশগত সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন। যেখানে কমে যাওয়া পানি সম্পদের সংঘাত বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি ক্রমাগত মরুকরণের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলে টেকসই কৃষিতে নারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতেও ভূমিকা পালন করেন।
ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা
মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র, লেখক
ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা একজন বিখ্যাত লেখক। এরমধ্যে অসংখ্য পুরস্কার যুক্ত হয়েছে তার ঝুলিতে। ২০২৪ সালে ‘লিলিয়ানার ইনভিন্সিবল সামার’-এর জন্য স্মৃতিকথা বিভাগে পুলিৎজার পুরস্কার জেতেন এ লেখক। গল্পটি তার বোন লিলিয়ানাকে নিয়ে। যাকে ১৯৯০-এর দশকে মেক্সিকোতে তার সাবেক প্রেমিক হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ হত্যার বিচার হয়নি শেষ পর্যন্ত। বোন হারানোর যন্ত্রণা নিজের কলমে তুলে ধরেন গারজা। এবং ন্যায়বিচারের জন্য এমন এক দেশে লড়াই করেন, যেখানে নারীনিধনের হার পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
এইনাভ জাংগাউকের
ইসরায়েল, বন্দি মুক্তি ক্যাম্পেইনার
সিঙ্গেল মা এইনাভ জাংগাউকেরের যুবক ছেলে মাতানকে হামাসের এক আক্রমণে জিম্মি করা হয়। তার ছেলের সঙ্গী ইলানাকে আলাদা করে অপহরণ করা হয়, যাকে পরে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়।
এরপর থেকে এ নারী জিম্মি সংকট নিয়ে অবিরাম সচেতনতা বৃদ্ধি করে চলেছেন। পাশাপাশি নেতাদের পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন এবং জনসাধারণকে প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করছেন। জাংগাউকের ইসরায়েল সরকারের একজন কড়া সমালোচক হিসাবেও আলোচনায় এসেছেন সম্প্রতি।
রুথ লোপেজ
আইনজীবী
দুর্নীতি দমন, নির্বাচনি আইন ও এল সালভাদরে মানবাধিকার সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করেন রুথ লোপেজ। তিনি মধ্য আমেরিকায় গণতন্ত্রের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টোসালেরও প্রধান আইন কর্মকর্তা। দেশটির সরকার ও প্রতিষ্ঠানের একজন সমালোচক হিসাবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও নাগরিকদের দায়বদ্ধতা উন্নয়নে কাজ করেন রুথ লোপেজ। রুথ বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও নাগরিক দায়বদ্ধতা ছাড়া টেকসই রাষ্ট্র হতে পারে না। গত বছরের শুরুতে নাইব বুকেলে দ্বিতীয় বারের মতো এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রুথ লোপেজের কাজ আরও বেশি প্রচারে উঠে আসে। অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া বুকেলে নিজেকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দারুণ স্বৈরাচার’ বলে মনে করেন।
ওলগা ওলেফিরেঙ্কো
ইউক্রেন, কৃষক
বাবার আকাঙ্ক্ষাকে ছেড়ে দিতে চাননি ওলগা ওলেফিরেঙ্কো। ডনবাসে নৌবাহিনীর কমান্ডার হিসাবে সম্মুখসারিতে দায়িত্ব পালন করার সময় নিহত হন যিনি। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর ওলগা একটি খামার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন পূরণে গবাদি পশু কিনে কাজ শুরু করলেও আর্থিক সমস্যায় পড়ে তাকে সব পশু বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। তবু দমে যাননি এ নারী। ইউক্রেনিয়ান ভেটেরান ফান্ড থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ওলগা একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তাতে সফলও হন। ওলেফিরেঙ্কো আবার তার খামার চালু করেন। খামারের আধুনিকীকরণ, নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে এরমধ্যে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরির সুযোগও তৈরি করেন।
ক্রিস্টিনা আসি
লেবানন, ফটোসাংবাদিক
নব্বইয়ের দশকে লেবাননে গৃহযুদ্ধের পর এক অস্থির সময়ে বেড়ে ওঠেন ক্রিস্টিনা আসি। এটি তাকে সংঘাতের চিত্র সংগ্রহ ও যুদ্ধের অজানা গল্প তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত করে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলি এক হামলায় গুরুতর আহত হন ক্রিস্টিনা। দক্ষিণ লেবাননে এ বিস্ফোরণে তার সহকর্মী ইসাম আবদাল্লাহ মারা যান এবং আরও অনেক সহকর্মী আহত হন। আসির একটি পা কেটে ফেলতে হয়। এ অভিজ্ঞতা তাকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় সচেতন করে তোলে। তাই সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারে নামেন তিনি। ২৪ সালে প্যারিসে অলিম্পিক মশাল দৌড়ে অংশগ্রহণের সময় ক্রিস্টিনা তার কাজ উৎসর্গ করেন সেসব সাংবাদিকদের, যারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
লিলিয়া চানিশেভা
রাজনৈতিক কর্মী এবং সাবেক বন্দি
গেল বছরের মাঝামাঝিতে এক আন্তর্জাতিক বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসাবে মুক্তি মেলে চানিশেভার। মুক্ত বাতাসে স্বাধীনতা ফিরে পেয়ে নিজ দেশ রাশিয়া ত্যাগ করেন তিনি। রুশ এ নারী রাশিয়ার বাশকোর্তোস্তান অঞ্চলে বিরোধী রাজনীতিক অ্যালেক্সি নাভালনির অফিস পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন চানিশেভা। এর আগে অবশ্য একজন সফল অর্থনীতিবিদ হিসাবে তিনি মস্কোতে আন্তর্জাতিক কোম্পানির জন্য কর পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করতেন। ২০২১ সালে চরমপন্থার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে রুশ প্রশাসন। প্রায় এক দশকের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। যদিও বছর তিনেকের মতো কারাগারে থেকে মুক্তি পান লিলিয়া চানিশেভা।
মাহরাং বালোচ
পাকিস্তান, চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক কর্মী
পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে একজন মাহরাং বালোচ। বেলুচিস্তান প্রদেশে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। ২০০৯ সালে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা তার বাবা গুম হন এবং দুই বছর পর নির্যাতনের চিহ্নসহ মৃত অবস্থায় বাবাকে পাওয়ার পর এ নিয়ে সোচ্চার হন মাহরাং বালোচ। ২০২৩ সালে পরিবারের সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বালোচ শত শত নারীকে নেতৃত্ব দিয়ে দীর্ঘ ১,০০০ মাইল পদযাত্রা করে রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে আসেন। যাত্রাপথে তাকে দুবার গ্রেফতার করা হয়। মানবাধিকার বিষয়ে তার কাজ ২০২৪ সালের ‘টাইম ১০০ নেক্সট’ তালিকায়ও স্বীকৃতি পায়। নিজের সাহসের জন্য মাহরাং বালোচ এরমধ্যে পাকিস্তানের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
অরুণা রায়
অ্যাক্টিভিস্ট, ভারত
দরিদ্র মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন অরুণা রায়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চাকরি ছেড়ে একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি কাজ শুরু করেন অরুণা। গড়ে তুলেন ‘মজদুর কিষাণ শক্তি সংগঠন’ নামে একটি কৃষক সংগঠন। স্বচ্ছতা ও কৃষকের ন্যায্য মজুরি নিয়ে কাজ করে এ সংগঠন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরুণা রায় জনগণনির্ভর উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাই তাকে এশিয়ার নোবেল খ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ২০০৫ সালের তথ্য জানার অধিকার আইন প্রণয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অরুণা, যা সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বড় ভূমিকা রাখে।
সাফা আলী
চিকিৎসক, সুদান
গেল বছর সুদানে তার হাসপাতালের কাছে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে, ডা. সাফা সহকর্মীদের সঙ্গে পালানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রয়ে যান হাসপাতালে। যদিও গোলাবর্ষণ চলছিল সমান তালে। একজন গাইনোকলজি বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি স্বেচ্ছাসেবী কর্মী এবং গর্ভবতী নারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের সহিংস সংঘর্ষের মধ্যেই তার কাজ চলতে থাকে। বর্তমানে আল-সৌদি ম্যাটারনিটি হাসপাতালে প্রসূতিবিদ হিসাবে তিনি সিজারিয়ান অপারেশন করেন ও চলমান সংঘাতের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করেন। সাফা আলী প্রায় ২০ জন নতুন স্নাতক নারী চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেন, যা চিকিৎসা কর্মীর ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। মানবতার দূত হয়ে বেঁচে থাকতেই আনন্দ পান এই সাহসী নারী।
নাওমি ওয়াতানাবে
জাপান, কমেডিয়ান
জাপানের জনপ্রিয় নারী অভিনেত্রী নাওমি ওয়াতানাবে নারীদের জন্য কমেডি জগতে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন যেন। পুরুষ-প্রধান কমেডিতে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, একজন নারী-প্রধান চরিত্রে সামনে আসেন ও স্কেচ শো তৈরি করেন নাওমি। ওয়াতানাবে জাপানে শরীর সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতেও সাহায্য করছেন। পাশাপাশি ‘পোচাকাওয়াই’ নামে একটি ইতিবাচক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাপানি এই নারী, যার অর্থ ‘মোটা এবং সুন্দর’। তিনি জাপানে প্লাস-সাইজের পোশাকের প্রথম ব্র্যান্ড চালু করেন। জাপানি টিভি এবং চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জনের পর, তিনি এখন বিশ্বব্যাপী কমেডি মঞ্চে প্রবেশ করতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। শরীরের আকার নয় মেধাতেই সৌন্দর্য এই বোধ তৈরিতে নাওমি ক্রমাগত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
রোসা ভাসকেজ এসপিনোজা
পেরু, রাসায়নিক জীববিজ্ঞানী
রোসা ভাসকেজ এসপিনোজা মূলত তার দাদির ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ের মাধ্যমে পেরুর আমাজন অরণ্যের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছেন।
অরণ্যের অপরিচিত জীববৈচিত্র্য খুঁজতে আমাজন রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন নূর ইমাম। অরণ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
নূর পৃথিবীর একেবারে বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন এবং আমাজনের বিখ্যাত ‘বয়লিং রিভার’ বা ফুটন্ত নদীতে এক ধরণের নতুন ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন। এ ছাড়াও পেরুর হুল না ফোটানো মৌমাছি এবং ঔষধি মধুর প্রথম রাসায়নিক বিশ্লেষণও পরিচালনা করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী আষানিংকা জনগণের আন্তর্জাতিক দূতও নূর ইমাম। জীব বৈচিত্র সংরক্ষণকে নিজের প্রধান কাজ মনে করেন নূর।
নূর ইমাম
মিশর, ফেম-টেক উদ্যোক্তা
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় নারীদের জন্য মাসিক স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন সচেতনতার মতো প্রায় নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেন যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষাবিদ নূর ইমাম। তিনি মাদারবিং নামের একটি ফেম-টেক কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এটি কায়রোর একটি ক্লিনিক এবং একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদান করে আসছে। এটির উদ্দেশ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় সুযোগ বৃদ্ধি। নারীর নিজের শরীর সম্পর্কে প্রমাণভিত্তিক জ্ঞানের সাহায্যে নারীকে ক্ষমতায়িত করা, গর্ভনিরোধ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ ও লজ্জার সংকোচ ছাড়াই সংবেদনশীল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে সহায়তা করে নূর ইমামের প্রতিষ্ঠান।
ঝিনা মোদারেস গোরজি
ইরান, নারী অধিকার কর্মী
২০১৯ সালে ঝিভানো উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন কুর্দি সাংবাদিক ও কর্মী ঝিনা মোদারেস গোরজি। নারীর প্রতি সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এ সংগঠন। ইরানের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের শুরু থেকে দুবার গ্রেফতার করা হয় ঝিনা মোদারেস গোরজিকে। প্রথমে তাকে ‘শাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা’সহ নানা অভিযোগে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে গোরজি কমিয়ে আনা ২ বছর ৪ মাসের সাজা ভোগ করছেন। মোদারেস গোরজি ইরানে আইন সংস্কারের জন্য জনসমর্থন সংগ্রহকারী ওয়ান মিলিয়ন সিগনেচার ক্যাম্পেইনেরও সদস্য। এটি নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইনগুলোর সমাধানে কাজ করে। ঝিনা কুর্দি নারীদের একটি ফটোগ্রাফি গ্রুপ, একটি নারীদের পডকাস্ট ও অনুপ্রেরণামূলক কুর্দি নারীদের নিয়ে একটি শিশুদের বইয়ের উদ্যোগও নিয়েছেন। সময়কে সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করেন ঝিনা।