Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

প্রান্তিক

প্লাস্টিক বর্জ্যে কর্মসংস্থান খুঁজে পেলেন চরফ্যাশনের নারীরা

Icon

শিপু ফরাজী

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক এখন আর আবর্জনা নয়। ব্যবহার ও প্রয়োজনের পর সাধারণত ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের সামগ্রীকে কেন্দ্র করে চরফ্যাশনের কুতুবগঞ্জে ও মুখারবান্ধা নামক জাগায় গড়ে উঠেছে পৃথক প্লাস্টিকের কারখানা। আর এ প্লাস্টিক কারখানায় পুরুষের পাশাপাশি দরিদ্র, বেকার, অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে কারখানার মালিক নিজের ভাগ্যবদলের পাশাপাশি তৈরি করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর কর্মসংস্থান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতের আরও বিকাশ সম্ভব বলে জানান কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।

চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট- বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল ও ভাঙারি এনে জমা করেন বাজারে। আর কারখানার মালিকরা এ প্লাস্টিক বর্জ্য কিনে বাছাই করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। চরফ্যাশনের পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের কুতুবগঞ্জে প্লাস্টিকের কারখানায় ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। কেউ বোতল পানিতে ধুয়ে কাটিং করে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউবা বোতলগুলোর ছিপি খুলছেন। কারখানায় কাজের ফাঁকে কথা হয় রিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সংসারে অভাব-অনটন ও স্বামীর একার আয়ে সংসার চালান কষ্ট হয়ে পড়ে। তাই এ কারখানায় কাজ করি। দুই বেলা খাবারসহ মাস শেষে ৫ হাজার টাকা পাই।’ রিনা আক্তারের মতো প্লাস্টিকের কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আরও ২৫ জন নারীর। সঙ্গে আছেন পুরুষ শ্রমিকও।

কারখানার মালিক শরিফ বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও শহরের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিকসামগ্রী ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে কেজি দরে কিনি আমরা। এরপর বাছাই করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। আমাদের কারাখানায় অনেক নারী কাজ করেন। তাদের কর্মসংস্থান করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকসামগ্রী দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় আসবাব। শুধু তাই নয়, রিসাইক্লিং করা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রপ্তানি করা হয় ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এতে একদিকে যেমন রোধ হচ্ছে পরিবেশ দূষণ, অপরদিকে তৈরি হয়েছে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান। এ কারখানায় চরফ্যাশনের দরিদ্র ও বেকার নারী-পুরুষের কাজের সুযোগ করে দেওয়ায় অনেকের সংসারের অভাব দূর হচ্ছে। গ্রামের নারীরা এ কাজে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।

বাচ্চু মহাজন নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘পথে-ঘাটে এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে।’ পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশের উপকার করছে দাবি করে নুরউদ্দিন নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘কোটি কোটি বোতলসহ প্লাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, বিল, নদী দখল করত, তা হলে তা পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত।’

ভোলার পরিবেশ অধিদপ্তর পরিদর্শক তোতা মিয়া বলেন, ‘যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ এলাকা রক্ষা পাচ্ছে।’

এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, ‘সস্তা আর সহজলভ্য হওয়াতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ প্লাস্টিকের সামগ্রী। ব্যবহারের পর মানুষ এ প্লাস্টিক বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দিচ্ছেন। এতে করে পরিবেশ নষ্ট হয়। কিন্তু চরফ্যাসনে প্লাস্টিকের কারখানা হওয়ার কর্মসংস্থানের কারণে এখানকার সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কাজ হয়েছে। স্থানীয় অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম