পরিশ্রম আর সততায় সফল
কায়েস আহমেদ সেলিম
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ইশরাত শামস মলি। ফাইল ছবি
ইশরাত শামস মলি একজন নারী উদ্যোক্তা। যার হাত ধরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অসংখ্য নারীর। বর্তমানে তিনি ঢাকার অ্যাট্রায়েন্ট এবং কুমিল্লার আলভিরাস বিউটি কেয়ারের কর্ণধার। তবে নারী হয়ে তার এগিয়ে আসার গল্পটা এতটা সংক্ষিপ্ত নয় মোটেই। এর পেছনে ছিল ইচ্ছা, উদ্যম এবং প্যাশন। একদিকে পরিবার, অন্যদিকে ব্যবসা-এসবই যার ধ্যান-জ্ঞান, সেই ইশরাত শামস মলির সঙ্গে আলাপকালে উঠে এসেছে তার এগিয়ে আসার গল্প। যে গল্প অন্য নারীদেরও এগিয়ে আসতে সাহস জোগাবে।
মলি বলেন, ‘আমার পৈর্তৃক বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। আমার নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে পারিবারিক সমর্থন। আমি মনে করি নারীদের এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থন একটি বড় বিষয়। পরিবার যদি মনে করে নারী শুধু ঘর সামলাবে তবে নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠাটা তখন অনেক কঠিন হয়ে ওঠে।’ পারিবারিকভাবে ইশরাত শামস মলি অনেক ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক। শুধু বাবারবাড়ির ব্যবসাই নয়, শ্বশুরবাড়ির নানা ব্যবসার হালও তিনি ধরেছেন শক্ত হাতে। তার ভাষায়, ‘নারী উদ্যোক্তা হিসাবে আত্মপ্রকাশে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন আমার শাশুড়ি।’
বর্তমানে পুরোদস্তর ব্যবসায়ী হলেও, ইশরাত শামস মলি এক সময় হতে চেয়েছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। সেই অদম্য ইচ্ছা পূরণ না হলেও, একজন সরকারি কর্মকর্তার মতো নিয়মানুবর্তিতাকে কাজে লাগিয়েছেন নিজের ব্যবসায়। তার সাফল্যের আড়ালে আছেন আরেকজন মানুষ, তিনি ইশরাত শামস মলির স্বামী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। পড়াশোনা চলাকালীন বিয়ে, তারপর স্বামীর কাজের সুবাদে দেশ-বিদেশে অবস্থান। সব মিলিয়ে নানা দেশের মানুষ আর পরিবেশের সঙ্গে মিশে রপ্ত করতে পেরেছিলেন ব্যবসায় সফল হওয়ার রহস্য। জানতে পেরেছিলেন, ব্যবসায় গ্রাহকদের চাওয়া-পাওয়া।
এ বিষয়ে মলি বলেন, ‘ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হব এমন ভাবনা কখনো ছিল না। এক ঈদে বাড়ি গিয়েছিলাম। সে সময় একটা পার্লার সার্ভিসের জন্য কুমিল্লার একটা পার্লারে যাই। কিন্তু সার্ভিসটি মোটেও মানসম্মত ছিল না। আর এ কারণে মনটা ভীষণ খারাপ হলো আমার। মনে হলো, নিজের জেলায় মেয়েরা ভালো পার্লার সার্ভিস পাচ্ছে না। তখনই নিজের জেলায় ভালো মানের একটি বিউটি কেয়ার গড়ার ইচ্ছা জাগে। তখন থেকেই শুরু।’ আলভিরাস বিউটি কেয়ার দিয়ে ইশরাত শামস মলির যাত্রা শুরু। বর্তমানে সফল এ নারী উদ্যোক্তার ঢাকা ও কুমিল্লায় তিনটি বিউটি কেয়ার রয়েছে। কেবল ব্যবসায়ই নয়, সামাজিক অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও সম্পৃক্ত মলি। দাদার নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি এবং তার পরিবার। এমনকি বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সমাজের অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের জন্যও বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত।
দুই সন্তানের জননী ইশরাত শামস মলি। একদিকে দুই সন্তানের দেখাশোনা, অন্যদিকে পরিবার ও ব্যবসার দায়িত্ব-সব মিলিয়ে এক সময় বেশ শোচনীয় অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। কী করে সামলাবেন! তবে ধীরে ধীরে ঠিকই সামলে নিয়েছেন তিনি। একজন নারী হিসাবে তার মতে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র হলো-পরিশ্রম আর সততা; এ দুই গুণই একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি।