দূরদর্শিতা সাফল্যের অন্যতম গুণ

সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সারা বিশ্বে ভূ-রাজনীতিতে ‘নুল্যান্ড’ নামেই এখন সুপরিচিত। পুরো নাম ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। জন্ম ১৯৬১ সালের ১ জুলাই। বর্তমানে আমেরিকান কূটনীতিক। আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফরেন সার্ভিসের সাবেক সদস্য। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে ইউরোপীয় ও ইউরেশীয়বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট এবং ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ন্যাটোতে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কেরিয়ার অ্যাম্বাসেডর পদেও ছিলেন। যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র পরিষেবার সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পদ। তা ছাড়া সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির (সিএনএএস) সাবেক সিইও হিসাবে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত কাজ করেছেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজিতে ব্র্যাডি-জনসনবিশিষ্ট অনুশীলনকারী এবং বোর্ডের সদস্য। গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় এনডাউমেন্ট। তিনি ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বৈদেশিক নীতি প্রোগ্রামে একজন অনাবাসী ফেলো। অ্যালব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপের জ্যেষ্ঠ কাউন্সিলর হিসাবে কাজ করেছেন।
ইউক্রেনীয় ইহুদি খ্রিষ্টান মা রোনা ম্যাকখান ছিলেন অভিবাসী। ১৯৭৯ সালে নুল্যান্ড চোয়েট রোজমেরি হল থেকে স্নাতক করেন। ১৯৮৩ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাশিয়ান সাহিত্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইতিহাসবিষয়ক গবেষণা করেন। নুল্যান্ডের স্বামী রবার্ট কাগান একজন ইতিহাসবিদ। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বৈদেশিক নীতির ভাষ্যকার এবং ১৯৯৮ সালে নিউ আমেরিকান সেঞ্চুরির নিওকনজারভেটিভ প্রজেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কাগান। দক্ষিণ এশিয়ায় ত্রিদেশীয় সফরের অংশ হিসাবে ঢাকা সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ও তার দল। বাংলাদেশের পর ভারত ও শ্রীলংকায় যাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি। সরকার ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গেও সফররত দলটি বৈঠক করবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্র বলছে, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে সুদৃঢ় করতে এবং সুসম্পর্ককে আরও গভীর করতে’ সফর করছেন নুল্যান্ড। মার্কিন পররাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা এমন এক সময়ে দক্ষিণ এশিয়া সফর করছেন, যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ঘিরে নব্য ভূ-রাজনৈতিক সংকট চলছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়ার পালটাপালটি অবস্থান নতুন করে কূটনৈতিক মেরুকরণে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশকে। অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বহু দেশই রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো অবস্থান জানায়নি। ফলে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের এবারের সফরে ইউক্রেন প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব আদায় করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও বাণিজ্য-বিনিয়োগের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ছাড়াও নিরাপত্তার মতো বিষয়ে কাজ করছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ওপর গড়ে ওঠা মজবুত ও বহুমুখী সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চায়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম ও বিনিয়োগ, বাণিজ্য, মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক বিষয়, মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো আঞ্চলিক বিষয় এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে নতুন দিকনির্দেশনা আসবে।
বাংলাদেশ সফরে নুল্যান্ড বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পে যুক্তরাষ্ট্রও দৃঢ় অংশীদার। করোনার টিকা প্রদানে বাংলাদেশ দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও অংশীদারত্বেও হবে।
বাইডেন প্রশাসনে নুল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তির পথটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু বাইডেন চেয়েছিলেন অভিজ্ঞ আর সুকৌশলী কাউকে পররাষ্ট্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্ব দিতে। চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে কমিটি ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল নুল্যান্ডকে দায়িত্ব দিতে অনুকূলে রায় প্রদান করে। ফলে ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল পুরো সিনেট কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। ২০২১ সালের ৩ মে থেকে আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে গত মার্চ মাসে আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট নুল্যান্ড জানান, ইউক্রেনে জৈবিক গবেষণা সুবিধা বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বিগ্নের কারণ ‘ওই গবেষণার উপাত্ত’ রাশিয়ার নজরে আসবে।
দূরদর্শিতা হচ্ছে জীবনে সাফল্যের অন্যতম গুণ। তবে দিনশেষে মানুষ ভালো কাজের স্বীকৃতি পায়। আর তা মনেও রাখে বহুদিন। সারা বিশ্ব এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুদূরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ ও নিরীহ জনগণ। মারা যাচ্ছে নিরস্ত্র নারী ও শিশু। ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিজেকে দূরদর্শী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।