
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৩ এএম
শিশুদের গ্রীষ্মকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
পরিবেশে তাপমাত্রা বাড়ছে। প্রচণ্ড গরমে শরীরে পানি কমে ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হচ্ছে। ঘাম বসে শিশুরা সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শরীর দুর্বল হওয়া থেকে হজমের সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যার সমাধান বাড়িতে বসেই করা যেতে পারে। জেনে নিন গরমে শিশুদের সমস্যা ও করণীয়।

ডা. রোকসানা হোসেন অথৈ
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
এখন গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে আমাদের দেশের শিশুদের মাঝে কিছু সাধারণ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। যেমন-অতিরিক্ত পানিশূন্যতা, পানিবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও মশাবাহিত রোগ (ডেঙ্গু)।
* ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)
শিশুরা যখন খেলাধুলা করে তখন তাদের ঘামের সঙ্গে অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়।
পানিশূন্যতার উপসর্গ
► অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া।
► মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া।
► প্রস্রাবের পরিমাণ কমে আসা।
► অতিরিক্ত ক্লান্তি।
► বিরক্তিভাব অনুভূত হওয়া।
► চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া।
► মাথাব্যথা ও মাথা ঘুরানো ভাব অনুভূত হতে পারে।
পানিশূন্যতা প্রতিরোধে করণীয়
► ছোট বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ পান করাতে হবে।
► শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার দিন। আপনি যদি সন্তানের সঙ্গে বাইরে থাকেন তবে পানি বা নারিকেলের পানি বা বাড়ির তৈরি বিভিন্ন ফলের জুস সঙ্গে রাখুন ও কিছুক্ষণ পরপর শিশুকে পান করান।
► শিশুর খেলাধুলার সময় নরম সুতি পাতলা কাপড়ের জামা পরিয়ে রাখুন।
* হিটস্ট্রোক (হাইপারথার্মিয়া)
শিশুরা যখন গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রাতে খেলাধুলা করে তখন শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এমনকি তার বেশি পর্যন্ত যেতে পারে, ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। জরুরি ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি চিকিৎসা ও যত্ন প্রয়োজন হয়।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
► ক্লান্তি।
► মাথাব্যথা।
► মাথা ঘোরা।
► দুর্বলতা।
► শিশু জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
► ঠান্ডা পানি বা বরফের প্যাক দিয়ে বাচ্চাদের দেহকে শীতল করুন।
► শিশুদের গরম দিনগুলোতে হালকা রঙিন পোশাক পরা উচিত।
► সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
► শিশুদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করুন।
► শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও জুস পান করান।
* ইনসেক্ট বাইট
গ্রীষ্মকালে মশা, পিঁপড়া, মৌমাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় অধিকতর সচল থাকে। তখন দেখা যায় বাচ্চাদের মশা, মৌমাছি ও অন্য পোকামাকড়ের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ইনসেক্ট বাইটের লক্ষণ
► চুলকানি।
► চামড়ায় লাল ভাব দেখা দেয়।
► ত্বক ফুলে যায়।
► তীব্র ব্যথা।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
► ডিইইটিযুক্ত রেপেলেন্ট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন।
► বাইরে যাওয়ার সময় আপনার শিশুকে বড় হাতার জামা, প্যান্ট এবং মোজা পরিধান করান।
► বিশেষত ঘাস বা কাঠের অঞ্চলে অথবা উচ্চ পোকামাকড়ের অঞ্চলগুলো এড়িয়ে চলুন।
* খাদ্যে বিষক্রিয়া
প্রায়ই দেখা যায় শিশুরা বাইরের খাবার খেতে পছন্দ করে যেখানে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্য ক্ষতিকারক টক্সিন দিয়ে দূষিত থাকে। ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা খাবার ও পানিবাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, কারণ তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর নয়।
খাদ্য বিষক্রিয়ার লক্ষণ
► পেটে ব্যথা।
► বমি বমি ভাব।
► জ্বর।
► ক্ষুধামন্দা।
► ডায়রিয়া এবং বমি।
প্রতিরোধে করণীয়
► রাস্তার পাশে খাবার, বাসি খাবার গ্রহণ করা এড়িয়ে চলুন।
► ফলমূল ভালোভাবে পরিষ্কার করে শিশুকে দেবেন।
► পরিষ্কার পানি বাচ্চাকে খেতে দিতে হবে।
* ছত্রাকের সংক্রমণ
সাধারণত গ্রীষ্মের অতিরিক্ত আর্র্র্র্র্দ্রতা ও ঘামের কারণে শিশুদের ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয়। এ সংক্রমণগুলো হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে, বগল, কুচকি ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন অংশে দেখা যায়।
লক্ষণ
► চুলকানি।
► চামড়ায় লাল লাল ভাব।
► ফুলে যাওয়া।
► জ্বর, দুর্বলতা ইত্যাদ।
প্রতিরোধে করণীয়
► বাচ্চাদের পরিষ্কার পোশাক পড়াতে হবে।
► পোশাক, তোয়ালে বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে ভাগ করবেন না।
► পোষা প্রাণীদের বাচ্চাদের থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে যদি তাদের ছত্রাকের সংক্রমণের কোনো লক্ষণ থাকে।
► গোসল অথবা সাঁতারের পরে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শরীর শুকাতে হবে।
► অতিরিক্ত টাইট জুতা ও পোশাক পরানো শিশুদের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে হবে।
লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ।