Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার যেভাবে দূর করবেন

Icon

ডা. নুসরাত জাহান দৃষ্টি

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার যেভাবে দূর করবেন

যৌনশিক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এটি মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। যৌনশিক্ষা মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকে সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম, যৌনস্বাস্থ্য, সম্মানজনক আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং সুরক্ষা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে পারেন, যা তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যৌনশিক্ষা মানুষকে যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক তথ্য দিয়ে সচেতন করে তোলে। যেমন-সুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক নিশ্চিত করতে কনডম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা, প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে সাবধানতা, গর্ভধারণের পরিকল্পনা, গর্ভনিরোধক এবং যৌনরোগ প্রতিরোধ। এটি অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা এবং যৌনবাহিত রোগ (STD)-এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সঠিক যৌনশিক্ষা মানুষের মধ্যে অনিরাপদ যৌন আচরণ যেমন- অপ্রত্যাশিত গর্ভাবস্থা বা যৌনরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে প্রজনন স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। যৌনশিক্ষা, সম্পর্কের মধ্যে সম্মান, সীমানা এবং সম্মতির গুরুত্ব শেখায়। ফলে, পারস্পরিক সম্মান বজায়, সম্পর্কের মান এবং প্রেমের ভিত্তি স্থাপন করে, সঠিক মানসিকতা ও ধারণার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের মতো অপরাধের হার কমানো সম্ভব হয়। যৌনশিক্ষা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, আত্মসম্মান এবং সুস্থ সম্পর্ক গঠনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি সরবরাহ করে। এটি যৌন পরিচয়, যৌন প্রবণতা এবং সম্পর্কের মানসিক দিকগুলোও গুরুত্বসহ আলোচনা করে।

যৌনশিক্ষা তরুণদের, তাদের নিজের শরীর এবং যৌনতা সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করে, যাতে তারা স্বাস্থ্যের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন এবং যৌনবিকাশ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিয়ে থাকে। এটি মানবাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এটাকে ভালোভাবে জানতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে যৌনতা এবং সম্পর্ক বিষয়ে ভুল ধারণা বা অজ্ঞতা থাকে। যৌনশিক্ষা সেগুলো দূর করতে সাহায্য করে এবং তরুণদের সঠিক তথ্য প্রদান করে। যৌনশিক্ষা ব্যক্তিবিশেষে সম্মান-সম্মতি এবং সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। সঠিক যৌনশিক্ষা মানুষকে যৌন নিপীড়ন, সঙ্গীর প্রতি সম্মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে উৎসাহিত করে। যে কোনো ধরনের অপব্যবহার বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সাহায্য করে।

যৌনশিক্ষা স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি তাদের শরীর, প্রজনন এবং যৌনস্বাস্থ্যের সঠিক জ্ঞান দেয়। এটি কুসংস্কার দূর করে সচেতনতা বাড়ায় এবং অনিরাপদ যৌন আচরণ, যৌন নির্যাতন ও অকাল গর্ভধারণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক। যৌনশিক্ষা কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। কারণ, এটি তাদের সঠিক তথ্য জানায়, শরীরের পরিবর্তন বুঝতে সাহায্য করে এবং নিরাপদ আচরণ শেখায়। এটি অযাচিত গর্ভধারণ, যৌনরোগ এবং মানসিক চাপ প্রতিরোধে সহায়ক। পাশাপাশি, আত্মসম্মানবোধ ও সম্পর্কের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে।

যৌনশিক্ষা শুরু করার সঠিক বয়স হলো ১০-১২ বছর। এ সময় শিশুরা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন অনুভব করতে শুরু করে। এ সময় সঠিক জ্ঞান তাদের শরীর, প্রজনন এবং সুরক্ষিত আচরণ সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করে এবং ভুল ধারণা ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়াতে সহায়ক হয়। যৌনশিক্ষা, শিক্ষার্থীদের নিজের এবং অন্যের শরীর ও অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাতে শেখায়। এটি সম্মতির গুরুত্ব বোঝায়, যেখানে ব্যক্তি তার ইচ্ছা ও সীমা প্রকাশ করতে এবং অন্যের ইচ্ছার সম্মান করতে শেখায়। ফলে স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যৌন পরিচয় এবং যৌন প্রবণতা সম্পর্কে আলোচনা, যৌনশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে।

শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শেখান, বৈষম্য দূর করা এবং সবাইকে শ্রদ্ধা করার শিক্ষা দেওয়া এতে গুরুত্বপূর্ণ। এতে তারা নিজেদের এবং অন্যদের যৌন পরিচয় নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে পারে। যৌনশিক্ষা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতা কমাতে কার্যকরী। কারণ এটি তাদের ব্যক্তিগত সীমারেখা, সম্মতি এবং অনুচিত আচরণ চিহ্নিত করতে শেখায়। পাশাপাশি এটি নির্যাতন প্রতিরোধের কৌশল, সহায়তা চাওয়ার পদ্ধতি ও সঠিক প্রতিবেদন করার গুরুত্ব বোঝায়।

যৌনশিক্ষা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক ও সম্পর্কগত দিকও অন্তর্ভুক্ত করে। এটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সম্মান, এবং যোগাযোগের গুরুত্ব শেখায়, যা সামগ্রিক ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক। যৌনশিক্ষা ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যে সমতার বোধ তৈরি করতে সাহায্য করে। কারণ এটি লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করে উভয়ের সমান অধিকার ও দায়িত্ব শেখায় এবং পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার গুরুত্ব বোঝায়। বাবা-মা এবং শিক্ষকরা, যৌনশিক্ষার বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে শিশুদের জন্য উপযুক্ত ও সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তারা খোলামেলা আলোচনা, সমন্বিত শিক্ষাক্রম এবং পারস্পরিক সমর্থন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে গাইড করতে পারেন। যৌনশিক্ষা শুধু গর্ভধারণ ও যৌনরোগ প্রতিরোধে সহায়ক নয়, সম্পর্কের মানসিক দিকগুলোও এতে আলোচিত হয়। এটি ভালো যোগাযোগ, সম্মান, এবং আবেগপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব শেখায়। সমাজে যৌনশিক্ষা নিয়ে বাধাগুলো কাটানোর জন্য সচেতনতা বাড়ানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলামেলা আলোচনা এবং বাবা-মা, শিক্ষক ও সমাজের সমর্থন প্রয়োজন। সামাজিক কুসংস্কার দূর করতে সরকার ও সমাজের যৌথ উদ্যোগে সঠিক তথ্য ও সংবেদনশীলতা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : সেক্সুয়াল হেলথ এডুকেটর, সেক্স এডুউইথ ডা. দৃষ্টি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম