শীতে বাড়ে নিউমোনিয়া
অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের সংক্রমণ, যা হালকা থেকে গুরুতর হয় এবং প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। এটি ঘটে যখন সংক্রমণ ফুসফুসের (অ্যালভিওলি) বাতাসের থলিকে তরল বা পুঁজ দিয়ে পূরণ করে, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন শোষণ করা যায়। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে ২ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি।
* নিউমোনিয়ার জীবাণু
▶ ভাইরাল নিউমোনিয়া : ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) সহ বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট, যা নিউমোনিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। ভাইরাল নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রায়ই ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল প্রয়োজন হতে পারে।
▶ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ : বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট, প্রধানত স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া। এটি তাদেরই বেশি হয় যাদের শরীর অসুস্থ, দুর্বল পুষ্টি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর প্রথম দিকে বন্ধ করে দিলে তা পুনরাবৃত্তি হতে পারে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠে।
▶ মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া : মাইকোপ্লাজমা বা ছত্রাকের নিউমোনিয়া দ্বারা সৃষ্ট অ্যাটিপিকাল নিউমোনিয়া হিসাবে উল্লেখ করা যায়। এটি সাধারণত হালকা, বিস্তৃত নিউমোনিয়া, যা সব বয়সি মানুষকে আক্রান্ত করে। অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, যার জন্য দীর্ঘ সময়ের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
* এটি কি সংক্রামক
হ্যাঁ, নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে। ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া উভয়ই হাঁচি বা কাশি থেকে ছড়ানো জীবাণু শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে বা দূষিত পৃষ্ঠকে স্পর্শ করার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তবে ছত্রাকের নিউমোনিয়া ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায় না।
* লক্ষণ
নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে- কাশি সবুজ, হলুদ বা লাল শ্লেষ্মা, জ্বর, ঘাম, এবং ঠান্ডা, অগভীর ও দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস, বুকে তীব্র ব্যথা (গভীর শ্বাস বা কাশি দিলে সেটা আরও তীব্র হয়), ক্ষুধামান্দ্য, কম শক্তি এবং ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং বমি (বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে), বিভ্রান্তি (বিশেষ করে বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়)।
* রোগ নির্ণয়
নিউমোনিয়া নির্ণয় করার জন্য যেসব পরীক্ষা করা হয় তার মধ্যে রয়েছে বুকের এক্স-রে, রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের জন্য পালস অক্সিমেট্রি, ফুসফুসে স্পুটাম পরীক্ষা, রক্তের গ্যাস পরীক্ষা, ব্রঙ্কোস্কোপি, সিটি স্ক্যান ও প্লুরাল ফ্লুইড কালচার।
* চিকিৎসা
সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিউমোনিয়া নিরাময় করা যায়।
চিকিৎসা নির্ভর করে নিউমোনিয়ার ধরন, সংক্রমণ ঘটাচ্ছে এমন জীবাণু এবং এর তীব্রতার উপর। গুরুতর ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপি বা ইনজেকশনের সাহায্যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।
* কারা ঝুঁকিতে থাকেন
যে কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে কিছু লোক উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। তারা হলেন-
▶ অপরিণত ইমিউন সিস্টেম, যেমন- শিশু ও নবজাতক
▶ দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, যেমন- প্রাপ্তবয়স্ক
▶ গর্ভবতী মহিলা
▶ ইমিউন-দমনকারী ওষুধ সেবন করেন যারা
▶ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা (যেমন, ক্যান্সার, এইচআইভি, এইডস)
▶ অটোইমিউন রোগ (যেমন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস)
▶ যাদের ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), সিস্টিক ফাইব্রোসিস (সিএফ) এবং অ্যাজমা আছে।
লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল।