ঢাকার বাতাসে বস্তুকণা ২.৫ নামের অতি সূক্ষ্ম পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়েও ৫ গুণ বেশি ভেসে বেড়াচ্ছে। এ বিষের উৎস হলো গাড়ি, আশপাশের শিল্পাঞ্চল, ইটভাটা ও নাগরিক বর্জ্য। সিএনজিচালিত যানবাহন থেকে বের হয় ক্ষতিকারক বেনজিন। বেনজিনের কারণে ঢাকায় ক্যানসারের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। সালফার ও সিসাযুক্ত পেট্রোল, জ্বালানি তেলে ভেজাল ও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনের কারণে গাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, অ্যালডিহাইডসহ সিসার নিঃসরণ বাতাসকে দূষিত করছে। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালু, সিমেন্ট ফেলে রাখা হচ্ছে রাস্তার পাশে। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও অনেক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ধুলাবালুর পরিমাণ বাড়ছে। বিশাল অঞ্চলজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে দীর্ঘদিন ধরে এবং তা বিভিন্নভাবে চারদিকে ছড়িয়ে সৃষ্টি করছে প্রকট ধুলাদূষণ।

বায়ু দূষণের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত অ্যাজমা-হাঁপানি, ক্রনিক অবসট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) ও ফুসফুসের ক্যানসারসহ মারাত্মক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।

* হাঁপানি

হাঁপানি ফুসফুসে বারবার হয়ে চলা একটি প্রদাহজনিত অবস্থা, যাতে কিছু উদ্দীপক প্রদাহ তৈরি করে সাময়িকভাবে শ্বাসনালি সরু করে দেয়। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যে ধুলা উড়ছে, তা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ। ধুলাবালু শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফ্রি রেডিক্যাল দেহকোষগুলোর ক্ষতি করে। দূষিত বায়ু ফুসফুসে ঢোকার পর সেখানে ফ্রি রেডিক্যালের সৃষ্টি হতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের অসুখ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসব ফ্রি রেডিক্যাল।

* সিওপিডি

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। ইংরেজিতে রোগটির নাম সিওপিডি। বাংলা করলে দাঁড়ায় ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসরোধক রোগ। এটি ফুসফুসের এমন একটি রোগ, যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয় এবং রোগী শ্বাসকষ্টে ভোগেন। ফুসফুসের শ্বাসরোধক প্রক্রিয়াটি ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং তা মূলত হয়ে থাকে দূষিত বাতাস গ্রহণের কারণে, ফুসফুসে সৃষ্ট প্রদাহের জন্য। এ প্রদাহের জন্য ফুসফুস দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়-

এক. ফুসফুসের ছোট ছোট শ্বাসনালির ভেতরের দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, স্থায়ীভাবে সংকুচিত হয় এবং সেখানে অতিরিক্ত শ্লেষা তৈরি হয়ে বায়ুরোধক প্রক্রিয়াটি বাড়িয়ে দেয়।

দুই. ফুসফুসের বায়ুকুঠুরি অস্বাভাবিক প্রদাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে এর সংকোচন-প্রসারণক্ষমতা নষ্ট হয় এবং রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যায়।

* ফুসফুসের ক্যানসার

বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইডের প্রাবল্য দিনে দিনে ফুসফুসের প্রদাহ বাড়াচ্ছে। দূষিত বায়ু ফুসফুসে ঢোকার পর সেখানে ফ্রি রেডিক্যালের সৃষ্টি হতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসব ফ্রি রেডিক্যাল।

* বায়ুদূষণ ঠেকাতে করণীয়

বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

হাঁপানি এবং সিওপিডি রোগে যারা ভুগছেন তাদের রক্তে ভিটামিন সির মাত্রা কমে গেলে বায়ুতে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সময় শ্বাসকষ্টে ভোগার ঝুঁকি বাড়ে। লেবু, আমলকী, পেয়ারা, জাম্বুরা, আনারস, ইত্যাদি ভিটামিন সির গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., শ্যামলী, ঢাকা।