চুল পড়া নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। সাধারণত একজন মানুষের দৈনিক ১০০টির মতো চুল পড়তে পারে, এটা স্বাভাবিক। সেগুলো আবার গজিয়েও যায়। কিন্তু চুল পড়ার সংখ্যা যদি এর চেয়েও বেশি হয়, তাহলে তার কারণ জানা জরুরি। খাবারের মাধ্যমে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে চুল পড়া কমানো সম্ভব। লিখেছেন নারী মৈত্রীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নাজিয়া আফরিন
* চুল কেন পড়ে
▶ থাইরয়েডের সমস্যার কারণে চুল তৈরি বাধাগ্রস্ত হয় ও চুল বেশি পড়ে।
▶ মাথার ত্বকে কিছু ছত্রাকের সংক্রমণের কারণেও চুল পড়তে পারে। সাধারণত দীর্ঘ সময় স্যাঁতসেঁতে চুল ঢেকে রাখার ফলে এ ছত্রাকের সংক্রমণ হয়।
▶ শ্যাম্পুতে অনেক সময় সালফারযুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ রাসায়নিকের কারণে মাথার ত্বক থেকে তেল ধুয়ে যায়। ফলে চুল শুকিয়ে যায়, চুলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙে যায়, চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল ভেঙে যায়।
▶ মানসিক চাপ, অস্ত্রোপচার, কোনো আঘাতজনিত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়া, গুরুতর অসুস্থতা বা টাইফয়েড জ্বরের কারণেও চুল পড়ে।
▶ অত্যধিক চুল পড়া পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের (পিসিওএস) একটি বৈশিষ্ট্য। ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন উৎপাদন করে। পিসিওএসে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত চুল পড়ে।
▶ ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ার মতো রোগের জন্যও চুল পড়ে। এটি এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ, যার ফলে মানুষ বারবার চুল টেনে ধরে। এ ক্ষেত্রে প্রায়ই তাদের টাক পড়ে যায়।
▶ চুলকে খুব বেশি টানটান করে বাঁধলে চুল পড়ে।
▶ রঙ করার কারণেও অনেক সময় চুল পড়তে পারে। আয়রন বা গরম ব্লো-ড্রাইং থেকে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ার ফলেও চুল পড়ে।
* কী খাবেন
চুল পড়া রোধের জন্য অবশ্যই প্রোটিন, বায়োটিন, ভিটামিন-ই, ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স যুক্ত খাবার এবং টকজাতীয় খাবার অত্যন্ত জরুরি। চুলের পুষ্টির জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন (এ, বি, বিশেষ করে বায়োটিন, সি, ডি ও ই) এবং বেশকিছু খনিজ (আয়রন, জিঙ্ক) নিয়মিত গ্রহণ করা অপরিহার্য।
▶ ডিম : ডিম হলো চুলের বৃদ্ধির জন্য দ্রুত পুষ্টি জোগানোর একটি দুর্দান্ত উৎস। ডিমে আমিষ ছাড়াও বায়োটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
▶ ডাল, বাদাম, ছোলা ও বীজজাতীয় খাদ্য : ডালে ভালো পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় এবং সেসঙ্গে আমিষ তো রয়েছেই। আমিষ, আয়রনের পাশাপাশি ডালে থাকে জিঙ্ক ও ফলেট। তাই চুলের সুস্থতায় খাদ্য তালিকায় ডাল থাকা জরুরি। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাট থাকে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ও ওয়ালনাটের মতো বাদামজাতীয় খাবার রাখা যেতে পারে। ছোলায় রয়েছে আয়রন, জিঙ্ক ও আমিষ, যা চুলের জন্য উপকারী। বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন-চিয়া সিডে আছে আলফা-লিনোলিনিক অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাট। মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে জিঙ্ক, সূর্যমুখীর বিচিতে আছে বায়োটিন, তিসির বীজে আছে সেলেনিয়াম। এগুলো সুস্থ চুলের জন্য উপকারী।
▶ রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল : পালংশাক, ব্রকলি, ধনিয়াপাতায় রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন ও ফলেট। এগুলো চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়। মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া-এগুলো ভিটামিন এ-তে ভরপুর। চুলের ফলিকলের জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন আমাদের যতটুকু ভিটামিন এ প্রয়োজন, তারচেয়ে বেশি জোগান দিতে পারে মাত্র আধাকাপ পরিমাণ গাজর। তাই প্রতিদিন কিছু রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করলে চুল ভালো থাকে। আমলকি, টমেটো, পেয়ারা, লেবু, কমলা, মালটা, আঙুর, কাঁচাআম, কিউই জাতীয় টক ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।
▶ টক দই : টক দইয়ে আমিষ ছাড়াও জিঙ্ক পাওয়া যায়, যা চুলের জন্য খুব উপকারী।
▶ তৈলাক্ত মাছ : সামুদ্রিক মাছ, ইলিশ, কই, মলা, চাপিলা মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটের ভালো উৎস। এ মাছগুলো খাদ্য তালিকায় থাকলে চুল ঘন ও কালো হয়।
এছাড়াও স্বাভাবিকভাবে চুল শুকানো, গামছা বা কাপড় দিয়ে চুল না ঝাড়া, অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকা, উচ্চ তাপে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা, খুব টাইট করে হেয়ারস্টাইল থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত ধীরে চুল আঁচড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চুল ধোয়া বা আঁচড়ানোর সময় খুবই যত্নশীল হওয়া উচিত।