নারীদেহে অবাঞ্ছিত লোম
ডা. ফারিবা মজিদ
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই কমবেশি লোম আছে। কিন্তু নারী-পুরুষভেদে লোমের ধরন ভিন্ন। অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যাকে ‘হারসুটিজম’ বলা হয়। সাধারণত, হরমোনজনিত সমস্যায় মেয়েদের শরীরে অবাঞ্ছিত লোম হয়। এন্ড্রোজেন নামক হরমোন মেয়েদের শরীরে খুব কম পরিমাণে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে মেয়েদের দেহে এ হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত লোম গজায়; কণ্ঠ ভারী হয়ে যায়। এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা হতে পারে।
* অপসারণে লেজার চিকিৎসা
অতিরিক্ত লোম অপসারণে অনেকে ব্লিচ, শেভিং, ওয়াক্সিং ও থ্রেডিং করেন। কেউ কেউ বিভিন্ন রকমের ক্রিমও ব্যবহার করেন। তবে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে সবচেয়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো লেজার। এ চিকিৎসায় লেজার রশ্মির সাহায্যে আলোর একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে ত্বকের গভীরে আলোর বিম প্রয়োগ করা হয়। এতে লোমের গোড়ায় যে লোম বৃদ্ধিকারী স্টেমসেল বা কোষগুলো থাকে, তা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। এটি চুলের ফলিকল ও ভালভকেও নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে লোমের বৃদ্ধি অনেকাংশেই কমে যায়।
* যে ধরনের ত্বক ও চুলে লেজার ভালো কাজ করে
আমাদের শরীরে ইউমেলানিন ও ফিমেলানিন নামে দুধরনের মেলানিন থাকে। মেলানিন আমাদের ত্বক ও চুলের রং নির্ধারণ করে। ইউমেলানিনের জন্য চুলের রং কালো বা বাদামি হয়। ফিমেলানিনের জন্য রং হয় সাদা বা লালচে। ইউমেলানিনে অর্থাৎ চুলের রং যদি কালো বা বাদামি হয় তাহলে লেজার পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তাছাড়া, শুষ্ক, তৈলাক্ত বা মিশ্র যে কোনো ধরনের ত্বকেই লেজার প্রয়োগ করা যায়। তবে অতিসংবেদনশীল ত্বকে লেজার রশ্মি প্রয়োগ করলে একটু ব্যথা ও লালচে ভাব হতে পারে, যা অল্পদিনেই ঠিক হয়ে যায়।
* লেজারের মাধ্যমে কী অবাঞ্ছিত লোম স্থায়ীভাবে দূর করা যায়
লেজার একটি ব্যথামুক্ত ও স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি। ওয়াক্সিং অথবা থ্রেডিং প্রতি মাসেই করাতে হয়। কিন্তু লোমের ধরন ও বৃদ্ধি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কয়েকবার লেজার চিকিৎসা নিলে অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব।
* লেজার চিকিৎসার সুবিধা
▶ ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না।
▶ কোনো রকম কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না।
▶ ত্বকের গভীর থেকে লোমের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। চিকিৎসার পর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
* সতর্কতা
লেজার চিকিৎসা নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন-
▶ চিকিৎসার অন্তত ৬ সপ্তাহ আগে থেকে ওয়াক্সিং ও থ্রেডিং করা যাবে না। সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে।
▶ বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
▶ শরীরের যে স্থানে লেজার চিকিৎসা দেওয়া হবে, সে স্থানে ট্যাটু করা যাবে না।
▶ লেজার অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।
▶ অ্যাকজিমা বা অন্য কোনো চর্মরোগ থাকলে লেজার না করানোই ভালো।
▶ গর্ভাবস্থায় লেজার চিকিৎসা নেওয়া যাবে না।
লেখক : চর্ম, যৌন, এলার্জি, কুষ্ঠ, লেজার ও কসমেটিক সার্জন, কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড এস্থেটিক অ্যান্ড লেজার লাউঞ্জ।