হৃদরোগীদের দাম্পত্য জীবন : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান ফারুক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হৃদরোগ একটি জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা যা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যেই নয়, বরং মানসিক ও পারিবারিক জীবনেও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে দাম্পত্য জীবনে এটি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। তবে সচেতনতা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা এবং জীবনধারায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনে হৃদরোগীদের দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও সুস্থ রাখা সম্ভব।
* শারীরিক প্রভাব ও সীমাবদ্ধতা
হৃদরোগের কারণে শারীরিক সক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে হার্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায়, রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন। ফলে দৈনন্দিন কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা চলে আসে, যা দাম্পত্য জীবনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দেয়। হৃদরোগের চিকিৎসা গ্রহণের পর প্রথম দিকে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে, কারণ অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম হার্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
* মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময়ই বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা তাদের মাঝে হতাশা, উদ্বেগ, এমনকি বিষণ্নতার কারণ হতে পারে। এ মানসিক চাপের কারণে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এ পরিস্থিতিতে রোগীর সঙ্গী যদি ধৈর্যশীল এবং সহযোগী মনোভাব নিয়ে পাশে থাকে, তবে সম্পর্কটি অনেক বেশি দৃঢ় হতে পারে।
* সামাজিক ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ
হৃদরোগের চিকিৎসা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল হয়। এ কারণে পরিবারকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়, যা দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সামাজিক ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই একজন সঙ্গীকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয়, যা তাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় উভয়পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সমঝোতার বিকল্প নেই।
* সঠিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনা
হৃদরোগের রোগীদের জন্য সঠিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি হৃদরোগীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, নিয়মিত মেডিক্যাল চেক-আপ এবং ডাক্তারদের নির্দেশনা অনুসরণ করাও জরুরি। দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর রাখতে সঙ্গীকেও এ পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা উচিত, যাতে তারা রোগীর প্রয়োজনীয়তা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে।
* পারস্পরিক সমর্থন ও যোগাযোগ
সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর যোগাযোগ ও সহযোগিতা দাম্পত্য জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে সঙ্গী যদি আবেগী সমর্থন ও সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে থাকে, তবে সম্পর্কটি আরও মজবুত হয়। সঙ্গীর সঙ্গে রোগীর মানসিক অবস্থার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং নির্ভীকভাবে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি উভয়ের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ায় এবং সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
* জীবনধারা পরিবর্তনের প্রভাব
হৃদরোগের সঙ্গে মানিয়ে চলতে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-একসঙ্গে যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা, স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং সক্রিয় থাকার জন্য নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো দাম্পত্য জীবনকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
* পরিশেষে
হৃদরোগ একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা হলেও, সচেতনতা, ধৈর্য এবং সঙ্গীর সহযোগিতার মাধ্যমে হৃদরোগীদের দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও সফল রাখা সম্ভব। দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সমর্থন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা হৃদরোগীদের জন্য এক নতুন আশার আলো নিয়ে আসতে পারে। এজন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস, মালিবাগ, ঢাকা।