Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

কিটো ডায়েট : ভুল পন্থায় ওজন কমাচ্ছেন না তো!

Icon

নাজিয়া আফরিন

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কিটো ডায়েট : ভুল পন্থায় ওজন কমাচ্ছেন না তো!

কিটোজেনিক ডায়েট হলো সুপার লো-কার্ব ডায়েট। স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে কিটো ডায়েট বেশ পরিচিত একটি নাম। এ ডায়েট গ্রহণে ক্ষুধা কমে যায়।

* কিটো ডায়েটের ধরন

▶ স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট : এতে কার্ব ৫ শতাংশ, প্রোটিন ২৫ শতাংশ আর ফ্যাট ৭৫ শতাংশ থাকে।

▶ টার্গেটেড কিটোজেনিক ডায়েট : স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েটের মতোই এ ডায়েট অনুসরণ করতে হয়। তবে একজন মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কেমন হয় আর তার ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় শর্করা যোগ করা হয়।

▶ সাইক্লিকাল কিটোজেনিক ডায়েট : এ ডায়েটে সপ্তাহে খাবারে পাঁচ দিন শর্করা বাদ দিতে হয় এবং বাকি দুই দিন বেশি শর্করা যোগ করতে হয়।

▶ হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট : এ পদ্ধতিতে প্রোটিন ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়ে যায়। এতে ফ্যাট ৬০ শতাংশ, প্রোটিন ৩৫ শতাংশ আর শর্করা ৫ শতাংশ। বডিবিল্ডার বা অ্যাথলেটরা সাধারণত এ ডায়েট অনুসরণ করে থাকে।

* কার জন্য প্রযোজ্য

▶ ওজন হ্রাস : একটি কেটোজেনিক ডায়েট সাধারণত প্রথম ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত বেশি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

▶ হৃদরোগ : এ ডায়েট গ্রহণের ফলে, খাবারের ইনসুলিনের নিু স্তর শরীরকে আরও কোলেস্টেরল তৈরি করতে বাধা দিতে পারে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, শক্ত ধমনি, হার্ট ফেইলিউর এবং হার্টের অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা কম। এটা অবশ্য প্রমাণিত নয় এবং এর প্রভাবও ক্ষণস্থায়ী।

▶ ব্রণ : কার্বোহাইড্রেটগুলো ত্বকের অবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্রণ হ্রাস করা সাহায্য করতে পারে এবং এ ডায়েট ব্রণের প্রকোপ বন্ধ করতেও সাহায্য করতে পারে।

▶ ডায়াবেটিস : কম ডায়েট রক্তে শর্করাকে কম রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন শরীর তার শক্তির জন্য চর্বিকে পোড়ায়, তখন এটি কিটোন নামক যৌগ তৈরি করে। কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে, বিশেষ করে টাইপ-১, তাহলে রক্তে অনেক বেশি কিটোন অসুস্থ করে তুলতে পারে।

▶ মৃগী রোগ : কিটোজেনিক ডায়েট এ অবস্থার কারণে সৃষ্ট খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে।

▶ অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি : এ ডায়েট মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে প্রভাবিত করে, সেসঙ্গে স্নায়ুগুলোকে একত্রে সংযুক্ত করে। মৃগী, আলঝেইমার, পারকিনসন রোগ এবং ঘুমের ব্যাধিসহ কিটোজেনিক ডায়েট দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

* যেসব সমস্যা হতে পারে

▶ পানিশূন্যতা : কার্ব কম হওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। প্রতি ১ গ্রাম কার্ব ৩ গ্রাম পানি ধরে রাখে। তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে বেশি পানি খেতে হবে। দিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার পানি গ্রহণ করতে হবে। পানি আর মিনারেলের ঘাটতি কমাতে দিনে ১.৫-২ চা চামচ লবণ সারা দিনের খাবারে খেতে হবে।

▶ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা : কার্ব কম খাওয়ার কারণে শরীরে ফাইবারও কম হয়। আর ফাইবার কম হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবেই।

▶ একাধিক শারীরিক সমস্যা : সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত মাথা যন্ত্রণা, ক্লান্তি, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, ঘুম কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং শরীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরোনো, মাসল ক্র্যাম্প, নানা ধরনের পেটের রোগ এবং কিডনিতে স্টোন হওয়ার মতো রোগও হতে পারে।

▶ হজমের সমস্যা : কিটো ডায়েটের সাধারণ সমস্যার মধ্যে হজমের গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে, যেমন-ডায়রিয়া, বমিভাব, গ্যাস বা পেটফাঁপা।

▶ দেহে ভিটামিন ও খনিজের স্বল্পতা : বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খাওয়ার পরিমাণ কিটো পদ্ধতিতে কমিয়ে দেওয়া হয়। বেশিমাত্রায় কার্ব খাওয়া কমানোর ফলে, শরীরে নানা পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। বিশেষ করে এ ডায়েটে ফোলেট ও থিয়ামিনের পাশাপাশি ভিটামিন এ, বি-সিক্স, বি-টুয়েল্ভ, সি, ই এবং কে-এর অভাব দেখা দেয়। ফলে হাড়, বিপাক প্রক্রিয়া, মাড়ি, লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ে।

* এ ডায়েটে যেসব খাবার খাওয়া যায় না

▶ চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোনো কিছু একদম বাদ। কোমল পানীয়, ফলের জুস, কেক, আইসক্রিম, চকলেট, স্মুদি, যে কোনো ধরনের মিষ্টি।

▶ আটার তৈরি খাবার, ভাত, পাস্তা, নুডলস, ওটস, কর্নফ্লেক্স খাওয়া যায় না।

▶ ফলে প্রচুর পরিমাণ শর্করা থাকায় সব ধরনের ফল নিষেধ।

▶ সব ধরনের ডাল নিষেধ।

▶ আলু, মুলা, গাজর, কচু এসব বাদ দিতে হয়।

▶ যে কোনো ধরনের প্রসেসড ফুড একেবারে বাদ দিতে হয়।

* কী কী খাওয়া যায়

গরু, মুরগি, সব ধরনের মাছ, ডিম, বাটার, পনির, দই, ঘি, বাদাম, হেলদি অয়েল যেমন-অলিভ ওয়েল, কোকোনাট ওয়েল, সূর্যমুখী অয়েল, যে কোনো লাল-সবুজ সবজি, পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, সব ধরনের মসলা, ফলের মধ্যে জলপাই, অ্যাভোকাডো, স্ট্রবেরি, লেবু এসব খাওয়া যায়।

লেখক : স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, নারী মৈত্রী।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম