Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

স্তন ক্যানসার

শুরুতেই রোগ নির্ণয় জরুরি

অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস

Icon

ডা. আলী নাফিসা

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শুরুতেই রোগ নির্ণয় জরুরি

স্তন ক্যানসার

বিশ্বব্যাপী নারীরা যে ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার শতকরা ৩০ ভাগই স্তন ক্যানসার। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জন স্তন ক্যানসারে ভোগেন। বাংলাদেশে এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। ৩৫ বছর বয়সের পর নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে স্তন ক্যানসারে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো সম্ভব।

** কেন হয়

নারীর বয়স যত বৃদ্ধি পায়, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বেড়ে যায়। এ ছাড়া আরও কিছু কারণে স্তন ক্যানসার হতে পারে। যেমন-

* পরিবারে কারও স্তন ক্যানসার থাকা।

* শরীরে বিআরসিএ-১, বিআরসিএ-২ ও টিপি-৫৩ নামক স্তন ক্যানসার সৃষ্টিকারী জিনের অস্তিত্ব।

* স্তনের অস্বাভাবিক ঘনত্ব।

* অনিয়মিত পিরিয়ড।

* ৫ বছরের অধিক জন্মনিরোধক ওষুধ সেবন।

* ৩০ বছর বয়সের পর গর্ভধারণ।

* মেনোপজের পর দীর্ঘমেয়াদি হরমোন থেরাপি নেওয়া।

* ধূমপান ও মদ্যপান।

* নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করা।

* স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কী

স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং হলো ক্যানসারের কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। অনেক সময় স্ক্রিনিং পরীক্ষায় খুব ছোট আকৃতির টিউমার শনাক্ত হয়, যা হয়তো ক্যানসার হতে পারে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে শুরুতেই এটি ধরা পড়লে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

* কেন প্রয়োজন

স্ক্রিনিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো-কোনো উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যে, রোগটি সুপ্ত অবস্থায় আছে কি না। এর মাধ্যমে ক্যানসার গুরুতর পর্যায়ে যাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমানো যায়। ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে স্ক্রিনিং পরীক্ষা করলে অনেক সময় স্তন ক্যানসার সৃষ্টি হওয়ার ১০ বছর আগেই তা শনাক্ত করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ টিউমারের আকার ১ সেমি থাকা অবস্থায় এটি শনাক্ত করা হলে, অনেক সময় কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কেমোথেরাপি দিলেও খরচ অনেক কম লাগে। আবার পুরো স্তন ফেলতে হয় না। রোগীও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই ৩৫ বছর বা এর বেশি বয়সি সব নারীর উচিত চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতি ১ বা ২ বছর পরপর স্ক্রিনিং করানো।

* যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে

সাধারণত, যাদের স্তন ক্যানসারের লক্ষণ নেই কিন্তু ঝুঁকি রয়েছে তাদের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয়। যেসব নারীর স্তন ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহৃত স্ক্রিনিং পদ্ধতি হলো ম্যামোগ্রাফি। ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে স্তন ক্যানসারের কোনো লক্ষণ আছে কি না, তা শনাক্ত করা হয়। কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন-আলট্রাসাউন্ড-গাইডেড কোর ব্রেস্ট বায়োপসি, এমআরআই গাইডেড কোর বায়োপসি এবং কিছু ক্ষেত্রে-স্টেরিওট্যাক্টিক বায়োপসি করা হয়।

* আক্রান্ত নারী কী গর্ভধারণ করতে এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন

কেমোথেরাপি দেওয়ার পর শতকরা ৬৫ জন নারী প্রজননক্ষমতা হারান। তাই কেমোথেরাপি দেওয়ার আগেই তাদের ডিম্বাণু বা প্রজনন টিস্যু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অবিবাহিত মেয়েদের ডিম্বাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যদিকে, বিবাহিত নারীদের সংরক্ষণ করতে হবে ডিম্বাণু কোষ ওসাইট ও নিষিক্ত ডিম্বাণু জাইগোট। চিকিৎসার দুই বছর পর আবার গর্ভধারণের চেষ্টা করা যেতে পারে। আর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত কোনো মা তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন না।

* গর্ভাবস্থায় স্তন ক্যানসার শনাক্ত হলে কি গর্ভপাত জরুরি

যদি গর্ভাবস্থায় কোনো নারীর স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভপাত না করলেও সমস্যা হয় না। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই নিয়মিত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। ২য় ও ৩য় ত্রৈমাসিকের সময় কেমোথেরাপি দেওয়া যেতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় রেডিওথেরাপি দেওয়া যাবে না। সন্তান প্রসবের পর রেডিওথেরাপি দেওয়া যেতে পারে।

* স্তন ক্যানসার হলে কি পুরো স্তনই ফেলে দিতে হবে

বর্তমানে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্রেস্ট কনজারভিং থেরাপি পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ ব্রেস্ট সার্জনের দ্বারা পুরো স্তন না ফেলে ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। তবে টিউমারের ধরন ও ক্যানসারের বিস্তার অনুযায়ী কখনো কখনো পুরো স্তনই ফেলে দেওয়া লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্তনের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রাখতে সিলিকন ইমপ্লান্ট ব্যবহার করা হয়।

** প্রতিরোধের উপায়

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধের সুনির্দিষ্ট কোনো উপায় না থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে কিছু সচেতনতা অবলম্বন করলে এর ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। এজন্য প্রত্যেক নারীর উচিত-

* স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

* প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট ব্যায়াম করা।

* ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা।

* মেনোপজের পর দীর্ঘমেয়াদি কোনো হরমোন থেরাপি না নেওয়া।

* বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানো।

* দীর্ঘদিন জন্মনিরোধক ওষুধ সেবন না করা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ, অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জন ট্রেইন্ড অন অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জারি (ইউকে)। চেম্বার : ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম