মুখের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ জরুরি
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মুখের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ জরুরি
দাঁত বা মাড়ির রোগে আক্রান্ত হয়নি এমন রোগীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অথচ একটু সচেতন হলে এসব রোগের সিংহভাগ প্রতিরোধ সম্ভব। মুখ পরিষ্কারে অবহেলা না করলেও মুখের মধ্যে নানা লুকায়িত অংশ পরিষ্কার রাখা দুষ্কর, তার ওপর যাদের এলোমেলো দাঁত, লালা নিঃসরণ কম, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, ইনহেলার ব্যবহারকারী, ক্যানসারের রোগী, অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসসহ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মুখের অভ্যন্তরের স্বাস্থ্য হুমকিতে থাকে।
* কারণ
মুখের মধ্যকার প্রায় সব রোগ শুরুতে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। নিয়মমাফিক ডেন্টাল চেকআপে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা হয় সহজ, সময় কম লাগে, এমনকি চিকিৎসা খরচও নাগালের মধ্যে থাকে। অনেকের ধারণা দাঁতের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পেছনে মূল কারণ রোগ পুষে রেখে জটিলতা বাড়ানো। যেমন-
* ডেন্টাল ক্যারিজ
দাঁতের গর্ত তৈরির শুরু থেকে ব্যথা, অনুভূতি বা মজ্জা আক্রান্ত হতে অনেক সময় লাগে। প্রথমে দাঁতের মধ্যে ছোটকালো দাগের মতো হয়, দুই দাঁতের মধ্যবর্তী বা যেকোন পৃষ্ঠে খাবার আটকায়, দুর্গন্ধ, শিনশিন অনুভূতি হওয়া সত্ত্বেও যারা রোগ পুষে রাখে, সময়ের সঙ্গে সে সংক্রমণ ভেতরের মজ্জাকে আক্রান্ত করবেই। প্রাথমিক পর্যায়ে ফিলিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্ত দাঁত সুস্থ হলেও মজ্জা আক্রান্ত হলে রুট ক্যানেল চিকিৎসা ও কৃত্রিম মুকুট সংযোজনের প্রয়োজন হয়। দাঁতে গর্ত হলে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা, ওষুধ বা অন্যকোন উপায়ে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যারা ওষুধ খেয়ে সাময়িক কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেন তারাও বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন। কিডনি, পরিপাকতন্ত্র, অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্সসহ চোয়ালের মধ্যে সিস্ট, টিউমারসহ বড় ধরনের প্রদাহের আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসক সাধারণ পর্যবেক্ষণে বা ক্ষেত্রবিশেষে এক্সরের মাধ্যমে সহজেই দাঁতের গর্ত শনাক্ত করতে পারেন।
* মাড়ি রোগ
▶ স্কেলিং : খুব সাধারণ ও নিরাপদ এ চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি। কারণ এর মাধ্যমে দাঁতের পৃষ্ঠে জমে থাকা জীবাণু ও পাথর দূর হয়। অবহেলিত মুখে এসব জমে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। মাড়ি রোগকে নিরব ঘাতক বলার কারণ, এখান থেকে শুধু দাঁত ও দাঁতের ধারক কলা বিনষ্ট হয় না, রক্ত বাহিকায় মিশে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস বা কিডনি রোগসহ নানা জটিলতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভকালীন মাড়ি রোগ অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস জটিলতা, অপুষ্টিসহ নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে মাড়ি রোগ অনেকে বুঝতে পারে না। সামান্য রক্তপাত হলেও গুরুত্ব দেয় না। তখন চিকিৎসায় সফলতার হার কমতে থাকে। ডেন্টাল চিকিৎসক মাড়ি রোগের শুরুটা শনাক্তসহ সহজ চিকিৎসায় রোগ মুক্ত করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক অন্যান্য রোগ যেমন-লিভারের রোগ, রক্তের রোগ যেমন, হিমোফিলিয়া থেকে ব্লাড ক্যানসার পর্যন্ত মাড়ি রোগ থেকে শনাক্তের অনেক ইতিহাস আছে।
* মুখের ঘা বা ক্ষত
মুখের অভ্যন্তরের যেকোন ধরনের ঘা, রং পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে হতে পারে ক্যানসারের মতো ভয়ঙ্কর জটিলতা। চিকিৎসক সাধারণ পর্যবেক্ষণে, ক্ষতর ধরন নিশ্চিত করতে পারেন, জটিলতা বাড়লে কিছু ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন পড়ে।
* শিশুদের দুধদাঁত
অনেকেই মনে করেন দুধদাঁতের স্থায়িত্ব কম বলে এর চিকিৎসা বা সাধারণ ডেন্টাল চেকআপের প্রয়োজন নেই। দুধদাঁত নষ্ট বা রোগাক্রান্ত থাকলে বাচ্চার মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। দাঁত এলোমেলা হয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করে, তখন প্রয়োজন পড়ে ব্যয়বহুল অর্থোডন্টিক চিকিৎসা। বাচ্চাদের মিষ্টি জাতীয় খাবারে দুর্বলতার কারণে দাঁতে গর্ত অনেক বেশি দেখা যায়। রেগুলার ডেন্টাল চেকআপে যেমন বাচ্চাদের দাঁত ভালো রাখে, তেমনি অকারণ ডাক্তারভিতিও কমে। মুখ শরীরের প্রধান প্রবেশ দ্বার। মুখের মধ্যেই বাস করে অগণিত জীবাণু, রেগুলার ডেন্টাল চেকআপ ছাড়া মুখের স্বাস্থ্যরক্ষা ও সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা অনেকটাই দুষ্কর।
লেখক : ডেন্টাল সার্জন, রাজ ডেন্টাল সেন্টার-১, কলাবাগান, ঢাকা।