পড়াশোনায় অমনোযোগিতা
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পড়াশোনায় অমনোযোগিতা
একালের শিশু-কিশোরকে মেধা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হয়। সে কারণে মেধামননে পিছিয়ে থাকা শিশুর সংকট যথাসময়ে চিহ্নিত করে সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রয়োজন। নয়তো পরবর্তী জীবনে-স্কুল পারফরম্যান্স, উচ্চ শিক্ষালাভ, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি, চাকরি ক্ষেত্র, বৈবাহিক বন্ধন, সবখানে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।
* পড়াশোনায় সমস্যা তৈরির প্রধান কারণ-
▶ অনিদ্রা : শৃঙ্খলাবিহীন টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখা, অতিরিক্ত হৈ-চৈ বা ঘিঞ্জি পরিবেশও এজন্য দায়ী।
▶ সমস্যা খাবারে : গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুর সামগ্রিক পুষ্টি ঠিক আছে কিনা দেখা। সমস্যা তখনি হয় যদি সে কম ক্যালরি, কম প্রোটিন বা অন্যান্য পুষ্টিমানের অভাবে ভোগে। যে শিশু ঠিকমতো ওজনে বাড়ছে না, বা আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতায় ভোগে, তার অমনোযোগিতা দেখা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
▶ বেশি পড়ার চাপ : পড়ার বেশি চাপ শিশুকে ক্লান্ত করে, তার ফলও ভাল হয় না। কাজেই সবকিছু পরিমিত হওয়া দরকার।
▶ ঘরে অশান্তি : ঘরে নিত্যকার ঝগড়া শিশুকে মানসিকভাবে, কখনো বা শারীরিকভাবে আঘাত করে। তাই স্কুলে এলেই সে মন দিতে পারে না, দুশ্চিন্তায় ডুবে যায়, হতাশায় বুঁদ হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বাড়ির অত্যাচারের শোধ তুলতে স্কুলে এসে হাঙ্গামা বাধায়।
▶ স্কুল ফোবিয়া : শিশু স্কুলে যেতে চায় না। এর থাকতে পারে নানা কারণ। ঘর থেকে অনেকক্ষণ পৃথক সময় কাটানোর ভয়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে সম্পর্ক, স্কুল টয়লেট- নানাভাবের দুশ্চিন্তায় সে ভড়কে যায়।
▶ আচার-ব্যবহারে গণ্ডগোল : স্কুল পালানো, ক্লাস রুমে একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে থাকা-এসব গণ্ডগোল করে থাকে কিছু শিশু। এ শিশুকে নষ্ট বলে খারিজ করে না দিয়ে আরও উষ্ণ ভালোবাসা, শৃঙ্খলা, ও পঠন-পাঠে উদ্দীপ্ত করে তুলতে হবে।
▶ ডিপ্রেশন : এটি বেশি দেখা যায় সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এধরনের শিশু সামান্য কারণে আপসেট হয়ে যায়, বা অনেকটা অকারণে কেঁদে দেয়। এই সাময়িক ডিপ্রেশন কখনো মারাত্মক হয়ে দেখা যেতে পারে। এমনকী শিশু সুইসাইডের মতো সিদ্ধান্তও নিয়ে নেয়।
▶ মনোযোগী হতে পারে না : এক্ষেত্রে সে বেশিক্ষণ কোনো বিষয়ে স্থির থাকতে পারে না। ভালোভাবে শেখানোর পরও ফল ভালো করে না। অমনোযোগিতার আরও পিছিয়ে দেয়। কানে শোনার সমস্যা, ক্লান্তি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মানসিক বৈকল্য, মৃগী রোগ ( যেমন পেটিট মোল এপিলেপসি) শিশুর মনোযোগ না থাকার কারণ হতে পারে।
▶ মাদকাশক্তি : মাদকাশক্তি অনেক সময় ধরা পড়ে না। শিশুর খাবার, আচার-আচরণের গোলমাল দেখা গেলে এটা ভাবা দরকার।
লেখক : প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।