Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

মেনোপজ

নারীত্বের নতুন অধ্যায়

Icon

ডা. নাজমা আক্তার

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নারীত্বের নতুন অধ্যায়

কমপক্ষে এক বছর নারীদের মাসিকের রক্তস্রাব বা মেনোস্ট্রেশন বন্ধ থাকার পরবর্তী সময়কে মেনোপজ বলা হয়। এটি হতে পারে ৪৫ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে যে কোনো সময়। কারও কারও ক্ষেত্রে এক-দুই বছর আগে বা পরেও হতে পারে। তবে গড়পড়তায় ৫১ বছরের মধ্যেই বেশির ভাগ নারীর মেনোপজ হয়ে থাকে। মেনোপজ পরবর্তী সময়কে বলা হয় পোস্ট মেনোপজ সময়কাল। বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেনোপজের বছরখানেক আগ থেকেই নানা রকম শারীরিক সমস্যা বা অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা যায়। যা সাধারণত মেনোপজের পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে কমে যায়। এ সময় মহিলাদের শরীরে প্রয়োজনীয় কিছু হরমোনের হ্রাস, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির কারণে নানা ধরনের শারীরিক উপসর্গ, রোগের লক্ষণ বা রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন-হৃদরোগ, হাড় ক্ষয় ইত্যাদি। এ সময় কারও অনিদ্রা, মুড সুইং, তীব্র গরম বোধ, বিষণ্নতা, অ্যাংজাইটি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়। এসব কিছুই ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক শরীরতাত্ত্বিক পরিবর্তন। তাই বলে এ সময়টা একজন নারীর জীবনের শেষ অধ্যায় নয়। আসলে এটি একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু। এ সময় নিজের প্রতি যত্নশীল হয়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মোকাবিলা করে যে কেউ সক্ষম, সুস্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন।

* কখন বুঝবেন মেনোপজ হয়েছে

মেনোপজের ১-২ বছরের আগে থেকেই কারো কারো মাসিক রক্তস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তারপর অন্ততপক্ষে এক বছর সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পরবর্তী সময়কে বলা হয় পোস্ট মেনোপজ সময়কাল। কখনও কখনও একজন চিকিৎসক রক্তের ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (Follicle Stimulating Hormone)-এর মাত্রা দেখে নিশ্চিত করে থাকে মেনোপজের ব্যাপারে। যা এ সময়ে রক্তে অধিক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

* মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ

মেনোপজ পরবর্তী নানা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা যায়, যা একেকজনের জন্য একেক রকমও হতে পারে। সাধারণত নিুলিখিত পরিবর্তন বা লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়-

▶ তীব্র গরম অনুভূত হয় যাকে হট ফ্লাস বলা হয়।

▶ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।

▶ মুড বা মানসিক অবস্থার হঠাৎ তারতম্য।

▶ কাজে অনীহা বা উদ্যমহীনতা।

▶ ঘুমের ব্যাঘাত বা ইনসমনিয়া।

▶ হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।

▶ প্রস্রাবের সংক্রমণ।

▶ মাসিকের রাস্তায় সংক্রমণ বা শুষ্কতা।

▶ অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব করা।

▶ অবসাদগ্রস্ততা, হতাশা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা অযথা ভয় পাওয়া ইত্যাদি।

কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধের ১-২ বছর আগ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ মেনোপজের ১০-১২ বছর পর পর্যন্ত এ উপসর্গগুলো থাকতে পারে। তারপর লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে।

* কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

মেনোপজ ও মেনোপজ পরবর্তীকালে যে কোনো ধরনের রোগ বা রোগের উপসর্গে অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বছরে নিয়ম করে ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। যেমন-রক্তের কোলেস্টেরল, সুগার, ম্যামোগ্রাফি, প্রয়োজনে ইসিজি, প্যাপ স্মিয়ার, কোলোনোস্কোপি ইত্যাদির কারণে এ সময় নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। যেমন-

▶ হৃদরোগ ও রক্তনালির নানা সমস্যা।

▶ হাড়ক্ষয় ও অস্টিওপোরোসিস।

▶ মূত্র বা মূত্রথলির প্রদাহ।

▶ অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাব।

▶ সেক্সুয়াল ক্ষমতা হ্রাস বা অনাগ্রহ।

▶ ওজনাধিক্য বা স্থূলতা ইত্যাদি।

রোগের ঝুঁকি, রোগ লক্ষণ ও প্রকারভেদ অনুযায়ী চিকিৎসক পরবর্তী পরীক্ষা বা পরবর্তী চেকআপের দিন ধার্য করে দেবেন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মেনোপজ পরবর্তী বেশিরভাগ লক্ষণই স্বল্পমেয়াদি। একজন মহিলা এ সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন থেকে এটি সুস্থ, কর্মক্ষম ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারেন। এ সময় সবচেয়ে প্রয়োজন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের মানসিক সহযোগিতা। সুষম খাদ্য তালিকা, দৈনন্দিন ব্যায়াম, পরিমিত বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম এ সময়ের অনেক রোগ ও রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বর্তমানে মেনোপজের লক্ষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের নানা চিকিৎসা রয়েছে। রয়েছে নানা রকম হরমোন থেরাপিও। প্রয়োজনে চিকিৎসক রোগীর জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদান করবেন।

প্রত্যেক নারীই আলাদা আর সবাইকে নিজ প্রয়োজন বা সমস্যা অনুযায়ী সমাধানের পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখবেন, মেনোপজ একজন নারীর নারীত্বের অবসান নয়, বরং নারীত্বের এক নতুন অধ্যায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস রোগ বিভাগ, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম