
প্রিন্ট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
পিলখানা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে শহিদ পরিবার
বিডিআর জওয়ানদের ঢালাওভাবে নিরপরাধ দাবি কষ্টদায়ক

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের (বর্তমানে বিজিবি) ঢালাওভাবে নিরপরাধ দাবি ও প্রচারের ঘটনাকে বেদনায়ক ও কষ্টদায়ক বলে জানিয়েছেন ওই ঘটনায় বেঁচে ফেরা ব্যক্তি ও শহিদদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, সিভিল আদালত ও বিডিআর আদালতে বিপথগামী জওয়ানদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়। তাই অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত জওয়ানদের নিরপরাধ বলার কোনো সুযোগ নেই এবং তাদের মুক্তির দাবি অযৌক্তিক। বুধবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের অ্যাঙ্কর হলে ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারবর্গ ও বেঁচে ফেরা সেনা অফিসারদের’ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। তাদের দাবি, সব অপরাধীর প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকর করে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ঘটনার সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বিডিআর গণহত্যায় অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত সৈনিক ও তদের পরিবার গত ১৫ বছর কোনো দাবি নিয়ে মাঠে আসতে আমরা দেখিনি। কিন্তু আজ তারা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের নিরপরাধ দাবির আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করার অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাদের এ দাবির মাধ্যমে জাতির দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত খুনিদের আড়ালের মাধ্যমে বর্তমানের ছাত্র-জনতার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার আপচেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সেনা কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপপ্রয়াস চলছে। এ খুনিদের যথাযথ বিচার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র জড়িত আছে বলে জাতি বিশ্বাস করে, যা বর্তমান সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এর পেছনের পরিকল্পনকারী, মদদদাতা ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচারে দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচার করতে হবে। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহিদ সেনা দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন বক্তৃতা করেন নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনরা। তারা বলেন, সেদিন বিডিআর জওয়ানরাই কর্মকর্তাদের হত্যা করার পর উল্লাস করেছে, লাশ বিকৃত করেছে, অফিসারদের পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বাসস্থানে ধ্বংসযজ্ঞ-লুটপাট চালিয়েছে।
শহিদ কর্নেল কুদরত এলাহির ছেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক সাকিব রহমান বলেন, একটা মানুষ যদি বন্দুক ধরে তাহলেই সেটা বিদ্রোহ। শুধু যদি সেটা বিদ্রোহ হতো বিষয়টা তো এমন না। তারা খুন করেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বারবার বলা হচ্ছে একটা ন্যারেটিভের কথা যে, শুধু শেখ হাসিনা আর ইন্ডিয়াই বুঝি এটা করিয়েছে। তারা করাতে পারে, হতে পারে তারা করিয়েছে-সেটা কমিশনকে বের করতে দেন। যথেষ্ট অ্যাভিডেন্স আছে আমাদের। কিন্তু এটা করেছে যারা, তাদের আপনারা (জেল থেকে) বের করে দেবেন? এটা কি সম্ভব?
সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর-এর ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার নিহত কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিন ফেরদৌসী বলেন, সংগত কারণে বিগত ১৬ বছরে আমরা কিছু বলতে পারিনি। আজ আমরা জনসমক্ষে এসেছি-যেন বিচার শুরু হয়। দোষীরা যেন শাস্তি পায়। যেভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি-ঢালাওভাবে, এমনকি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মুক্তির জন্য যেভাবে আবেদন আসছে, সেগুলো যেন সত্যি সত্যি না হয়। সেই শঙ্কায় আজ আমাদের এ সংবাদ সম্মেলন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারানো একমাত্র ব্যক্তি সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, আমার বাবা একমাত্র যিনি হত্যাকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। আজ এখানে আমার উপস্থিতি প্রমাণ করে এটা বিডিআর এবং সেনাবাহিনীর বিরোধ না। এটা হত্যাকারীর সঙ্গে নৃশংসতাকারীর সঙ্গে আমাদের বিরোধ। আমার বাবা হত্যাকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তার বাহিনীর সদস্যরাই তাকে লোহার স্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে, পেটে ক্ষতবিক্ষত করে, বার্স্ট ফায়ার করে পরে অফিসারদের সঙ্গে আমার বাবাকেও গণকবরে ফেলা হয়।