শিশুর নিউমোনিয়ার চিকিৎসা
আশা জাগাচ্ছে বাবলসিপ্যাপ
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় বেশি কার্যকর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শিশুর নিউমোনিয়া ও অক্সিজেনের ঘাটতি চিকিৎসায় আশা জাগাচ্ছে ‘বাবলসিপ্যাপ’। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি বাবলসিপ্যাপ মূলত, প্লাস্টিকের বোতল, একটি নল ও কিছু সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি। এটি প্রস্তুত করতে খরচ পড়ে প্রায় দুই ডলার (২৪০ টাকা)। এই প্রযুক্তি দিয়ে তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বা অক্সিজেন স্বল্পতায় ভোগা শিশুদের অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। (বাবলসিপ্যাপ) উদ্ভাবন করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানী মোহাম্মদ জুবায়ের চিশতি ও তার কিছু সহকর্মী।
রোববার আইসিডিডিআর,বি স্থানীয়ভাবে তৈরি সাশ্রয়ী মূল্যের শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক বাবলসিপ্যাপ উদ্ভাবনের সম্ভাবনা তুলে ধরতে মহখালীতে একটি বিশেষ সেমিনার আয়োজন করে। সেখানে জানানো হয় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় বাবলসিপ্যাপ বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি সীমিত সম্পদযুক্ত অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া সম্পর্কিত মৃত্যু হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি অধ্যাপক ডা. মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মাজহারুল শাহীন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম জেনারেল হাসপাতাল (চাইল্ড ও মাদার উইং) এর পেডিয়াট্রিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবিদ হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বিতে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাবলসিপ্যাপ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবিত লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় ৭৫ শতাংশ মৃত্যু হার কমাতে সাহায্য করে। বাবলসিপ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসাপ্রাপ্ত শিশুদের মধ্যে উচ্চ-ফ্লো এবং লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় চিকিৎসার ব্যর্থতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর সহজ নকশা এবং সাশ্রয়ী উৎপাদন সত্ত্বেও, যন্ত্রটি অনেক উন্নত শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্রের চেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’
অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘আমি সবসময় বাবলসিপ্যাপের কথা শুনেছি। আমার ধারণা ছিল না যে এটি এত ভালো কাজ করে। আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কেননা তারা এমন একটি দেশীয় উদ্ভাবনকে প্রচারে সহায়তা করছে। আইসিডিডিআর,বির এ ধরনের উদ্ভাবন এবং বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য যারা মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমি তাদের প্রশংসা করি।’
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘বাবলসিপ্যাপের সাফল্য স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনগুলোর প্রভাবের একটি সাক্ষ্য। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা। যাতে নিউমোনিয়া থেকে আমাদের দেশের আরও শিশুর জীবন রক্ষা করা যায়।’
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. মোহাম্মদ জুবায়ের চিশতী বলেন, ইতোমধ্যে আফ্রিকার ৩৭টি ইথিওপিয়াতে ২৪টি, নাইজেরিয়াতে ১২টি এবং মালাউইতে একটি হাসপাতালে ইমপ্লেমেন্টেশন রিসার্চের মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে।
সেমিনারে ইথিওপিয়ায় বাবলসিপ্যাপের সফল বাস্তবায়ন সম্পর্কেও তুলে ধরা হয়। জেলা পর্যায়ের ১২টি হাসপাতালে পরিচালিত কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্যতা পরীক্ষার পর দেখা যায়, বাবলসিপ্যাপ, সাধারণ লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় ৭৪ শতাংশ চিকিৎসা ব্যর্থতা এবং ৮৬ শতাংশ মৃত্যু হার কমাতে সহায়ক হয়েছে। ইথিওপিয়ায় পাওয়া সাফল্য এবং বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টাগুলোর মাধ্যমে বিসিপ্যাপ বৈশ্বিকভাবে নিউমোনিয়া সম্পর্কিত মৃত্যুহার কমাতে নিশ্চিতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। আইসিডিডিআর,বির লক্ষ্য অনুযায়ী নেপাল এবং অন্যান্য দেশে এর ব্যবহার সম্প্রসারণ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র-৩ অর্জনের ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।