যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাকশন
সরিয়ে দেওয়া হলো পিডিবির সেই মহা দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানকে
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সেই বিতর্কিত ও মহা দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানকে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নেবেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম।
তবে আরও ৫ দিন পরিচালক মাহবুবুর রহমানকে কেন এই পদে রাখা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ সময়ে তিনি বিগত সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির ফাইলগুলো সরিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ডান হাত ছিলেন মাহবুব। তার হাত দিয়ে অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন, নবায়ন ও বিদ্যুৎ বিলের ছাড় করা হয়েছে। নসরুল হামিদের সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি, টাকা পাচার, কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুগান্তরে ‘বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের মহোৎসব, বিপুর নেতৃত্বে মাফিয়া সিন্ডিকেট’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এ রিপোর্টে প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানকে বিপু সিন্ডিকেটের অন্যতম গডফাদার হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এসব ঘটনাকে লুটপাটের মহোৎসব হিসাবে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব অপকর্মের নেপথ্যে ছিল একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। প্রায় একযুগ এর (সিন্ডিকেট) নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে সব অপকর্মকে নির্বিঘ্ন করতে যারা কলকাঠি নাড়তেন, তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস।
ওই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। আর সিন্ডিকেটের অবৈধ আয়ের হিসাবনিকাশের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মুজাহিদুল ইসলাম মামুন, কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী শাহীন চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর সকাল থেকে সারা দেশে থেকে যুগান্তর কার্যালয়ে টেলিফোনে ধন্যবাদ জানান অসংখ্য সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত বিভিন্ন পদের অফিসার ও খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, অবিলম্বে সরকারের উচিত এই মহা দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে তার ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য জনসম্মুখে তুলে ধরা। তারা একই সঙ্গে মাহবুবুর রহমানের সিন্ডিকেট সদস্যদেরও নাম প্রকাশ করার অনুরোধ জানান।
অভিযোগ আছে, প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে তার চিফ স্টাফ অফিসার মনিরুজ্জামান, ডেপুটি ডাইরেক্টর (পারসোনাল) বনি আমিন, জেনারেল ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) মফিজুর রহমান, আইপিপি সেল-১-এর পরিচালক শামসুদ্দোহা কবীর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের প্রধান নিরোধ চন্দ্র মন্ডল ও ডিজাইন বিভাগ-১-এর পরিচালক তারেক আবদুল্লাহ অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাহবুবুর রহমানের পাশাপাশি তার এই সিন্ডিকেট সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে না দিলে পিডিবিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কারণ, তাদের সহায়তায় চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান তার সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। এ সিন্ডিকেটকে শুধু সরালেই হবে না, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে মামলা করে তাদের সম্পদ ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে হবে।