জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
গণরুম থেকে ডেকে নিয়ে দুই ছাত্রকে মারধর
ইমরানকে ছাদে পেটানোর পর রুমে রড দিয়ে মারধর * ‘মারুফ ভাই প্রায়ই চড়থাপ্পড় মারে’
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অভিযুক্ত ফয়সাল মারুফ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে গণরুম থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের তৃতীয় তলায় ৩৫১ নম্বর কক্ষের পাশে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন-নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান ও একই বর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুল ইসলাম পিকুল। আর অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের একই বর্ষের রাকিব। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওইদিন রাতে গণরুমের দরজা ভাঙচুর করেছে।
ভুক্তভোগীদের সহপাঠী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের নাঈম বলেন, ঘটনার সময় আমরা সবাই গণরুমে ছিলাম। তখন দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মারুফ ভাই গণরুম থেকে ইমরানকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রথমে তাকে হলের ছাদে নিয়ে পেটানো হয়। পরে ৩৫১ নং রুমে নিয়ে আবারও রড দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। এছাড়াও মারুফ ভাই প্রায়ই কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের এসে চড়থাপ্পড় মারে।
সেদিন ইমরানকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার সময় গণরুমে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার বিকালে মারুফ গণরুমের দরজায় লাথি দিয়ে ঢুকে ইমরানকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে ৩৫১ নং কক্ষ থেকে তার চিৎকার-চেঁচামেরির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। মারধরের আগে মারুফকে ওই কক্ষে রড নিয়ে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল বলে জানায় তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রাধ্যক্ষ কমিটির সদস্যরা সেদিন রাতে গণরুমে গেলে তাদেরকেও একই বর্ণনা দেন গণরুমের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইমরান বলেন, তিন দিন আগে ৫০ ব্যাচের মারুফ ও রাকিব আমাকে ডেকে নিয়ে সেক্রেটারির গ্রুপে কারা রাজনীতি করতে চায় তাদের তালিকা দিতে বলে। এজন্য আমাকে আজকে দুপুরে তাদের রুমে ডেকে নিয়ে যায়। তবে মারধর করে নাই। আরেক ভুক্তভোগী পিকুল বলেন, আমাকে মারুফ আইন বিভাগের কয়জন এই হলে থাকে তার তালিকা দিতে বলেছে। এজন্যই রুমে ডেকে নিয়ে গেছে। মারধর করে নাই।
তবে ভুক্তভোগীরা মার খাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও তাদের সহপাঠীরা বলছেন, ফের মারধর করা হতে পারে এমন ভয়ে ইমরান ও পিকুল বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। ৩৫১ নম্বর কক্ষের বিছানায় একটি রড পাওয়া গেছে, যেটি দিয়ে তাদের মারধর করা হয়। মারধরে অভিযুক্ত মারুফ বলেন, কেউ একজন আমাদের রুমে বালিশের ওপর একটি রড রেখে ছবি তুলে নিয়ে যায়। রাতে রুমের সামনে প্রেসিডেন্ট গ্রুপের মাসুদ, উৎপল ও বাদলকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখি। তারা আমাদের ফাঁসাতে এই কাজটা করে থাকতে পারে। মারধরের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আরেক অভিযুক্ত রাকিব বলেন, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। রাতে প্রভোস্ট ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে তাদের শরীর চেক করে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি এবং তারাও সবার সামনে বলেছে আমরা মারধর করিনি। এ ঘটনায় সেক্রেটারি গ্রুপের একাংশের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক লেনিন মাহবুব বলেন, প্রেসিডেন্ট অংশের ছেলেরা আমাদের ছেলেদের নামে ইচ্ছাকৃতভাবে এই গুজব ছড়িয়েছে। সভাপতি গ্রুপের একাংশের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সেক্রেটারি গ্রুপের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই, আমরা তাদের কেন ফাঁসাব? আমরা এই ধরনের স্টেটমেন্টের নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট সাব্বির আলম বলেন, ঘটনা শুনেই আমরা হলে উপস্থিত হয়েছি। যদি সত্যিই মারধরের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেব। প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমি হলের প্রভোস্টকে দ্রুত তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।