Logo
Logo
×

সালতামামি

ফিরে দেখা ২০২৪

সূচনায় নির্বাচন সমাপ্তিতে পলায়ন

সিলেট সীমান্ত ছিল চোরাচালানের স্বর্গ

Icon

সংগ্রাম সিংহ, সিলেট

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নানা চড়াই উতরাইয়ে ২০২৪ সাল পার করেছেন সিলেটবাসী। বছরটি শুরু হয়েছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে। বছরের ইতি টানতে হয়েছে জুলাই আন্দোলনের রেশ নিয়ে। এসবের মধ্যে অনেক কিছু ধামাচাপা পড়লেও সীমাহীন ধকল গেছে সাধারণ মানুষের ওপর। বছরের শুরুতে ছিল কনকনে শীত। বড় বড় দলগুলো অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনি প্রচারণায় ছিল না তেমন কোনো উত্তাপ। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সিলেটের ১৯টি আসনের ১৫টিতেই এমপি হন আওয়ামী লীগের। অপর চারটিতে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মাত্র ৭ মাসের মাথায় ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ হন সিলেটের ৩১ জন। আন্দোলনে সরকার প্রধান দেশত্যাগ করেন। এরই পথ ধরে পালান মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা। দেশে আটকা পড়া অনেকেই এখনও পলাতক, কেউ কেউ আবার জেলে। জাতীয় নির্বাচন শেষ হতেই ঘোষণা আসে সিলেট বিভাগের ৩৯ উপজেলার নির্বাচনের। এসব উপজেলার ভোটগ্রহণ হয় চারটি ধাপে। ৪ মে থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে ২৫ মে শেষ হয়। এই নির্বাচনেও প্রায় সব উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। যদিও মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারগুলো এখন তাদের দখলে নেই!

জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন শেষ হতেই শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। ক্রমেই এর উত্তাপ উত্তপ্ত করে সিলেটকে। আন্দোলনে মৌলভীবাজার জেলা ছাড়া বাকি তিন জেলায় সাংবাদিকসহ শহিদ হন ৩১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১৩, হবিগঞ্জের ১৫ ও সুনামগঞ্জের ৩ জন রয়েছেন। সিলেট জেলার শহিদরা হলেন- সানি আহমেদ, মো. নাজমুল ইসলাম, হোস উদ্দিন, মিনহাজ আহমদ, মো. পাবেল আহমদ কামরুল, জয় আহমেদ, তারেক আহমদ, তাজ উদ্দিন, আবু তাহের, সাংবাদিক মো. আবু তুরাব, সুহেল আহমেদ, মো. মোস্তাক আহমেদ, ওয়াসিম ও মঈনুল ইসলাম। হবিগঞ্জ জেলার শহিদরা হলেন- হোসাইন মিয়া, মো. আশরাফুল আলম, মো. মোজাক্কির মিয়া, শেখ নয়ন হোসাইন, মো. তোফাজ্জল হোসাইন, মো. সাদিকুর রহমান, আকিনুর রহমান, সোহেল আকঞ্জী, আজমত আলী, শেখ মো. শফিকুল ইসলাম, মামুন আহমদ রাফসান, মুনাঈল আহমদ ইমরান, রিপন চন্দ্র শীল, করিমুল ইসলাম ও মো. আনাস মিয়া। সুনামগঞ্জ জেলার শহিদরা হলেন, মো. আয়াতউল্ল্যাহ, হৃদয় মিয়া ও সোহাগ মিয়া।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে একদিকে আন্দোলনের উত্তাপ অপরদিকে প্রকৃতির খড়গ নেমেছিল সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসীর ওপর। প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। গত বছরের শুরু থেকে অদ্যাবধি সীমান্ত যেন চোরাচালানের স্বর্গ! তবে ক্রমেই বিজিবির অভিযানও জোরদার হচ্ছে। শুধু গত ছয় মাসেই ১১৫ কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তবে চিনিসহ চোরাচালানে ইতিহাস সৃষ্টি করলেও তার চেয়ে বেশি আলোচনায় সিলেট সীমান্ত দিয়ে আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ভারতে পলায়নের বিষয়টি। কানাইঘাটের দনা ও সোনাতনপুঞ্জি সীমান্তে প্রতিদিন রাতে ছিল পলায়নকারীদের স্রোত। নেতাদের সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা সর্বস্ব লুটে নেওয়ার গুঞ্জনও আছে বেশ। সীমান্তের আদম দালালদের খপ্পড়ে পড়ে সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সর্বস্ব খোয়ান, আটক ও মারধরের শিকার হন। বিদায়ী বছরে প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী পরপারে চলে গেছেন সিলেটের অনেক গুণীজন। এর মধ্যে ডা. সালেহা খাতুন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাহ মুহাম্মদ আবিদ আলী, বাউল শিল্পী পাগল হাসান ছাড়াও জুলাই বিপ্লবের শহিদ সাংবাদিক আবু তুরাব অন্যতম। পাশাপাশি কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা হত্যাকাণ্ড দেশে বিদেশে আলোচনার ঝড় তুললেও ওই মামলার পরবর্তী তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনের মন্থর গতি হতাশা ছড়াচ্ছে। বছরের শেষ দিকে এসে শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বহুল আলোচিত রাজনীতিক সিলেটের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীর। নিজ এলাকা সিলেটের কানাইঘাটে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানার আঙিনায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হারিছ চৌধুরীর লাশ দাফন করা হয়।

অস্থিরতা ও শত দুঃসংবাদের মধ্যেও সিলেটে গ্যাস ও তেলের আরো মজুদ রয়েছে এমন সম্ভাবনার কথা শুনিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞসহ সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কর্তারা। পরে পুরোনো কূপে মিলে গ্যাসের সন্ধান। গ্যাস খুঁজতে গিয়ে হদিস মিলে তেলের। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দেড় কোটি ব্যারেল তেল রয়েছে সিলেটের খনিতে। অতিসম্প্রতি কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান শ্লামবার্জার এম রিপোর্ট দিয়েছে। তাদের দাবি, দৈনিক ৬০০ ব্যারেল হারে তেল উত্তোলন করলে ১০ বছর পর্যন্ত উত্তোলন করা সম্ভব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম