Logo
Logo
×

সালতামামি

বিদায়ি বছরে রাজশাহী

সবচেয়ে আলোচিত এমপি ফারুকের শিক্ষক পেটানো

Icon

তানজিমুল হক, রাজশাহী

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদায় নিল একটি বছর। শুরু হলো নতুন বছর। বিদায়ী বছরে রাজশাহী অঞ্চলে ঘটেছে বিভিন্ন ঘটনা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ছিল বছরব্যাপী আলোচনায়। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর শিক্ষক পেটানোর ঘটনাটি ছিল আলোচনায় সবচেয়ে বেশি। এছাড়া শিক্ষক লাঞ্ছনার আরও ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষকদের নির্যাতনের ঘটনাটি অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সঞ্চার করেছে।

এছাড়া ধানের জমিতে পানি না পেয়ে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাটিও ছিল আলোচিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাক চাপায় এক শিক্ষার্থী নিহতের বিষয়টিও ছিল শিক্ষার্থীদের কাছে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। তাছাড়া গত বছর রাজশাহীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ছিল বেশ কয়েকটি। নানা কারণে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডও ছিল বছরব্যাপী আলোচিত। বছরের শুরুতেই প্রধান শিক্ষক একজন সহকারী শিক্ষককে মারধরের ঘটনাটি ছিল বেশ আলোচিত। ২ জানুয়ারি জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র শাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই নারী শিক্ষক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চাইলে বিষয়টির সমাধান হয়।

বিদায়ী বছরের আলোচিত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে বোরো ধানের খেতে সেচের পানি না পেয়ে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচিত। গত ২১ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। এটি প্রথমে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে প্রমাণিত হয়েছে তারা পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে দায়ের করা দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় বিএমডিএ’র বরখাস্ত হওয়া অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

বিদায়ী বছরে শুধু রাজশাহী নয়, দেশব্যাপী আলোচিত ছিল রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর শিক্ষক পেটানোর কাণ্ড। গত ৭ জুলাই এমপি ফারুক তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেধড়ক পেটান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। সারা দেশের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেন এবং বিচারের দাবি জানান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি শিক্ষক পেটানোর ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।

এছাড়া শিক্ষক লাঞ্ছনার আরেকটি ঘটনা ছিল। গত ৪ আগস্ট রাজশাহী মহানগরীর হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি একই স্কুলের এক নারী সহকারী শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করান। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে শিক্ষা অফিস ঘটনার তদন্ত করে। এতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ছিল। এর ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাবি ক্যাম্পাস। ১ ফেব্রুয়ারি রাবি ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় মারা যান গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থবর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাবিব হিমেল। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সে রাতেই ক্যাম্পাসে থাকা পাঁচটি ট্রাকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেন।

১৯ অক্টোবর রাবির হবিবুর রহমান হলের বারান্দা থেকে পড়ে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থবর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার রহমান। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে রাবি শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি শাহরিয়ারকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ভাঙচুর করেন। প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কয়েকদফা কর্মবিরতি পালন করেন।

রাজশাহীতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও এ বছর আলোচিত ছিল। ৫ সেপ্টেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় লাইভ চলাকালে বিএমডিএ কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘবদ্ধ হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম। এ নিয়ে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা। ২ অক্টোবর রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর রাজশাহী ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার তানজিমুল হকের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় সাংবাদিক তানজিম মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এছাড়া ২৬ মে বিকালে রাজশাহী মহানগরীর ভুবন মোহন পার্কে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মারামারি করছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় ছবি তুলতে গেলে তারা অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন।

গত ১৮ নভেম্বর রাজশাহীর বিতর্কিত ‘হোটেল এক্স’-এ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামান। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।

বিদায়ী বছরে রাজশাহীতে আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ। বিশেষ করে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একের পর এক অপকর্ম আলোচনায় এসেছে। জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দিয়ে সিট দখল, সাইকেল চুরি, মাদকসহ ধরা পড়া, দোকানে বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়া এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত হিসাবে নাম এসে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিতর্কের কারণে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিই বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।

নারীকর্মীকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়ার সময় ‘আমি সব চিটারের সর্দার’ বলা একটি অডিও ক্লিপ গত নভেম্বরে ভাইরাল হয়ে গেলে বরখাস্ত হন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা। আর ফেনসিডিল সেবনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর একই আদেশে পদ হারান সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি। গত ২০ অক্টোবর সভাপতিকে বরখাস্ত, সম্পাদককে অব্যাহতির পাশাপাশি কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম