Logo
Logo
×

গোলটেবিল বৈঠক

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর ভূমিকা জরুরি

Icon

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকলেও ভূমিকম্প মোকাবিলায় সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকায় বড় কোনো ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর ও বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘দুর্যোগ সহনশীলতা সপ্তাহ-২০২৩’-এ গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

মন্ত্রণালয় ও ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সহায়তা প্রদান করে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি), ইউএন ওমেন, ইউএনওপিএস, সুইডেন সরকার এবং দ্য ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও), ইউকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে এবং যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিমের সঞ্চালনায় এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি

প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

১৯৭০ সালের ভয়াবহ সাইক্লোনে বাংলাদেশের ১০ লাখের বেশি মানুষ, প্রচুর পরিমাণ গবাদি পশুসহ অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাম্প্রতিককালে দেশে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা নগণ্য। কারণ, বর্তমানে আমাদের প্রস্তুতি ও সাড়াদানমূলক অনেক কার্যকর কর্মসূচি রয়েছে। কার্যকর আগাম সতর্কবার্তা, সাইক্লোন শেল্টার, সংযোগ সড়ক, স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সামগ্রিকভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক বছরে আমরা অনেকগুলো বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। এক্ষেত্রে আমরা প্রমাণ করেছি বাংলাদেশ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সহনশীল দেশ। কিন্তু ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উদ্ধার এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করেছি এবং শহরেও স্বেচ্ছাসেবক তৈরি হয়েছে। ভূমিকম্প সহনশীল ভবন তৈরির ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারিনি। আপনারা জানেন, জাপান ইতোমধ্যে ভূমিকম্প সহনশীল দেশ গড়তে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেখানে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও তাদের ভবন ভাঙবে না এবং মানুষের জীবনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না বাংলাদেশকেও আমি ভূমিকম্প সহনশীল দেশ গড়তে একই ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করতে চাই। আজকের প্রোগ্রামে জাপানের রাষ্ট্রদূত জানালেন, দেশটির সরকার এবং জাইকাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

বর্তমানে আমরা তিন স্তরে কাজ করার চিন্তাভাবনা করেছি। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো চিহ্নিত করে তা অপসারণপূর্বক সুনির্দিষ্ট নকশায় সেসব অবকাঠামো তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড ২০২০ মেনে অবকাঠামো তৈরি করা হবে। অবকাঠামোসমূহ ৭ দশমিক ৫ রিখটার স্কেল মাত্রার ভূমিকম্পসহনীয় হবে-এমন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করব। আপনারা জানেন, দেশে প্রচুর পরিমাণ ভবন তৈরি হয়েছে। এটি শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও তৈরি হয়েছে। এমনকি গ্রাম পর্যন্ত বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই জাতীয় বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্প সহনশীল অবকাঠামো তৈরির আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। ভবনগুলোর ভূমিকম্প সহনশীলতা এবং টেকসই অবস্থা যাচাই জরুরি। এর মূল্যায়ন রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব। এছাড়াও ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাসহ সবকিছুই জাতীয় কোড অনুসারে তৈরি হবে। বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে ভূমিকম্প আঘাত করলেও মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনহানিসহ অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকভাবে হ্রাস করা যাবে। এটিকে আমরা টেকসই উন্নয়ন বলছি। উল্লেখ্য, ভূমিকম্প মোকাবিলায় জাপান সারা বিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশকে ভূমিকম্পসহনীয় দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে মান্যবর জাপানি রাষ্ট্রদূতকে আর্থিক এবং কারিগরি উভয় দিক থেকেই আমাদের সহায়তা করার অনুরোধ করছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজন করার জন্য আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছি।

মো. কামরুল হাসান এনডিসি

সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

প্রথমবারের মতো আমরা দুর্যোগ সহনশীল সপ্তাহ পালন করছি। আমি বিশ্বাস করি, দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পারব। আমাদের আগামী দিনের যাত্রায় তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় দেড় দশকে বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। সাইক্লোন শেল্টার, উদ্ধার কার্যক্রম, ভলান্টিয়ারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ রোল মডেল। সাইক্লোন শেল্টারে নারীদের পর্যাপ্ত টয়লেটসহ সবরকম ব্যবস্থা আছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশ দুর্যোগঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন দুর্যোগঝুঁকির মাত্রা ও তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বিভিন্ন নীতিকাঠামো ও পরিকল্পনা যেমন: জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ এবং ঝুঁকি অবহিতমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যক্রম গ্রহণে ডিজাস্টার ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট টুল ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝুঁকিতথ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জ্ঞান এবং বেস্ট প্র্যাকটিস অনুসরণের মাধ্যমে আমরা দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তথা দুর্যোগ সহনশীলতা জোরদারকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এসব কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রোল মডেল। আজকের প্রোগ্রামে সবাই অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন, যেগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

মো. মিজানুর রহমান

মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

এবার আমরা প্রথমবারের মতো দুর্যোগ সহনশীলতা সপ্তাহ উদ্যাপন করছি। নীতিনির্ধারণকারীসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পাঁচ দিনের আলোচনায় আমরা নতুন অনেক বিষয় জানতে পেরেছি। এসব বিষয়ের আলোকে আমাদের পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। গত মাসে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যা ও সাইক্লোনের নতুন মাত্রা দেখা দেখা গেছে। গত বছর সিলেট ও সুনামগঞ্জেও ভিন্ন ধরনের বন্যা হয়েছিল। এসব বন্যায় স্থানীয় মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক এসব বিপর্যয়ে আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভূমিকম্প প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। জাপান সরকার এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করে আসছে। জাপান আমাদের দেশের নাগরিকদের ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছে। এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের আরও কারিগরি সহায়তা দরকার। তিনি সুইডেন সরকার এবং এফসিডিও যুক্তরাজ্যকে ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে অংশীদারত্ব জোরদারের আহ্বান জানান।

ইওয়ামা কিমিনরি

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত

জাপানে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা আমি তুলে ধরছি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় জাপান কী করতে পারবে, সেই বিষয়েও তুলে ধরতে চাই। আমার জন্মস্থান জাপানের কোবেতে ভূমিকম্পে ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ভূমিকম্প হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। এমনকি জাপানি কারিগরি দক্ষতা প্রয়োগ করেও ভূমিকম্প কখন হবে, তা আগ থেকে বিস্তারিত জানা যায় না। গত মাসে ভারত সীমান্তে ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি কমাতে প্রস্তুতি রাখতে হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আমি জেনেছি, সম্প্রতি বাংলাদেশে বিল্ডিং কোড সংশোধন করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করছি। বিল্ডিং কোড সংশোধনের আগে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো রেট্রোফিট করাও জরুরি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দুর্যোগঝুঁকির শিক্ষা বিস্তার করতে পারলে অল্প বিনিয়োগে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে জাপান বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। কোস্ট গার্ডের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করেছি। দুর্যোগকালীন ক্ষতি কমাতে ভবনের নিরাপত্তা নিয়েও একটি প্রকল্প শেষ করেছি। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। দুর্যোগঝুঁকি কমাতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করব।

স্টেফান লিলার

আবাসিক প্রতিনিধি, ইউএনডিপি বাংলাদেশ

ভৌগোলিক কারণেই বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। এটি শুধু জীবনযাত্রার ক্ষতি করে না, অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশ ভৌগোলিক, পরিবেশগত এবং জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। অনেকেই এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি শুধু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য প্রভাবেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি মানবিক দুর্যোগ তৈরিসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক খাতে প্রভাব ফেলবে। এখানে আমি নগর পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোর কথা উল্লেখ করছি। নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আবাসন এবং উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ বড় একটা বড়সংখ্যক বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের সম্পদ সীমিত। তাদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুবই চ্যালেঞ্জের। অপরদিকে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউএনপিডিসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে এ বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি হার্ড এবং সফট অবকাঠামো নিয়ে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পারবো।’

নায়োকা মারটিনেজ বেকস্ট্রম

ফার্স্ট সেক্রেটারি, সুইডেন দূতাবাস, ঢাকা

বাংলাদেশে দুর্যোগ সহনশীলতার সামগ্রিক কমকাণ্ডের সঙ্গে সুইডেন জড়িত। এখানে অনেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলেছেন, যা ইতিবাচক। ইতোমধ্যে অনেকেই বলেছেন, ঢাকা শহর ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দুর্যোগ সহনশীলতার জন্য সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে সমাজ ও জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি। এসব উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমার দেশের রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার। আমি তিনটি বিষয় বলব। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় দুর্যোগ কর্মসূচিতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ক্রিসনান নায়ার

হিউম্যানিটিরিয়ান অ্যাডভাইজার, ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস, যুক্তরাজ্য

ভৌগোলিক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য কারণে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ঝুঁকিতে আছে। শহরের মানুষের জন্যও রয়েছে ঝুঁকি। কারণ দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা দরকার। বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে অবকাঠামো তৈরি করা হলে এটি শুধু মানুষের জীবনই রক্ষা করবে না, বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও সুরক্ষা দেবে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীও অধিকতর ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, দুর্যোগ মোকাবিলার অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামী দিনে কীভাবে সফলতার সঙ্গে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

ড. তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী

চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বব্যাংকের একটি জরিপ বলছে, ২০৫০ সালে বিশ্বে ২৬ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ। আর প্রতিবছর বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে স্থানচ্যুত হয়। এ কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় জলবায়ুকেন্দ্রিক স্থানচ্যুতিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এখানে লস অ্যান্ড ড্যামেজকে কীভাবে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কিছু কৌশল হাতে নিয়েছিল। এ কর্মসূচির আওতায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে জাতীয় কৌশল প্রণীত হয়েছে। একই সময়ে উন্নয়নকে টেকসই ও দুর্যোগ সহনশীলও করতে বাংলাদেশে ২০ বছরের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে। এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। তবে সামগ্রিক কার্যক্রমের সঙ্গে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করতে হবে। কারণ, কর্মসংস্থান বাড়াতে তারা ভূমিকা রাখে। শেষ কথা বলব, বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়ন ও দুর্যোগ সহনশীলতার স্বপ্ন দেখে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বে আরও একটি বিষয়ে রোল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

ড. ইসরাত ইসলাম

অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বুয়েট

আমি যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করি, সহনশীলতা পরিকল্পনার সঙ্গে এটি অত্যন্ত সংশ্লিষ্ট। উন্নয়ন সহনশীলতার কথা বললে আমাদের গবেষণার বিষয়টি ভাবতে হবে। ২০২২ সালে জাতীয় বিল্ডিং কোড হালনাগাদ করা হয়েছে। দুর্যোগের কথা বললে অন্যতম হলো ভূমিকম্প। এই ভূমিকম্প প্রতিরোধে কাজ করতে হলে ইউএনডিপি অন্যতম অংশীজন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তথ্যে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানা হয় না। ১০ তলার অনুমোদন নিয়ে ১৫ তলা করা হয়। এটি আমরা সহজেই বুঝতে পারি। সহনশীলতা বৃদ্ধির কথা বললে সবচেয়ে বড় উদ্যোগের জায়গা হলো ভবন নির্মাণ। ২০ বছর ধরে আমরা এসব বিষয়ে কথা বলে যাচ্ছি। বেসরকারি খাতের দিকে দেখা যাবে, দিনদিন এ খাতের উন্নয়ন ও কার্যক্রম সম্প্রসারণ হচ্ছে। সবকিছু মিলে দুর্যোগের জন্য আমাদের বড় উদ্বেগের বিষয় হলো-অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি, অতিগরম এবং ভূমিকম্প অন্যতম। কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে হবে। এদিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিতেও এটি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ

চেয়ারম্যান, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে বিভিন্ন দুর্যোগ আসছে, সরকারও নিরলসভাবে কাজ করছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সামগ্রিক দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা বিবেচনার বিশেষ দাবি রাখে। পাশাপাশি দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কীভাবে এখানে বিমার ধারণাকে ব্যবহার করতে পারি, তা ভেবে দেখা দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮১টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। আমরা যদি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিমা কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। আমার পরামর্শ হলো সরকারের সহায়তার জন্য আমাদের বিমা খাতকে ব্যবহার করতে হবে। এটি দুর্যোগ-পরবর্তী কার্যক্রমে আমাদের অনেক সহায়তা করবে। দুর্যোগে আমাদের বিশালসংখ্যক লোকজনের ভোগান্তি হয়। এই ভোগান্তি কমাতে বিমা খাতের গুরুত্ব বিশাল। এতে দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি বিমা খাতেরও বিকাশ হবে। তাদের ব্যবসায়িক কাজে সহায়তা করবে।

 

শাঈখ মোহাম্মাদ আলাভী

ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস, ইউএনওপিএস বাংলাদেশ অফিস

আমি আজ অবকাঠামো নিয়ে কথা বলব। দুর্যোগ মোকাবিলায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি দুর্যোগ সহনশীল রাস্তা এবং অবকাঠামো থাকে, তবে দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। ভৌগোলিক কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবন-জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশে বড় বড় সড়ক ও অবকাঠামো হচ্ছে, কিন্তু এগুলো সময়ের সঙ্গে উপযোগী নয়। ফলে আমাদের সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা দরকার। এটি সম্ভব হলে আমরা দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতার দিক থেকে এগিয়ে থাকব।

হাসিন জাহান

কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটার এইড

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় আমার উপলব্ধি হচ্ছে, দুর্যোগের সময় ও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত সাড়া দিতে পারছি। এটি একটি ভালো দিক। পৃথিবীর কাছে এদিক থেকে নিজেদের রোল মডেল বলে মনে করি। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বন্যা প্রতিবছর হওয়ায় আমারা এটিকে গুরুত্ব দিই না। ভূমিকম্প নিয়ে আমরা চিন্তিত। অথচ বন্যা আমাদের প্রতিবছর দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাপ্লাবিত হয়ে থাকে। এতে নারী ও শিশু বেশি আক্রান্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে একই গুরুত্ব দিয়ে যতদিন ভাবা না হবে, ততদিন ক্ষয়ক্ষতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে কমানো যাবে না। দুর্যোগ প্রশমনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণে ঝুঁকি অবহিতমূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মাসুদ করিম

প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক যুগান্তর

বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস, ভূমিকম্পসহ অনেক ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতাও বেড়েছে। এক্ষেত্রে দুর্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়লেও ভূমিকম্প মোকাবিলায় অনেক পিছিয়ে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আজ আমাদের এই আয়োজন। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আশা করি, সমস্যার পাশাপাশি সম্ভাবনা এবং আমাদের করণীয় বিষয়গুলোও উঠে আসবে। সরকারের নীতিনির্ধারক এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা এখানে রয়েছেন। আশা করি, অতীতে উন্নয়ন সহযোগীরা যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, আগামী দিনেও তাদের পাশে পাওয়া যাবে।

যারা অংশগ্রহণ করেছেন

ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি

মাননীয় প্রতিমন্ত্রী

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

মো. কামরুল হাসান এনডিসি

সচিব

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

মো. মিজানুর রহমান

মহাপরিচালক

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

ইওয়ামা কিমিনরি

বাংলাদেশে নিযুক্ত

জাপানের রাষ্ট্রদূত

স্টেফান লিলার

আবাসিক প্রতিনিধি ইউএনডিপি বাংলাদেশ

নায়োকা মারটিনেজ বেকস্ট্রম

ফার্স্ট সেক্রেটারি

সুইডেন দূতাবাস, ঢাকা

ক্রিসনান নায়ার

হিউম্যানিটিরিয়ান অ্যাডভাইজার, ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস যুক্তরাজ্য

ড. তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী

চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ড. ইসরাত ইসলাম

অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বুয়েট

অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ

চেয়ারম্যান,

ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শাঈখ মোহাম্মাদ আলাভী

ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস ইউএনওপিএস বাংলাদেশ অফিস

হাসিন জাহান

কান্ট্রি ডিরেক্টর

ওয়াটার এইড

মাসুদ করিম

প্রধান প্রতিবেদক

যুগান্তর

আবুল খায়ের চৌধুরী

সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার

যুগান্তর

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম