Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

চার দেওয়ালে বন্দি শৈশব

Icon

ফারিন সুমাইয়া

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় শৈশবকাল। ডানপিটেভরা ছেলেবেলার সেই দুরন্তপনা মনজুড়ে ছিল কতশতই না আবদার। পড়ার টেবিলজুড়ে যেন একরাশ বিরক্তি। তার ওপর মায়ের বকুনি আর পড়া শেষে মাঠজুড়ে বল নিয়ে ছোটাছুটিই যেন জীবনের সবটুকু প্রাপ্তি। বৃষ্টির দিনে স্কুল শেষে কাঁদায় মাখামাখি আর সবাই জড়োসড়ো হয়ে শীতের রাতে কুপি বা হ্যারিকেনের আলোয় গল্প শুনতে শুনতে চোখের পলকে শৈশব পা দিত কৈশোরের গণ্ডিতে। জীবনের এ যেন এক নতুন মোড়। শৈশবে কাটানো স্মৃতির মতো মধুর স্মৃতি আর দুটি হয় না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শৈশবগুলো কেমন যেন ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দি হয়ে যাচ্ছে। যারা এখন শৈশবে পা দিচ্ছে তাদের বাবা-মায়েদের কাটানো শৈশবের মতো তাদেরগুলো আর তেমন রঙিন নেই। মোবাইল ফোনের এ সময়ে শিশুদের সময় কাটে কার্টুন কিংবা গেম খেলার মাধ্যমে। বাবা-মায়েদের ব্যস্ততা আর সন্তানদের একটু শান্ত রাখতেই যেন জাদুর এ বাক্স তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নিজের অজান্তেই। বাচ্চার বায়না রাখার সময় নিজেদের কাজগুলো নিয়েই কাটে ব্যস্ত সময়। শিশুদের সোনালি দিনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে ভারী ব্যাগের বোঝা বইতে বইতে। স্কুল শেষে পড়ার সময় বের করে সেই দুরন্তপনা নেই এখন আর শিশুদের মাঝে। নিজের ঘরেই যেন নিজেকে বন্দি খাঁচার পাখির মতো করে রেখেছে নিজেদের তারা। আগে একটু-আধটু সবুজের বুকে মাঠের দেখা মিললেও এখন নেই বললেই চলে। শিশুদের খেলার মাঠগুলো এখন এক ধরনের স্বপ্ন তাদের জন্য। শৈশবের স্মৃতিতে তাদের জন্য রয়ে যাবে কেবল ধূসর কিছু সময়। শিশুদের এতে মানসিক বিকাশ হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। যে বয়সে দুরন্তপনা ভরে থাকার কথা সে বয়সে শিশুর সময় কাটছে চার দেওয়ালের গণ্ডির ভেতর। এতে করে অনেক শিশুই পরবর্তী সময় হচ্ছে নানা সমস্যার সম্মুখীন। বিশেষ করে কথা বলতে জড়তা, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, চোখের সমস্যাসহ নানা সমস্যার শুরু এখান থেকেই। এ ছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার কারণে মা-বাবার সঙ্গে শিশুর তৈরি হচ্ছে দূরত্ব। খিটখিটে মেজাজ, খাবারের প্রতি অনীহা থেকে শুরু করে ঘুমের সমস্যা পর্যন্ত তৈরি হয়ে থাকে শিশুর বিকাশে বাধার কারণে। তাই শিশুকে বাবা-মায়ের উচিত পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। বন্ধের দিনগুলোতে শিশুকে পার্কে কিংবা নির্ধারিত খেলার মাঠগুলো বা উদ্যানগুলোতে নিয়ে যাওয়া। এ ছাড়া চিড়িয়াখানা কিংবা বাচ্চাদের ইন্ডোর গেম খেলার আলাদা জায়গা আছে, সেখানেও নিয়ে যেতে পারেন আপনার সোনামণিকে। এতে করে আরও মানুষের সঙ্গে যেমন মিশতে সুযোগ পাবে তেমনি আবার সময়ও কাটবে আপনার সঙ্গে। এ ছাড়া শিশুকে প্রতিদিন অল্প করে হলেও নিজেদের ব্যস্ত সময় থেকে বের করে সময় দিন। তাকে রাতে ঘুম পাড়াতে গল্পের বই থেকে গল্প পড়ে শুনাতে পারেন। প্রতিদিনের কাজে তাকে সঙ্গী হিসাবে রাখুন। এতে করে শিশু অল্প অল্প করে আপনার সঙ্গে তার সময় কাটাতে পারবে। শিশুকে নিয়ে মাসে কিংবা বছরে অন্তত একবার করে হলেও ভ্রমণে বের হোন। এতে করে তার মাঝে নতুন পরিবেশ, সেখানকার মানুষ এবং তার সঙ্গে থাকা নানাবিধ নতুন নতুন বিষয় জানার জগতে যুক্ত হবে। এ ছাড়া আশপাশে খেলার জায়গা থাকলে প্রতিদিন একবার করে হলেও তাকে নিয়ে সেখান যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে শিশুর শৈশব হবে অনেক বেশি মধুর। নিজেদের শত ব্যস্ততার মাঝেও আপনার ছোট্ট সোনামণিকে সময় বের করে দিন। এতে করে আপনার সঙ্গে শিশুর বন্ধন যেমন মধুর আর সুদৃঢ় হবে তেমনি আবার শিশুর শৈশব হবে প্রাণবন্ত আর দুষ্টু-মিষ্টি স্মৃতিতে ভরপুর। আর এভাবেই ইট-পাথরের নগরীর শৈশবগুলোও কিছুটা হলেও ফিরে পাবে প্রাণ আর শিশুও বেড়ে উঠবে সুস্থভাবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম