Logo
Logo
×

ঘরে বাইরে

ভ্রমণ

পায়ে পায়ে হলুদ বিহারে

Icon

হাসনাত মোবারক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অন্নদাশঙ্কর রায়ের যুক্তবঙ্গের স্মৃতিকথায় লেখা আছে, ‘নওগাঁ মহকুমার প্রত্নসম্পদ অতুলনীয়। পাহাড়পুর না দেখলে পালযুগের গৌড়কে, বৌদ্ধদের গৌড়কে দেখা হয় না।’ তাই এবার হেঁটে এলাম মহাপ্রতাপশালী পাল সাম্রাজ্যের পথে-প্রান্তরে। তবে পাহাড়পুর নয়, গন্তব্য ছিল জেলার অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত প্রত্নস্থল হলুদ বিহার। এ স্থানটিতে দূরের দর্শনার্থীদের খুব একটা দেখা যায় না। এর একটা কারণ হতে পারে লোকজন শুরুতে পাহাড়পুর বৌদ্ধমঠ দেখে তারপর ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে ফিরে আসে। এছাড়া আমাদের পর্যটনশিল্পের প্রচারবিমুখতাও আরেকটি কারণ হতে পারে। সেসব কথা আপাতত রাখি। ফিরি ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর থেকে পনেরো কিলোমিটার দক্ষিণে হলুদ বিহারের ভ্রমণটি ছিল অনেকটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো। এ প্রত্নস্থলটির লাগোয়া বলরামপুর গ্রামে ছিলাম দিনকয়েক। গ্রামের নাম বলরামপুর! এটা ভেবে রবীন্দ্রনাথের ‘কোন্ বলরামের আমি চেলা’ গানের কলি মনে হতেই গ্রামের ৯৫ বছর বয়সি মজিবর মণ্ডলকে কৌতুক করে বলি, সেনাপতি বলরামের নামেই কি এ গ্রাম? বৃদ্ধ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। যে উত্তর আশা করেছিলাম, তার উলটো মিলল। বুক ফুলিয়ে তিনি উত্তর দিলেন, হুউম, রাজা হলুদের সেনাপতির বাড়ি এ গ্রামেই।’

অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীব্যাপী পাল সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল এ ভূমিতে, সেই ভূমির সন্তানদের তো আবেগ থাকবেই। তাই এমন লোকশ্রুতি বা কিংবদন্তিকে হেলায় ফেলায় দেওয়া যায়! তবে ইতিহাসের আশ্রয় হিসাবে নয়, বরং আলাপের খাতিরে এখানকার মানুষের মনস্তাত্ত্বিক রেখা টানার জন্যই এ গল্পটা বলা। আমরা যেখানে ছিলাম, তার আশপাশে হলুদ বিহারের বিস্তার। মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ। তাই ঘটা করে নয়, বরং চা-পান করতেও দিনে তিনবার গেছি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন ঢিবি হলুদ বিহারের পাদদেশে। একদা এখানকার নিদর্শনগুলো বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এর বেশ কিছু নিদর্শন ধ্বংস করেছে। এখন দ্বীপগঞ্জ হাট নামক জায়গাটির পশ্চিমে বিঘাকয়েক জায়গাজুড়ে কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে প্রাচীন বৌদ্ধ বসতির এ নিদর্শনটি। তবে এ ঢিবির গায়ে এখনো কিছু পুরোনো ইট, ভাঙা মাটির পাত্রের টুকরা ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষের দেখা মিলল। তবে এ এলাকায় এক সময় পাথর এবং ধাতু দিয়ে গড়া মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইটসহ নানা প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার ছিটেফোঁটাও হলুদ বিহার এলাকার কোথায় সংরক্ষণ হয়েছে বলে তথ্য পেলাম না। এখানকার কিছু নিদর্শন পাহাড়পুর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এখানে ১৯৩০-৩১ সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব জরিপ বিভাগের জি.সি দত্ত পরিদর্শন করেন। তখন এটি ছিল পূর্ব-পশ্চিমে ৬৪.৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪০.৫ মিটার এবং সংলগ্ন ভূমি হতে এর উচ্চতা প্রায় ১০.৫ মিটার। তিন ব্রোঞ্জের গণেশ মূর্তি দেখে এটিকে আট-নয় শতকের বলে ধারণা করেছিলেন।

এ পর্যন্ত হলুদ বিহারে সীমিত আকারে যে খনন হয়েছে, তাতে ধারণা করা হয়, এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের পাহাড়পুর এবং সীতাকোটের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক। বর্তমান প্রায় ৭.৫ মিটার উঁচু ও ৩০ মিটার দীর্ঘ এ ঢিবিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জনবসতি। তুলনামূলকভাবে কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও এখানকার প্রাচীন এ নিদর্শনটির জন্য বাজারটিও রমরমা অবস্থায় আছে। বিকাল হলে ঢিবিতে মানুষের মেলা বসে। স্থানীয়দের কাছে এটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। ঢিবির অদূর দিয়ে বয়ে গেছে অনিন্দ্যসুন্দর তুলসীগঙ্গা এবং ছোট যমুনা নদী। হলুদ বিহার দেখতে যাওয়া এবং ফেরার পথে নদী দুটির দেখা মিলবে।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে বাসযোগে নওগাঁ নেমে সিএনজি বা অন্য কোনো বাহনে যাওয়া যাবে। ট্রেনে অথবা বাসে গিয়ে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর স্টেশনে নামলেও হবে। এটি কম দূরত্ব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম