Logo
Logo
×

খবর

খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি

নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ফলের দাম

আড়ত পর্যায়ের তুলনায় বাজারে দ্বিগুণ দাম

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রথম রোজায় সক্রিয় খুচরা ফল বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট। পাইকারি আড়ত থেকে কম মূল্যে ফল কিনে খুচরা পর্যায়ে দুইগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ফলের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক পরিবার ইফতারে ফল কিনতে পারছে না। ইফতার বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ খাদ্য বাদ দিচ্ছেন। খুব প্রয়োজনে খরচ সমন্বয় করতে একটি-দুটি করে ফল ওজন দিয়ে কিনছেন। রোববার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর পাইকারি আড়ত বাদামতলী ঘুরে আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি আপেল ২৮০-২৯০ টাকা বিক্রি হলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কালো আঙুর প্রতিকেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা। যা খুচরা বাজারে ৪৫০-৪৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কমলা পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা। খুচরা বাজারে ২২০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে আজওয়া খেজুর প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এই খেজুর ১২০০-১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি আড়তে প্রতিকেজি মরিয়ম খেজুর ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২৫০-১৩৮০ টাকা। ম্যাডজুল পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা। যা খুচরা বাজারে ১৪০০-১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে জাহিদি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়।

নয়াপল্টনে দোকানে ফল কিনতে আসেন জাহিদুল ইসলাম। যুগান্তরকে তিনি বলেন, এক সময় সপ্তাহে দুই দিন পরিবারের জন্য ফল কিনে বাড়ি ফিরতাম। অসহনীয় দামের কারণে এখন আর কেনা হয় না। রোজায় ইফতারের জন্য ফল কিনতে এসে দেখি সব ফলের দাম আকাশছোঁয়া। রামপুরা কাঁচাবাজারে কথা হয় নাজমুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, দোকানি প্রতিকেজি আপেল ৩৬০ টাকা চাচ্ছেন। আমি যে টাকা নিয়ে এসেছি তা এক কেজি আপেল কিনলেই শেষ হয়ে যাবে। ফলের দাম আমাদের মতো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তাই ইফতারে ফল পাতে রাখতে দুটি আপেল কিনেছি। সঙ্গে দুপি কমলা ও দুটি মাল্টা ওজন দিচ্ছি। ওজনে যে দাম হবে সেটা দিতে হবে। তিনি জানান, বাজারে ফলের কোনো সংকট নেই। তারপরও বিক্রেতারা রোজা উপলক্ষ্যে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। তারা বলছেন, ফলের যে দাম চাওয়া হচ্ছে সেই দামেই কিনতে হবে। তা না হলে চলে যান।

রামপুরা বাজারের ফল বিক্রেতা ইসমাইল বলেন, ফলের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। তাই আড়তে দাম বেশি। বেশি দামে কেনার কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামেই। তবে পাইকারির তুলনায় খুচরায় দ্বিগুণ মূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোজায় একটু লাভ না করলে হয় না। কারণ বছরের সব সময় ফল মানুষ কিনে না। রোজায় ফল বেচাকেনা বেশি হয়। এছাড়া পাইকারি আড়ত থেকে পরিবহণ খরচ, বাজারের চাঁদা সব মিলে খুচরায় ফলের দাম বেড়েছে।

বাদামতলীর জননী ফল আড়তের মহাজন জালাল উদ্দিন বলেন, সরকার ফলের ওপর ভ্যাট বাড়িয়েছে। আমদানিকারকরা আমদানি পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে আড়তে দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু যে পরিমাণে বেড়েছে খুচরায় তার দ্বিগুণ বেশি দামে কারসাজি করে বিক্রি করছে। বাজারে সার্বিক তদারকি বাড়াতে হবে।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে এমনিতেই ফলের দাম বাড়তি। এর মধ্যে খুচরা বিক্রেতারা যদি কারসাজি শুরু করে ক্রেতারা ফল কিনতে হিমশিম খাবে। ইতোমধ্যে খুচরা সিন্ডিকেটে নাগালের বাইরে ফলের দাম। তাই ফলের বাজারেও তদারকি বাড়াতে হবে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে নিয়ম অনুযায়ী বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। একই সময় বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলের বাজারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। অনিয়ম পেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Jamuna Electronics

img img
Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম