Logo
Logo
×

খবর

খুকৃবি উপাচার্য কাসেমের নীরবে ক্যাম্পাস ত্যাগ

অফিসে রাত্রিযাপন নিয়োগে ছিল স্বজনপ্রীতি

Icon

নূর ইসলাম রকি, খুলনা

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী নীরবে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। খুকৃবির উপাচার্য হিসাবে ১ বছর ১০ মাস ১৪ দিন দায়িত্ব পালনকালে নানান কারণে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন। অফিস ভবনে রাত্রিযাপন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অকারণে বেতন কাটা ও পদোন্নতিতে হয়রানিসহ শেখ পরিবারের আস্থাভাজনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী, রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সরোয়ার আকরাম আজিজের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনও করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২৫ আগস্ট রেজিস্ট্রার এবং ৩০ সেপ্টেম্বর উপাচার্য পদত্যাগ করলেও এখনও দায়িত্বে রয়েছেন খুলনা মহানগরের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সরোয়ার আকরাম আজিজ।

২৪ সেপ্টেম্বর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনার সোনাডাঙ্গায় অফিস করেন। এরপর তিনি তার সাবেক কর্মস্থল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে তার স্বপদে পুনরায় যোগদান দেওয়ার বিষয়ে সব প্রস্তুতি নেন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর খুকৃবির ঢাকার গেস্ট হাউজে সর্বশেষ অফিস দেখিয়ে তিনি উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ বিষয়ে তিনি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানাননি। যার কারণে এখনো অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পদত্যাগকৃত উপাচার্যের ছবি রয়েছে।

সাবেক এ উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছিল নানান অভিযোগ। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী খুকৃবিতে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর উপাচার্য হিসাবে যোগ দেওয়ার পরই শেখ পরিবারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক শুরু করেন। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তার পিএস হিসাবে দায়িত্ব দেন বাগেরহাটের এক কর্মকর্তা এবং সর্বশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি চুক্তিভিত্তিক ৯টি পদে, একই তারিখে ১৫টি শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা পদে ১২টি, এ ছাড়া ৫ মে ১৮টি পদে শিক্ষক এবং ৮ মে দুটি পদে নিয়োগের তোড়জোড় শুরু করেন। তবে ইউজিসির অডিট আপত্তির কারণে তাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় বেশ ধকল সামলাতে হয়। যার কারণে তিনি নিয়োগ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। তবে পরবর্তীকালে তিনি ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. আলমগীর হোসেনের আস্থাভাজন মো. আব্দুর রাজ্জাককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী পদে এবং তার শিক্ষাজীবনের (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ড. মো. আবদুর রৌফকে পরিকল্পনা ও উন্নয়নের পরিচালক পদে এবং তার বর্তমান কর্মস্থলের সিনিয়র অধ্যাপক ড. ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে খুকৃবির বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন।

খুলনার সোনাডাঙ্গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবনের চতুর্থতলায় রাত্রি যাপন করতেন সাবেক এই উপাচার্য। ১৩ ফেব্রুয়ারি খুকৃবির ভাড়া করা অফিস ভবনে বসবাস করার নিয়মের ব্যত্যয় এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হিসাবে অডিট আপত্তি করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বাজেট পর্যালোচনা টিম। পরবর্তীকালে সাবেক উপাচার্য ওই কক্ষগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস হিসাবে অনুমোদন করান।

খুকৃবির সাবেক শিক্ষক হামিদুর রহমান হিমেল যুগান্তরকে বলেন, তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার আগে সব নিয়ম মেনে আবেদন করার পরও সাবেক উপাচার্য আমার বেতন আটকে দেন। খুকৃবির শিক্ষক রকিবুল হাসান মো. রাব্বি বলেন, সাবেক উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করার কারণে তিনি সব যোগ্যতা থাকার পরও তার পদোন্নতিতে হয়রানি করেছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউসূসের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদে সারা দেশে ২০১ জন বিশিষ্ট কৃষিবিদের মধ্যে তার স্বাক্ষর ছিল ১৩ নম্বরে। সর্বশেষ সাবেক উপাচার্য সেপ্টেম্বরের শেষদিকে সরকারি সফরের সমর্থনে পত্র না দেখিয়ে অফিস থেকে ভ্রমণ বিল উত্তোলন করেছেন।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, অফিসে রাত্রিযাপনের বিষয়ে অডিট আপত্তির পর সেটা গেস্ট হাউজ করা হয় এবং নিয়মিত ভাড়া দিয়ে থাকতেন। প্রধান প্রকৌশলী ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যানের ছাত্র ছিলেন এবং বাকি দুজন তার পরিচিত। তবে ওইসব পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কারও সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ করতেন না। বেতন কেটে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চাকরির বিধি অনুযায়ী সেটা করা হয়েছে এবং পদোন্নতিতে তিনি সব সময়ই নিয়ম মেনে চলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার যে কাগজটির কথা বলা হয়েছে সেখানে তার স্বাক্ষরটি স্ক্যান করে বসানো হয়েছে।

খুকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. রেজাউল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, পদত্যাগের বিষয় শুনেছি। তবে অফিশিয়ালি কিছুই জানি না। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন ওয়ার্কের দায়িত্ব পালনের জন্য কাউকে এখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম