Logo
Logo
×

খবর

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ

রনি কালেমা পড়তেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন

Icon

আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রনি কালেমা পড়তেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন

রনি আহমেদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন রনি আহমেদ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আল্লাহকে স্মরণ করে কালেমা পড়তে শুরু করেন। কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জানতে পারেননি। এদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বিচারে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এতে ৪ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় একটি গুলি তার বাম পায়ের ঊরু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ভাবছিলেন, বাঁচবেন না। তাই কালেমা পড়া শুরু করেন তিনি। রনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে। নিজ গ্রামের বাড়িতে এখন বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে সেদিন মৃত্যুর কাছ থেকে বেঁচে আসা রনির। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। থাকতেন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়।

ওইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রনি আহমেদ বলেন, ১৭ জুলাই দুপুরে বাসায় ফেরার সময় দেখি পুলিশ-বিজিবি গুলি করতে করতে সামনের দিকে যাচ্ছে। এ সময় নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিই। ছাত্রদের দেখে পুলিশ-বিজিবি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তিনি বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর ছোড়া একটি গুলি আমার বাম পায়ের ঊরুর এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তখন গুলিবিদ্ধ স্থান থেকে অনেক রক্ত ঝরছিল। আশপাশে তেমন কেউ ছিল না। মনে হয়েছিল, আর হয়তো বাঁচব না। তখন কালেমা পড়া শুরু করি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রামপুরার বনশ্রী এলাকার এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নিই। সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের এক বাসায় গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। পরে আমাকে অ্যাডভান্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি, বিপুলসংখ্যক গুলিবিদ্ধ মানুষ। সিট নেই, মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। এরপর ৩ নম্বর রোডের এফ ব্লকের বাসায় চলে আসি। সেখান থেকে চুপি চুপি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। ২৬ জুলাই চিকিৎসক জানালেন, এখানে আসার দরকার নেই। এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যাবে। পরে ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি বাঘায় চলে আসি। সেখানে নিরাপত্তার অভাবে পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নিই। সেখান থেকে জানতে পারেন, পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে ঢাকা থেকে কারা এলাকায় ফিরেছে। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রনি আহমেদ ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। পরে ঢাকায় একটি চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে রনির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাঁ ঊরুতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। চোখে-মুখে এখনো রাজ্যের ভয়। গুলিবিদ্ধ পায়ে শক্তি নেই। আগের মতো আর শক্তি ফিরে পাবেন কিনা, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন।

মা নিলুফা বেগম বলেন, গুলিবিদ্ধ পায়ে কোনো জোর পাচ্ছে না। যেভাবে গুলি করা হয়েছে তাতে ওর বেঁচে ফিরে আসার কথা ছিল না, সৃষ্টিকর্তা ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশাদুজ্জামান বলেন, রনির সেরে উঠতে সময় লাগবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম