দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি পৌনে ৬ লাখ
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফিটনেস নবায়নের উদ্যোগ * ১২ লেনের ভেহিক্যাল ইনস্পেকশন সেন্টার চালু হচ্ছে
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান। ফাইল ছবি
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে একের পর এক প্রাণ ঝরছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো ফিটনেসবিহীন যানবাহন। সূত্র জানায়, সারা দেশে এ মুহূর্তে যানবাহনের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৬টি। এগুলোর মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৪টি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৭৯ জন।
বিআরটিএ-এর একটি সূত্র জানায়, রাস্তায় যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে না পারে, সেজন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় গতানুগতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যানবাহনের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে। এজন্য ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলে (মিরপুর) ১২ লেনবিশিষ্ট ভেহিক্যাল ইনস্পেকশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
বিআরটিএ-এর উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, বর্তমানে দুই লেনবিশিষ্ট ভেহিক্যাল ইনস্পেকশনের মাধ্যমে ফিটনেস নবায়ন করা হয়। এর আওতায় শতভাগ ফিটনেস পরীক্ষা সম্ভব হয় না। ১২ লেনবিশিষ্ট ভেহিক্যাল ইনস্পেকশন সেন্টার চালু হলে গাড়ি শতভাগ ফিটনেস পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিটনেস নবায়নের সময়ে মোটরযান সরেজমিন পরিদর্শন করে চিত্র ধারণ করে তা আর্কাইভিং করে রাখা হচ্ছে। ফিটনেসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই মোটরযান মালিককের মোবাইল ফোনে নাবয়ন ফি উল্লেখ করে এসএমএস দেওয়া হচ্ছে। বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে (অনলাইন) অ্যাপয়নমেন্ট গ্রহণ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সব সার্কেল অফিসে গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করা হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে এ মুহূর্তে যেসব যানবাহন আছে, সেগুলোর মধ্যে ৮ হাজার ৩২৬টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৮১টি অটোরিকশা, ১৬ হাজার ৪০টি অটোটেম্পো, ৫৩ হাজার ৬৮৯টি বাস, ৯ হাজার ৫২৮টি কার্গোভ্যান, ৪৭ হাজার ৪২৫টি কাভার্ডভ্যান, ডেলিভারিভ্যান ৩৩ হাজার ৫২২টি, হিউম্যানহোলার ৮৭ হাজার ১৯টি, ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩২টি জিপ, ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩২টি মাইক্রোবাস, ২৮ হাজার ১৪০টি মিনিবাস, ৪১ লাখ ৬১ হাজার ৭০২ মোটরসাইকেল, পিকাপ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৯৭, প্রাইভেট কার ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৬৯, স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল ১২ হাজার ১৬৬, ট্যাঙ্কার ছয় হাজার ৭৪০, ট্যাক্সিক্যাব ৩৬ হাজার ১২৪, ট্রাক্টর ৪৭ হাজার ১৩৯, ট্রাক ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৯৮ এবং অন্যসব যানবাহন ৬১ হাজার ৪২৪টি।
একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এখন যেসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে, সেগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭০টি অ্যাম্বুলেন্স, ১ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৯টি অটোরিকশা, ৫ হাজার ৪৪৯টি অটোটেম্পো, ২০ হাজার ৮৯৯টি বাস, প্রাইভেট কার ৫৬ হাজার ৪১২টি, ১ হাজার ৮৩৬টি কার্গোভ্যান, ৭ হাজার ৯২২টি কাভার্ডভ্যান, ডেলিভারিভ্যান ৮ হাজার ৩২২, হিউম্যানহলার ১৪ হাজার ৪৬৭, ১২ হাজার ৭৬৫টি জিপ, ২৫ হাজার ৪১৪টি মাইক্রোবাস, ১১ হাজার ৬১৩টি মিনিবাস, ৬৮ হাজার ৭৪৭টি পিকআপ, স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল ৫ হাজার ৫০৯, ট্যাঙ্কার ১ হাজার ৯৩৩, ট্যাক্সিক্যাব ৬ হাজার ৮৬১, ট্রাক্টর ৩৫ হাজার ৬৬, ট্রাক ৬১ হাজার ৮১৩ এবং অন্যান্য যানবাহন আছে ২৫ হাজার ৬৩৭ টি।