শিক্ষক সংকটে প্রাথমিক শিক্ষা

মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের প্রায় প্রত্যেক নাগরিক উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায়ে একে অপরকে সেবাদানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। প্রত্যেকে তাদের কাজের বিনিময়ে সেবা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাকেন। এ সেবায় ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র তথা সরকার উপকৃত হয়। সেবার পারিশ্রমিক কম বা বৈষম্য হলে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। অনেকে ভালো সুযোগ পেলে সুবিধাজনক পারিশ্রমিকে অন্যত্র বা লাভজনক পেশায় চলে যায়। কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে হলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তথা রাষ্ট্রের মানসিকতায় সেবা প্রদানকারীর প্রতি আন্তরিকতা ও সদয় মনোভাব থাকতে হয়। শিক্ষকতা সর্বোৎকৃষ্ট পেশা। এ পেশাজীবীদের হেয়প্রতিপন্ন করার কাজটি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া হয় না। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেই একজন শিক্ষার্থীকে পরবর্তী ধাপগুলোয় উত্তীর্ণ হয়ে মেধার পরিচয় দিতে হয়। বস্তুত প্রাথমিক শিক্ষকরা শিশুশিক্ষা বিশেষজ্ঞ। এ মেধাবী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের সুনাম ম্লান করে দিচ্ছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা। তারা বছরের পর বছর, এমনকি যুগের পর যুগ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট বজায় রাখছেন। এক যুগের বেশির ভাগ সময় প্রাথমিকের প্রায় ৪০ হাজার প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষক নিয়োগ হলেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে শিক্ষক সংকটে বিপর্যস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়। একদিকে নিয়োগ দিলেও অপরদিকে অবসর, মৃত্যু, অন্য পেশায় চলে যাওয়া, অসুস্থতা, ছুটি, প্রশিক্ষণসহ নানা কারণে শিক্ষক সংকটে নিমজ্জিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী পাঠদান করতে পারছেন না। অপরদিকে রয়েছে পাঠদানবহির্ভূত অসংখ্য কাজের চাপ।
এছাড়া শিক্ষক সংকটের কারণে একজন শিক্ষককে একনাগাড়ে একাধিক শ্রেণিতে পাঠদান করতে হয়। একজন শিক্ষক সাধারণত দৈনিক তিনটি পিরিয়ডের বেশি পাঠ পরিকল্পনা ও তৈরি করে প্রশিক্ষণ মোতাবেক শিক্ষার্থীকে আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান করাতে পারেন না। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষককে যখন একাধিক ক্লাসে বা একনাগাড়ের ৬-৭টা পিরিয়ড পাঠদান করতে হয়, তখন তিনি বাধ্য হন দায়সারাভাবে তাদের শিক্ষাদানের কাজটি শেষ করতে। এদিকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সবচেয়ে কম। প্রাথমিক শিক্ষকরা উন্নত বিশ্বের মতো তাদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ও বেতনভাতা দাবি করছেন না। তারা দেশের অভ্যন্তরে একই যোগ্যতা ও সমকাজে নিয়োজিত অন্যান্য পেশাজীবীর মতো বেতন চান। এ প্রত্যাশা অযৌক্তিক হতে পারে না। এতে দেশে শিক্ষকের মর্যাদা ও বেতনের বৈষম্য দূর হবে। এ যৌক্তিক দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে করা তো অন্যায় নয়। বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেখানে বৈষম্য নিরসনের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি পরিষদ