Logo
Logo
×

অল্পকথা

প্লাস্টিকপণ্য ব্যবহারে সচেতন হোন

Icon

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যেসব পণ্য ব্যবহার করি, তার বেশিরভাগই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি এক ধরনের পলিমার, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক সাধারণভাবে নমনীয়, যা সহজে বাঁকানো যায়, সহজলভ্য, ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও কম দামি। দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার আমাদের জীবনকে অনেকাংশেই সহজ ও ঝামেলাহীন করে তুলেছে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। প্লাস্টিকের বহুমুখী ব্যবহারের ফলে এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। খাদ্য সংরক্ষণের পাত্র, বোতল, ব্যাগ, খেলনা, আসবাবপত্র, এমনকি মেডিকেল সরঞ্জাম ও যানবাহনের যন্ত্রাংশ তৈরিতেও প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। সহজে পচনশীল না হওয়ায় এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিকের ওজন হালকা হওয়ার কারণে এটি বহন করা সহজ এবং পরিবহণ খরচ তুলনামূলক কম। এছাড়াও প্লাস্টিকপণ্য পানি ও আর্দ্রতা প্রতিরোধী হওয়ায় তরল পদার্থ সংরক্ষণের জন্য এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। তাই শহরে ও গ্রামাঞ্চলেও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি।

প্লাস্টিকের ব্যবহার জীবনযাপনের অনেক কাজ সহজ করলেও তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। মাটি দূষণসহ পরিবেশের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে সহজে মেশে না। ফলে তা মাটির গুণাগুণ নষ্ট করছে এবং জমির উর্বরাশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। এতে আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন আশানুরূপ হচ্ছে না। তাই বিপুল জনসংখ্যার এদেশের অনেক মানুষ মৌলিক খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বছরে ৩.১৫ বিলিয়ন থেকে ৩.৮৪ বিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে মাত্র ২১.৪ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়, বাকি ৭৮.৬ শতাংশ দূষণ সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিক বোতল পরিবেশে প্রায় ৪৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এটি মাইক্রোপ্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়টি এখন একটি বড় স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এটি ক্যানসার, হরমোনের সমস্যা, এমনকি বংশগত ত্রুটির কারণ হতে পারে। খাবার পণ্যে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার পেটের রোগ, লিভারের সমস্যা, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসারের জন্যও দায়ী। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় পলিস্টাইরিনে তৈরি প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে এতে কিডনি, ফুসফুস, লিভার ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভারী ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক পণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটা বড় বাধা। প্লাস্টিক দূষণের ফলে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনশিল্পের ক্ষতি হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাছাড়া প্লাস্টিক উৎপাদন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর ফলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তবে প্ল্যাস্টিকপণ্য ব্যবহারে একটু সচেতনতার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে দেশীয় প্রযুক্তির পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কাচের তৈজসপত্র ব্যবহারে মনোযোগী হলে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া অতি প্রয়োজনীয় প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরিতে পরিবেশবান্ধব ও সহজে পচনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

মো. এমদাদুর রহমান উদয় : শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাবি

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম