Logo
Logo
×

অল্পকথা

সড়ক কবে নিরাপদ হবে

Icon

ফাতেমা রোখসানা

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একেকটি সড়ক দুর্ঘটনা মানে একেকটি পরিবারের কান্না। এ কান্না কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর দেখতে পাওয়া যায়। কিছুতেই যেন এ দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনার কারণে অনেকের বছরের পর বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা ফুলের মতো সাজানো সংসার মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সারা জীবনের সব স্বপ্ন মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই সারা জীবনের জন্য এতিম হয়ে যাচ্ছে। কত নারী যে স্বামী হারিয়ে অকালে বিধবা হয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই। সন্তান হারাচ্ছে পিতা বা মাতা, আর পিতা-মাতা হারাচ্ছেন সন্তান। ভাই হারাচ্ছে বোন আর বোন হারাচ্ছে ভাই। স্বামী হারাচ্ছেন স্ত্রী আর স্ত্রী হারাচ্ছেন স্বামী। স্বাভাবিকভাবেই একটি দুর্ঘটনা মানে স্বজন হারানোর সীমাহীন বেদনা, যার বোঝা বইতে হয় সারা জীবন। স্বজনহারা মানুষদের বুকফাটা কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে আর মানবতা হাহাকার করে।

বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো উঠে এসেছে। যেমন-আইনের প্রয়োগহীনতা, অদক্ষ চালক, সড়কের তুলনায় অধিকসংখ্যক গাড়ি, বেপরোয়া গতি, রাস্তার নকশায় ত্রুটি, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালানো, পথচারী ও যাত্রীদের অসাবধানতা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার, সড়কের উপর বা পাশে হাটবাজার স্থাপন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সড়কের বেহাল দশা, রাস্তা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার অভাব, ফুটপাতের অভাব কিংবা ফুটপাতের উপর দোকানপাট স্থাপন, ঝুঁকিপূর্ণ মোড়, ফুট ওভারব্রিজের অভাব, ওভারব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহারে অনীহা, রোড ডিভাইডার ডিঙিয়ে রাস্তা অতিক্রম, যত্রতত্র ওভারটেকিং ও ক্রসিং, উলটোপথে যান চলাচল, যানবাহন স্বল্পতা ইত্যাদি। তবে এ কারণগুলো নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে উদ্ঘাটিত হবে-দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, চালক ও মালিকদের অতিরিক্ত লোভ এবং পথচারীদের অসচেতনতা। দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এর অংশ হিসাবে পাঠ্য বিষয়ে সড়ক ব্যবহারবিধি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আমাদেরকে স্কুলে শেখানো হতো ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে আর ফুটপাত না থাকলে রাস্তার ডানদিক দিয়ে হাঁটতে, তাতে নাকি পথচারীদের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এখন ডানদিক হাঁটতে গেলেও দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, কারণ ক্ষমতাবানরা উলটো পথে গাড়ি চালান। আমাদের শেখানো হতো লালবাতি জ্বললে গাড়ি থামবে আর তখন রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। এখন ট্রাফিক বাতি জ্বলেই না, জ্বললেও পুলিশের সামনেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে। বাস শ্রমিক ও তাদের নেতারা নাকি পুলিশের চেয়েও ক্ষমতাবান! সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা এবং মানুষের একটু সচেতনতা সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশেই বন্ধ করতে পারে এবং বাঁচাতে পারে হাজারো মানুষের জীবন। আসুন আমরা সবাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এগিয়ে আসি এবং হাজারো মানুষের জীবন রক্ষা করি। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাজনীতি ও বিভেদ কাম্য নয়। আসুন আমাদের সড়কগুলোকে সুন্দর, আরামদায়ক ও নিরাপদ করি।

ফাতেমা রোখসানা : প্রাবন্ধিক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম