মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব
আবু বকর
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আধুনিক বিশ্বে নিজেদের প্রয়োজনে মানুষ অনেক কিছু তৈরি করছে; কিন্তু এসব তৈরিকৃত বস্তুই একসময় মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক এক অতি প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আর এ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক বর্তমানে এক নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছে। আমাদের মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর বিস্তার ও প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায়, নিজেদের অজান্তেই দেহের ক্ষতি করছি।
মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা, যেটার দৈর্ঘ্য ৫ মিমি.। অর্থাৎ ০.২ ইঞ্চির কম, যা পরিবেশ বিনষ্ট করার পাশাপাশি মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু, যেমন-পলিথিন, বোতল বা বোতলজাত পণ্য, খাদ্য, প্রসাধনী সংরক্ষণ ইত্যাদিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার এক সাধারণ ঘটনা। যেসব পণ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ঢাকায় বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার শহরাঞ্চলের জাতীয় গড় থেকে তিনগুণেরও বেশি, যা ২২.২৫ কেজি। ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়; যা বাংলাদেশে উৎপন্ন বর্জ্যরে ১০ শতাংশ। আবার, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) সংস্থার হিসাবমতে, প্রতিদিন ঢাকা শহরেই সাড়ে চার কোটি পলিথিন ব্যাগ বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেওয়া হয়। এ সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, বর্তমানে মানুষ অতিশয় সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হওয়ায় প্লাস্টিকের বিকল্প মাধ্যম দেখছেন না, যদিও তা পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার, এসব ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য যখন পোড়ানো বা পরিবেশে ফেলে দেওয়া হয়, তখন এর থেকে নির্গত কেমিক্যাল ও ক্ষুদ্র কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে। কেমিক্যাল মাটিতে মিশে যাওয়ার ফলে এর উর্বরতা হ্রাস পায়। আর ক্ষুদ্র কণাগুলো বাতাসের মাধ্যমেও বিভিন্নভাবে মানবদেহে প্রবেশ করে।
সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, প্লাস্টিক সহজে নষ্ট হয় না এবং মাইক্রো বা ন্যানোপ্লাস্টিকের কণাগুলো নিশ্বাসের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রবেশ করে। যেমন-আহার, পান, মা থেকে শিশু, শ্বাস প্রশ্বাস ইত্যাদি।
সরকার বিভিন্নভাবে এ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নিলেও মূলত কোনো ফলপ্রসূ আশা দেখা যাচ্ছে না। এখানে মানুষের প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বোঝাতে না পাড়া, এর বিকল্প সহজ ও সাশ্রয়ী পণ্য বাজারে না আসা এবং সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকার কারণে মূলত প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। যদি প্রতিনিয়ত মানুষ এ প্লাস্টিকের ব্যবহার নির্বিচারে করতে থাকে, তাহলে তা এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই, সময় থাকতে এখনই সচেতন হতে হবে। সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং সরকারকে কঠোর হাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি, সংস্থা বা এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসাবে পরিবেশবান্ধব পণ্য যেমন, পাট ও কাগজাত পণ্য ইত্যাদি ব্যবহার সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের করতে হবে। তা না হলে, প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধের আইন হাতে-কলমেই থেকে যাবে।