আমাদের দেশে সরকারিভাবে পথশিশুদের বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন খণ্ডিত গবেষণা ও জরিপে দেখা যায় তাদের সংখ্যা আড়াই থেকে চার লাখ। আর এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পথশিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ দারিদ্র্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পারিবারিক জীবনে পিতামাতার মধ্যে কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, অপরিকল্পিত জন্মদানও এর জন্য দায়ী। আমাদের দেশের অধিকাংশ পথশিশুই খাদ্য, বস্ত্র, নিরাপদ বাসস্থানসহ প্রায় সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। নিরাপত্তা না থাকায় প্রায়ই তারা শিকার হয় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের। দুমুঠো ভাতের অভাবে তারা জড়িয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে। অথচ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুশ্রম বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি জায়গায় একটু বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে হয়, তা হলো ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে আর কোনো শিশু যাতে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত হতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা কিছু ব্যক্তিকে পথশিশুদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। তারা কয়েকজন শিশুকে নিয়ে অনুষ্ঠান করে বাহবা কুড়ায়। কিন্তু দিনশেষে আবার তাদের দেখা যায় আপন ঠিকানায়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘস্থায়ী কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের জন্য। তাই সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আন্তরিকতার সঙ্গে পথশিশুদের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে বয়স উপযোগী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। পথশিশুরা বঞ্চনার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। তাই যখন তারা কারও কাছ থেকে একটু আন্তরিকতা, ভালোবাসা বা টাকার প্রলোভন পায়, তখন তারা যে কোনো কিছু করতে পারে। তাই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এদের কাজে লাগিয়ে মাদক, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অবৈধ ও অনৈতিক কাজ করিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে নিচ্ছে, যা রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য খুবই বিপজ্জনক।
এখন শীতকাল। এ সময় শিশুরা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। আর পথশিশুরা তো পর্যাপ্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাকই পায় না। শীতে যে শুধু ঠান্ডা লাগার কারণেই শিশুরা অসুস্থ হয় তা নয়, শীতকালীন অসুস্থতার মূল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু, যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুদের খুব দ্রুত আক্রমণ করে। আর মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া ও ধুলাবালি শিশুদের নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো জটিল রোগের কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকতে স্যানিটারি সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন, যা পথশিশুদের মধ্যে একদমই নেই। পাশাপাশি শীতকালীন রোগ প্রতিরোধের জন্য পযাপ্ত ফলমূল, শাকসবজি ও সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। যেখানে পথশিশুরা ঠিকমতো দুমুঠো খেতে পায় না, সেখানে সুষম খাদ্যের কথা বলা বিলাসিতা মাত্র। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার। সরকারের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা আছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু সরকারের এ যাত্রায় সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। অনেকে মনে করে, পথশিশুরা তো পথের মানুষ আর ওটাই তাদের ঠিকানা, তাই অধিকাংশ সময়েই মানুষ তাদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করে না। এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
রেজওয়ান আহম্মেদ : প্রাবন্ধিক